আসছে নতুন সুপারসনিক বিমান, সাড়ে ৩ ঘণ্টায় নিউইয়র্ক থেকে লন্ডন!
১৯৭০ এর দশকে ফ্রান্স থেকে প্রথম আকাশে উড়ে বাণিজ্যিক সুপারসনিক উড়োজাহজ কনকর্ড। শব্দের চেয়ে দুইগুণ বেশি গতিতে চলতে পারতো সেটি। মূলত এয়ার ফ্রান্স ও ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ উড়োজাহাজের ফ্লাইট পরিচালনা করত কিন্তু অতিরিক্ত ব্যবহার পরিবেশগত বিধিনিষেধের কারণে ২০০৩ সালে এই উড়োজাহাজগুলো তুলে নেয়া হয়। এর আগে ২০০০ সালে এযার ফ্রান্সের একটি যাত্রীবাহী কনকর্ড দুর্ঘটনায় ১১৩ জন নিহত হয়েছিল। তখনকার কনকর্ডের আসন সংখ্যা ছিল ১০০ থেকে ১৪৪ টি । শুধুমাত্র সম্পদশালী ব্যক্তিদেরই সেই উড়োজাহাজে ভ্রমণ করার সক্ষমতা ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের তথ্য অনুসারে প্রযুক্তির বিকাশের কারণে যুক্তরাষ্ট্র এবং এর বাইরের কোম্পানিগুলো আরো হালকা ও টেকসই উপাদান দ্বারা উচ্চগতির উড়োজাহাজ তৈরীর চেষ্টা চালাচ্ছে । পাশাপাশি নতুন নকশার ইঞ্জিন ও আনার চেষ্টা চলছে। নতুন এ উড়জাহাজের জন্য হয়তো আরও কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের ইউনাইটেড এয়ার লাইনস ১৫টি উচ্চ গতির সুপারসনিক উড়োজাহাজ কেনার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে। মার্কিন আকাশযান নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান বুম সুপার সনিক থেকে উড়োজাহাজগুলো কেনা হবে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী ২০২৯ সাল থেকে উড়োজাহাজের যাত্রী পরিবহনের আশা করছে প্রতিষ্ঠানটি । সেই ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহর থেকে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে যেতে সাড়ে তিন ঘণ্টা আর মার্কিন শহর সান ফ্রান্সিসকো থেকে জাপানের রাজধানী টোকিওতে যেতে লাগবে মাত্র ছয় ঘণ্টা সময়। ইউনাইটেড এয়ার লাইন্স এবং বুম সুপার সনিক একটি যৌথ বিবৃতিতে বলেছে ইউনাইটেড এয়ার লাইন্সের চাওয়া অনুযায়ী নিরাপত্তা চলাচল ও টেকশয়ের শর্তগুলো পূরণ করতে পারলেই একটি চুক্তির আওতায় ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স অভারচার নামের ওই সুপারসনিক উড়োজাহাজগুলো কিনবে ।
২০২৯ সালে যাত্রী পরিবহন শুরুর লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে তাদের। এর মধ্য দিয়ে আকাশ পথে যাত্রী বহনে কনকর্ডের মত উচ্চগতির সুপার সনিক ফিরে আসতে পারে। ইউনাইটেড এযার লাইন্স ও বুম সুপার সনিকের চুক্তি অনুসারে প্রথমে ১৫টি উড়োজাহাজ সরবরাহ করা হবে এছাড়া আরও ৩৫ টি উড়োজাহাজ কিনতে পারবে ইউনাইটেড। তবে উড়োজাহাজ নিয়ে অনেক বিশ্লেষকদের মনে সন্দেহ রয়েছে। বিশেষ করে উড়োজাহাজের গতিসীমা নিয়ে তাদের এই সন্দেহ প্রবল। এই সন্দেহপ্রবণ বিশেষজ্ঞদের একজন পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এ আই আর এর বিশেষজ্ঞ মিশাল ম্যারলেসিউ, তিনি বলেছেন এটি একটি দারুন ধারণা হবে, তবে এ নিয়ে রয়েছে অনেক প্রশ্ন।
নতুন এই বানিজ্যিক উড়োজাহাজের প্রতিটির মান থেকে শুরু করে চলাচলের অনুমতি পেতে এক থেকে দেড় হাজার কোটি মার্কিন ডলার পর্যন্ত খরচ হতে পারে বলে আভাস দিয়েছে এই বিশেষজ্ঞ। তিনি বলেন এ বিষয়ে আমাদের বাস্তববাদী হতে হবে ২০২৯ সালের মধ্যে উড়োজাহাজ আকাশে উড়ানো নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেন তিনি। সেই ক্ষেত্রে তিনি এমন বাণিজ্যিক ফ্লাইট চালুর জন্য ২০৩৫ বা ২০৪০ সালকে যুতসই সময় হিসেবে দেখছেন। ইউনাইটেড এয়ার লাইন্স ও বুম সুপারসনিক বলেছেন বুমের উড়োজাহাজগুলো বর্তমানে চলাচলকারি আধুনিক উড়োজাহাজ গুলোর চেয়ে দ্বিগুণ গতিতে উড়তে সক্ষম হবে। সে ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহর থেকে লন্ডন যেতে সাড়ে তিন ঘন্টা সময় লাগবে। এই উড়োজাহাজ গুলো কার্বন নিঃসরণ শূন্য হবে। এতে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার করা হবে। লক্ষ্যমাত্রার সময়ের মধ্যেই সুপারসনিক উড়োজাহাজে যাত্রী পরিবহনের বিষয়ে ব্যাপক আশাবাদী ইউনাইটেডের প্রধান নির্বাহী স্কট কিরবি। তিনি বলেন আমাদের লক্ষ্য সব সময় মানুষকে সংযুক্ত করা আমরা বর্তমানে বুমের সঙ্গে কাজ করছি। আমরা আরো ভালো কিছু করতে সক্ষম হব।