ইন্টারনেট শব্দটি এসেছে (International Network) থেকে; তাহলে বলা যায় ইন্টারনেট মানে হলো আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক বা নেটওয়ার্কের নেটওয়ার্ক। ইন্টারনেটের মাধ্যমে তুমি বিশ্বের অন্যপ্রান্তের কম্পিউটারের সাথে যোগাযোগ করতে পার, তথ্য আহরণ করে তোমার কম্পিউটারে নিয়ে আসতে পার। ইন্টারনেট হলো বিশ্বজুড়ে বিস্তৃত অসংখ্য নেটওয়ার্কের সমন্বয়ে গঠিত একটি বৃহৎ নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা। আজ আমরা জানব কিভাবে ইন্টারনেট তৈরি হয়?
Science and Technology

কিভাবে ইন্টারনেট তৈরি হয়?

Pathokia 

ইন্টারনেট শব্দটি এসেছে (International Network) থেকে।তাহলে বলা যায় ইন্টারনেট মানে হলো আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক বা নেটওয়ার্কের নেটওয়ার্ক। ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তের কম্পিউটারের সাথে মুহুর্তের মধ্যে যোগাযোগ করতে পারা যায়, এবং সাথেসাথে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করে তা নিজের কম্পিউটারে নিয়ে আসতে পারা যায়। ইন্টারনেট হলো বিশ্বজুড়ে বিস্তৃত অসংখ্য নেটওয়ার্কের সমন্বয়ে গঠিত একটি বৃহৎ নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা। আজ আমরা জানব কিভাবে ইন্টারনেট তৈরি হয়? 

ইন্টারনেটকে নেটওয়ার্কের নেটওয়ার্ক বা ইন্টারনেটওয়ার্কও বলা হয়। সংক্ষেপে যা অধিকাংশ সময়ই নেট ( Net) নামে অভিহিত হয়ে থাকে। বাংলায় একে অন্তর্জাল বলা হয়ে থাকে। এক কথায় বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অনেকগুলো নেটওয়ার্কের সমন্বিত ব্যবস্থায় ইন্টারনেট‌। ইন্টারনেট সংজ্ঞায়িত করা যায় একভাবে ( ইন্টারনেট এক বিশেষ ধরনের আধুনিক যোগাযোগ প্রযুক্তি যা বিশ্বব্যাপী অসংখ্য কম্পিউটারকে সংযুক্ত রাখার মাধ্যমে ডেটা আদান প্রদান করতে পারে ) ইন্টারনেট সংযুক্ত কম্পিউটারগুলোর কাজই হলো এক অন্যের মধ্যে তথ্য আদান প্রদান করা। একারণে বর্তমানে ডেটা আদান-প্রদানের সাথে সংশ্লিষ্ট সকল কাজেই ইন্টারনেটের সুবিধা ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

আমরা এখন এই ডেটা আদান-প্রদানের মাধ্যমে ওপর ভিত্তি করেই Internet এর নানা আধুনিক ব্যবহার আবিষ্কার করছি। যেমন চিঠি আদান-প্রদানের জন্য ইন্টারনেট নির্ভর ব্যবস্তা হিসেবে আবিষ্কৃত হয়েছে ইন্টারনেট, টেলিফোনে কথা বলাকে ইন্টারনেটের সাহায্যে আধুনিক করতে এসেছে টেলিকনফারেন্সিং বা ভিডিও কনফারেন্সিং ইত্যাদি। ইন্টারনেটের উপাদান হলো এর ব্যবহারকারী, তথ্য, টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা, কম্পিউটার প্রভৃতি।

বর্তমানে ইন্টারনেটকে বিশ্বগ্ৰামের মেরুদণ্ড হিসেবে অভিহিত করা হয় কেননা ইন্টারনেটের কারণেই আজ পৃথিবীর সকল মানুষ এর অদৃশ্য জালের মতো নেটওয়ার্ক দ্বারা সংযুক্ত হয়ে শারীরিকভাবে যে কোনো দূরত্বে অবস্থান করেও ভার্চুয়ালি পরস্পরের সর্বাধিক কাছাকাছি থাকার সুবিধা উপভোগ করছে‌‌। ইন্টারনেট এখন আর টেলিফোন লাইন নির্ভর নয় বরং সমুদ্রের তলদেশ দিয়ে বিস্তৃত অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্ক, মাইক্রোওয়েভ ও স্যাটেলাইট কমিউনিকেশনের মাধ্যমে ইন্টারনেটের বিস্তৃত সক্ষমতা ও সম্ভাবনা এখন প্রায় অসীম।

বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যাঃ

বর্তমানে বাংলাদেশসহ সারা পৃথিবীতেই ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

  • ৯০ এর দশকে স্থানীয় কিছু সেবা প্রদানকারী সংস্থা বুলেটিন বোর্ড সিস্টেম (বিবিএস) পদ্ধতিতে ডায়াল-আপ এর মাধ্যমে প্রথম ই-মেইল সেবা চালু করে এবং সদস্য সংখ্যা ছিল ৫০০ এর মত।
  • ১৯৯৩ সালে ইন্টারনেট চালু হয় এবং তা সবার জন্য উন্মুক্ত হয় – ১৯৯৬ সালের ৪জুন।
  • ২০১৮ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত বিটিআরসি ( BTRC)- এর হিসাবমতে বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ৮০,২৮৯ মিলিয়ন। এদের মধ্যে মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যাই সর্বাধিক(৭৫,৩৯৬ মিলিয়ন)।
  • ২০০০ সালে বাংলাদেশের মোট ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ১,৮৬,০০০ যা ২০০৯ সালে বেড়ে হয় ৬,১৭,৩০০, যা বাংলাদেশের জনসংখ্যার মাত্র ০.৪% ।
  • ২০২০ সালে বাংলাদেশের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা (BTRC) তথ্যানুসারে সংখ্যা ১০৮.১৮৮ মিলিয়ন(২০ আগষ্ট ২০২০) । এদের মধ্যে মোবাইল ব্যবহারকারীদের সংখ্যা ৯৯.৬১৭ মিলিয়ন এবং ব্রডব্যান্ড ব্যবহারকারীদের সংখ্যা ৮.৫৭১ মিলিয়ন
  • ২০২২ ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা (BTRC) তথ্যানুসারে সংখ্যা সালে ১২ কোটি ৭৫ লক্ষ।

বিশ্বে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যাঃ

  • ইন্টারনেট ওয়ার্ল্ড স্টেটস এর তথ্যানুসারে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সারা পৃথিবীর প্রায় ৪ বিলিয়নেরও অধিক মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করছে যা পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার শতকরা প্রায় ৫০ ভাগ।
  • ২০১৯ সালে ৪৪৮ কোটি মানুষের হাতে ইন্টারনেট সেবা পৌঁছেছে, যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৫৮%। 
  • ইন্টারনেট ওয়াল্ড স্টেটস এর তথ্যানুসারে (১৫ এপ্রিল ২০২১) পর্যন্ত ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের সংখ্যা সারা পৃথিবীতে ৪.৬৬ বিলিয়ন।
  • বর্তমানে প্রায় ৫৩০ কোটি বা বিশ্বের ৬৬ শতাংশ মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করছে।

ইন্টারনেটের বিবর্তন ইতিহাস

ইন্টারনেট প্রযুক্তিটি বিভিন্ন ধাপ অতিক্রম করেছে। ইন্টারনেটের সম্প্রসারণ পর্বকে ৩টি পর্যায়ে বিভক্ত করা হয়। যথা:

প্রথম ( ১৯৬৯-১৯৮৩ ) : ১৯৬৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিরক্ষা দপ্তরের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে ARPANET ( Advance Research Project Agency Network ) নামক প্রজেক্টের মাধ্যমে ইন্টারনেটের উৎপত্তি ঘটে। ARPANET পরবর্তীতে ৮০ দশকের প্রথম ভাগ পর্যন্ত গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য সীমিত আকারে উন্মুক্ত ছিল। ১৯৪২ সালে বিভিন্ন কম্পিউটারের মধ্যে নেটওয়ার্ক সংযোগ স্থাপনে উপযোগী টিপিপি/আইপি ( TCO/IP-Transmission Control Protocol/Internet Protocol ) প্রোটোকল উদ্ভাবিত হলে প্রথম আধুনিক ইন্টারনেটের ধারণাটি প্রতিষ্ঠিত হয়। আরপানেট ( ARPANet )- এ ১৯৮৩ সালে এই প্রোটোকলের ব্যবহার শুরু হলেও এ পর্যায়ে ইন্টারনেটের সম্প্রসারণের গতি ছিল ধীর এবং বিশটি দেশের সর্বোচ্চ ২০০টি কম্পিউটারকে এ নেটওয়ার্ক প্রোটোকলের আওতায় আনা সম্ভব হয়।

ইন্টারনেট শব্দটি এসেছে (International Network) থেকে।তাহলে বলা যায় ইন্টারনেট মানে হলো আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক বা নেটওয়ার্কের নেটওয়ার্ক। ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তের কম্পিউটারের সাথে মুহুর্তের মধ্যে যোগাযোগ করতে পারা যায়, এবং সাথেসাথে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করে তা নিজের কম্পিউটারে নিয়ে আসতে পারা যায়। ইন্টারনেট হলো বিশ্বজুড়ে বিস্তৃত অসংখ্য নেটওয়ার্কের সমন্বয়ে গঠিত একটি বৃহৎ নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা। আজ আমরা জানব কিভাবে ইন্টারনেট তৈরি হয়? 

দ্বিতীয় পর্যায় ( ১৯৮৪১৯৮৯ ): এর বিস্তৃতি ছিল পুরো আশির শতক জুড়ে। এ পর্যায়ে ১৯৮৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠিত হয় ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশন নেটওয়ার্ক বা এমনএফ এসনেট ( NFSNet ) এবং এর অধীনে বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান নেটওয়ার্ক উন্নয়নে সংযুক্ত হয়। ফলে আস্তে আস্তে ARPANET এর বিস্তার কমতে থাকে তাই ১৯৯০ সালে এর সকল কার্যক্রম বন্ধ হয়েছে।

তৃতীয় পর্যায় ( ১৯৯০বর্তমান ): ১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ইন্টারনেট সার্ভিস প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান, যা ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার বা আইএসপি ( ISP-Internet Service Provider ) নামে পরিচিত পায়। এর মাধ্যমেই বাণিজ্যিকভাবে ইন্টারনেট সারা পৃথিবীতে সকলের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত হয়‌‌। ইন্টারনেটকে আরও সম্প্রসারিত করার উদ্দেশ্যে ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ইন্টারনেট সোসাইটি বা ISOC । ১৯৯৫ সালে NFSNet বন্ধ হয়ে গেলে ইন্টারনেটের বানিজ্যিক সম্প্রসারণের সর্বশেষ বাধাও অপসারিত হয়ে যায়। এসময় থেকেই ইন্টারনেট সংস্কৃতির বাণিজ্যিক বিস্তারে বিভিন্ন জনপ্রিয় অনলাইন সেবা তথা ইলেকট্রনিক মেইল, ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং সার্ভিস, ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রোটোকল(IP) বা ভিওআইপি, ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব, ইন্টারনেট ফোরাম, ব্লগ, সামাজিক যোগাযোগ, ই-কমার্স প্রভৃতির প্রচলন শুরু হতে থাকে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার বা আইএসপি এর কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৯৬ সালে ৪ জুন থেকে।

শেষ কথাঃ 

বর্তমান যুগ ইন্টারনেটের । পানির তলদেশ পর্যন্ত ইন্টারনেট পৌঁছে গিয়েছে। ইন্টারনেট আমাদের একে অপরের ভাব আদান-প্রদান করে দিচ্ছে। পৃথিবীর যেকোনো খবর আমরা ইন্টারনেটের মাধ্যমে জানতে পারছি। পড়াশুনা, টিকেট বুকিং এমনকি চিকিৎসা বিষয়ে ইন্টারনেট এর অবদান অপরিসীম। ইন্টারনেট ব্যবহারকারী শীর্ষ তিন দেশ হলো চীন, ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্র। তাই ইন্টারনেটের খারাপ ব্যবহার না করে সদ্ব্যবহার করি এবং অন্য কে শিখতে সাহায্য করি।

ইন্টারনেট কিভাবে কাজ করে? জানতে এখানে ক্লিক করুণ…

Recommended Posts

বাংলাদেশের ঐতিহাসিক মসজিদ
World Heritage Bangladesh

ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন মসজিদ

মুসলমানদের তথা মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের পবিত্র উপসনালয় মসজিদ। বাংলাদেশ মুসলিম সংখ্যা গরিষ্ঠ দেশ হলেও এখানকার ইসলামের ইতিহাস তেমন পুরাতন নয়। বাংলাদেশে কিছু প্রাচীন মসজিদ ছাড়া মোঘল আমলের পূর্বের প্রায় সকল প্রাচীন মসজিদ ই ধ্বংস হয়ে গেছে। আজ আমরা তেমনই কিছু ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন মসজিদ সম্পর্কে জানবো। সিংগাইর মসজিদঃ মধ্যযুগীয় এই সিংগাইর মসজিদটি ষাটগম্বুজ মসজিদের দক্ষিণ-পূর্ব কোনে অবসিহত। […]

Pathokia 

গেঁটেবাত থেকে মুক্তির উপায়

গেঁটেবাত থেকে মুক্তির উপায় শতাধিক প্রকারের বাতরোগের মধ্যে রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস বা গেঁটেবাত অন্যতম। সাধারণত বয়স্করা এ রোগে আক্রান্ত হয়।কম বয়সী ছেলেমেয়েদের বেলায় গিঁটে ব্যথা বা যন্ত্রনা হওয়া রিউমেটিক ফিভার বা বাতজ্বর ( Rheumatic Fever ) জাতীয় অন্য রোগের লক্ষণ হতে পারে। মানব শরীরে রক্তের সঙ্গে ইউরিক অ্যাসিড (Uric Acid) নামে এক ধরনের উপাদান থাকে, যার […]

Pathokia 
Artimis:NASA’s Mega Moon Rocket
Science and Technology

আর্টেমিস : আবারও চাঁদের বুকে মানুষ

আর্টেমিস :আবারও চাঁদের বুকে মানুষ Artimis:NASA’s Mega Moon Rocket দীর্ঘ পাঁচ দশক পর আবারও চাঁদের বুকে মানুষ পাঠানোর অভিযানে নাসা। তিন ধাপের মিশনে মনুষ্যবিহীন প্রথম রকেট টি ২৯ আগস্ট যাওয়ার কথা ছিল। আর শেষ ধাপে পাঠানোর কথা ছিল মানুষ। এর মাধ্যমে শুরু হতে যাচ্ছিল বহুল প্রতীক্ষিত আর্টেমিস যুগের। ফ্লোরিডার কেপ কেনেডি স্পেস সেন্টারে (Kennedy Space […]

Pathokia