স্পেস এলিভেটর (Space Elevator)। লিফটে করে মহাকাশ যাত্রা!
মহাকাশে যেতে আর প্রয়োজন হবেনা রকেটের। অর্থাৎ মানুষ এবং কার্গো মহাশুণ্যে যাবে রকেটে নাচেপেই।
জাপানি কোম্পানি ওবাইসি কর্পোরেশন স্পেস এলিভেটর নামের নতুন একটি প্রযুক্তি নিয়ে এসেছে। বাসাবাড়িতে ব্যবহার হবার এলিভেটরের মতই মহাশূন্যে যাবার জন্য এলিভেটর তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে কোম্পানিটি। যা ১৯৯১ সালের আগ পর্যন্ত মানুষ কল্পনাও করতে পারিনি। কারন তখনও পর্যন্ত পৃথিবীতে তেমন কোনো হালকা এবং শক্তিশালী পদার্থ তৈরি হয়নি যার সাহায্যে মহাশূন্যে এলিভেটর বহনের জন্য বিশাল আকৃতির কেবল তৈরি করা যাবে। ১৯৯১ সালে কার্বন ন্যানোটিউব ফাইবার এর আবিষ্কার এবং নভেম্বর ২০১৮ সালে চাইনীজ বিজ্ঞানীর দ্বারা কার্বন ন্যানোটিউব ফাইবার সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে প্রকাশিত হলে স্পেস এলিভেটর তৈরীর স্বপ্ন স্বপ্ন বাস্তব হতে শুরু করে। এটি হচ্ছে পৃথিবীর সবচাইতে শক্তিশালী পদার্থগুলোর একটি। যা লোহার চাইতে প্রায় ১০০ গুণ বেশি শক্তিশালী। ওজনে হালকা এবং লোহার চাইতে বেশি ভার বহনে সক্ষম কার্বন ন্যানোটিউব তৈরি করা হয় কার্বন পরমাণু কে বিশেষভাবে সজ্জিত করে। স্পেস এলিভেটর বহনের জন্য কার্বন ন্যানোটিউব ব্যবহার করে ৯৬ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ ক্যাবল তৈরি করা হবে।
বিশাল আকার এই ক্যাবলের এক প্রান্ত স্থাপন করা হবে পৃথিবী পৃষ্ঠে আর ক্যাবলের অন্যপ্রান্ত থাকবে ৯৬ হাজার কিলোমিটার উপরে মহাশূন্যে। ভারসাম্য রক্ষায় ক্যাবল এর উপরের অংশে যুক্ত করা হবে ১২৫০০ টন ওজনের স্পেস স্টেশন। এলিভেটর হিসেবে ব্যবহার করা হবে বিদ্যুৎ চালিত রোবটিক গাড়ি। এলিভেটর ছাড়াও ক্যাবলটিতে আরো সংযুক্ত থাকবে লুনার গ্রাভিটি সেন্টার। জিওস্টেশনারি আর্ট অরবিট ষ্টেশন (Geosynchronous orbit Station), মা গেইট (Mass Geat) এবং সোলার সিস্টেম এক্সপ্লোরেশন গেইট। ওবাইসি কর্পোরেশন ২০২৫ সালের মধ্যে ক্যাবলটির নির্মাণ কাজ শুরু করবে। পুরো নির্মাণ কাজ শেষ করতে সময় লাগবে প্রায় ২০ থেকে ২৫ বছর। নির্মাণকাজে ব্যায় হতে পারে প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার। ধারণা করা হচ্ছে ২০৫০ সালের মধ্যে এই স্পেস এলিভেটর তৈরীর কাজ সম্পন্ন হবে। তখন প্রতি ফ্লাইটে অনাআসে ১০০ টন কার্গো ও যাত্রী মহাকাশে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে। বর্তমানে মহাশুন্যে কার্গো রকেটে করে পণ্য পাঠাতে প্রতি কেজিতে খরচ হয় প্রায় ২২ হাজার ডলার। স্পেস এলিভেটর ব্যাবহারে এ খরচ প্রায় ২০০ ডলারে নেমে আসবে। মহাকাশ যাত্রার পাশাপাশি এটি বিশেষ ভূমিকা রাখবে পৃথিবীর বাইরে দূরবর্তী গ্রহগুলোতে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মিশন পরিচালনার ক্ষেত্রেও। দূরবর্তী গ্রহগুলোতে অভিযান পরিচালনার সময় এটিকে স্টপেজ হিসেবে ব্যবহার করা হবে। ফলে গ্রহগুলোতে পৌঁছাতে যে সময় লাগে সেটা কমে আসবে। এতদিন মঙ্গল গ্রহে একটি অভিযান পরিচালনা করতে প্রায় দুই বছর অপেক্ষা করতে হতো। কারণ পৃথিবীর মতো মঙ্গল গ্রহও সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘোরে। ফলে গ্রহ দু’টির দূরত্ব এক এক সময় এক এক রকম হয়। প্রতি দুই বছর পর পর মঙ্গল গ্রহ পৃথিবীর সবচাইতে নিকটবর্তী হয়। এ সময় দুটি গ্রহের দূরত্ব সবচেয়ে কম থাকে। স্পেস এজেন্সী গুলো এই সুযোগটাকে কাজে লাগানোর অপেক্ষায় থাকেন। তবে স্পেস এলিভেটর চালু হলে মঙ্গল যাত্রায় আর দুই বছর অপেক্ষা করতে হবে না। তখন প্রতি ৬১ দিন পর পর মঙ্গলে মহাকাশযান পাঠানো সম্ভব হবে। স্পেস এলিভেটর চালু হয়ে গেলে তখন মানুষের জন্য মহাশূন্যে ভ্রমণের মতো বিলাসিতায় পরিণত হবে সাধারণ বিষয়। অন্যদিকে কমে আসবে মহাকাশ অভিযানের ব্যায়।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে জানতে এখানে ক্লিক্ করুন…