ফিঙ্গারপ্রিন্ট এর আবিস্কারক
Science and Technology History

ফিঙ্গারপ্রিন্ট এর আবিস্কারক

Pathokia 

ফিঙ্গারপ্রিন্ট এর আবিস্কারক

ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা আঙুলের ছাপ বর্তমানে নিত্যদিনের কাজ কর্মের সাথে জড়িত।  মোবাইল ফোন লক, অফিসের উপস্থিতি কিংবা বিভিন্ন গেটে ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিয়ে লক খোলা সহ অপরাধী শনাক্তের কাজে ফিঙ্গারপ্রিন্ট এর ব্যবহার রয়েছে অনেক। তবে জেনে অবাক হবেন ফিঙ্গারপ্রিন্ট এর আবিষ্কারক একজন বাঙালি মুসলিম। যার নাম খান বাহাদুর কাজী আজিজুল হক। আজিজুল হক খুলনা জেলার পাইগ্রামে ১৮৭২ সালে জন্মগ্রহণ করেন।

ফিঙ্গারপ্রিন্ট ভেরিফিকেশন মেশিন কিভাবে তৈরী হলো?

উনবিংশ শতকের শেষ দিকে কথা বেঙ্গল পুলিশের দফতরে কাজে ডুবে আছেন দুই বাঙালি সাব-ইন্সপেক্টর আজিজুল হক ও হেম চন্দ্র বসু। দুজনেই গভীর পর্যবেক্ষণে ছিলেন তখন। অপরাধ বিজ্ঞানের একটি বিশেষ বিষয় নিয়ে চারিদিকে ছড়ানো আংগুলের  ছাপের নমুনা দিয়েই মূলত একটা নতুন সিস্টেম শুরু করার ভাবনায় ছিলেন তারা। কাজ  যতোই এগোচ্ছে ততোই উত্তেজনা চেপে বসেছে তাদের ভেতরে। হঠাৎই এলো সেই মুহূর্ত, তৈরি করা হয়েছিল অপরাধী শনাক্তকরণে নতুন পদ্ধতি যা গোটা বিশ্বের সামনে এলো ফিঙ্গারপ্রিন্ট ভেরিফিকেশন নামে। ফিঙ্গারপ্রিন্ট নিয়ে অনেকেই আগে কাজ করেছেন কিন্তু এর প্রাক্টিক্যাল ইউজ কি, এটা কিভাবে যাচাই করা যায়।  এছাড়াও ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিয়ে কিভাবে মানুষকে আলাদা করে সনাক্ত করা যায়, সেটা প্রথম আবিষ্কার করেছিলেন কাজী আজিজুল হক।

ফিঙ্গারপ্রিন্ট এর আবিস্কারক

ফিঙ্গারপ্রিন্ট সিষ্টেম নাম নিয়ে লুকোচুরি খেলাঃ

এদিকে তৎকালীন সময়ে ব্রিটিশ বেঙ্গল পুলিশের আইজি ছিলেন এডোয়ার্ড রিচার্ড হ্যানরি। তিনি ফিঙ্গারপ্রিন্ট নিয়ে গবেষণার জন্য নিয়োগ করেন দুই বাঙালি প্রতিভাকে, একজন গণিতবিদ কাজী আজিজুল হক অন্যজন হেমচন্দ্র বোস। দুজনে মিলেই ৭০০০ ফিঙ্গারপ্রিন্ট এর এক বিশাল সংগ্রহ গড়ে তোলেন। আর অনেক পরিশ্রম করে একটা গাণিতিক সূত্র দাঁড় করালেন, যেটা দিয়ে ফিঙ্গারপ্রিন্ট যাচাইয়ের মাধ্যমে মানুষ শনাক্ত করা যায়।  এটি ছিল আধুনিক বিজ্ঞানের এক বিশাল আবিষ্কার। যদিও পদ্ধতির নাম হওয়ার কথা ছিল  “বোস-হক আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম” কিন্তু তার বদলে এর নাম হয়ে গেল “হেনরী  ক্লাসিফিকেশন সিষ্টেম”।মূলত হেনরী সাহেবই সবার কাছে প্রচার করতে শুরু করেন যে এই ফিঙ্গারপ্রিন্ট ডিটেকশন সিস্টেম আবিষ্কার করেছেন উনি নিজেই। এমনকি কাজী আজিজুল হককে কোনরকম স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করলেন। এরই মাঝে লুকিয়ে তিনি একটা পেপার পাবলিশ করে ফেলেছেন তাও আবার নিজের নামে।  আর এদিকে বাংলাদেশের কাজী আজিজুল হক আবিষ্কৃত সিস্টেমের নাম হয়ে গেল ”হেনরি ক্লাসিফিকেশন সিষ্টেম”। এদিকে কারেন্ট সাইন্স সাময়িকী ২০০৫ সালের ১০ জানুয়ারি সংখ্যায় Vol. 88 No. 1 তে  জি এস সদি ও জেসজীদ কাউর, ফরগোটেন ইন্ডিয়ান পাইওনিয়ার অফ ফিঙ্গারপ্রিন্ট সাইন্স (G.S Sodhi & Jasjeet kaur  forgotten indian pioneer of fingerprints science) শীর্ষক যে দীর্ঘ নিবন্ধ লেখেন, তাতে তারা হাতের ছাপ বা ফিঙ্গারপ্রিন্ট এর শ্রেণীবিন্যাসকরনের ক্ষেত্রের খান বাহাদুর আজিজুল হকের অবদানের কথা অকপটেই  স্বীকার করে বলেছেন, এক্ষেত্রে তার অবদানই ছিল সবচেয়ে বেশি।

বর্তমানে এটি স্পষ্ট যে, হেনরী সিষ্টেম আর হেনরীর নয় এখন আজিজুল হকের ভক্ত ও অনুসারীরা ফিঙ্গারপ্রিন্টের এই পদ্ধতিকে হেনরী–হক-বোস সিষ্টেম বলে অবহিত করেছেন ব্রিটেন দ্যা ফিঙ্গার প্রিন্ট সোসাইটি (ফেনসি)র  উদ্যোগে চালু করেছে যা দ্যা ফিঙ্গারপ্রিন্ট সোসাইটি আজিজুল হক এন্ড হেমচন্দ্র বোস প্রাইজ। যারা ফরেনসিক ও  সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখবেন এ পুরস্কার মূলত তাদেরকেই দেয়া হবে।

ফিঙ্গারপ্রিন্ট এর আবিস্কারক

ইতিহাস বিষয়ে আরো জানতে এখানে ক্লিক্ করুন…

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে জানতে এখানে ক্লিক্ করুন…

Recommended Posts

বাংলাদেশের ঐতিহাসিক মসজিদ
World Heritage Bangladesh

ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন মসজিদ

মুসলমানদের তথা মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের পবিত্র উপসনালয় মসজিদ। বাংলাদেশ মুসলিম সংখ্যা গরিষ্ঠ দেশ হলেও এখানকার ইসলামের ইতিহাস তেমন পুরাতন নয়। বাংলাদেশে কিছু প্রাচীন মসজিদ ছাড়া মোঘল আমলের পূর্বের প্রায় সকল প্রাচীন মসজিদ ই ধ্বংস হয়ে গেছে। আজ আমরা তেমনই কিছু ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন মসজিদ সম্পর্কে জানবো। সিংগাইর মসজিদঃ মধ্যযুগীয় এই সিংগাইর মসজিদটি ষাটগম্বুজ মসজিদের দক্ষিণ-পূর্ব কোনে অবসিহত। […]

Pathokia 

গেঁটেবাত থেকে মুক্তির উপায়

গেঁটেবাত থেকে মুক্তির উপায় শতাধিক প্রকারের বাতরোগের মধ্যে রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস বা গেঁটেবাত অন্যতম। সাধারণত বয়স্করা এ রোগে আক্রান্ত হয়।কম বয়সী ছেলেমেয়েদের বেলায় গিঁটে ব্যথা বা যন্ত্রনা হওয়া রিউমেটিক ফিভার বা বাতজ্বর ( Rheumatic Fever ) জাতীয় অন্য রোগের লক্ষণ হতে পারে। মানব শরীরে রক্তের সঙ্গে ইউরিক অ্যাসিড (Uric Acid) নামে এক ধরনের উপাদান থাকে, যার […]

Pathokia 
Artimis:NASA’s Mega Moon Rocket
Science and Technology

আর্টেমিস : আবারও চাঁদের বুকে মানুষ

আর্টেমিস :আবারও চাঁদের বুকে মানুষ Artimis:NASA’s Mega Moon Rocket দীর্ঘ পাঁচ দশক পর আবারও চাঁদের বুকে মানুষ পাঠানোর অভিযানে নাসা। তিন ধাপের মিশনে মনুষ্যবিহীন প্রথম রকেট টি ২৯ আগস্ট যাওয়ার কথা ছিল। আর শেষ ধাপে পাঠানোর কথা ছিল মানুষ। এর মাধ্যমে শুরু হতে যাচ্ছিল বহুল প্রতীক্ষিত আর্টেমিস যুগের। ফ্লোরিডার কেপ কেনেডি স্পেস সেন্টারে (Kennedy Space […]

Pathokia