সিম্ফনি অব দ্য সিজ এর নাম শুনেছেন কি? এ যেন সমুদ্রের মধ্যে আরেকটি নতুন পৃথিবী!
গঠনঃ
সিম্ফনি অব দ্য সিজ ভূমধ্যসাগর কিংবা ক্যারিবিয়ানে ছুটিছাটায় সর্বোচ্চ বিনোদন দিতে এই জাহাজটিতে আয়োজনের কোনো কমতি রাখেনি কর্তৃপক্ষ। ৩৬১.০১১ মিটার (১১৮৪.৪২ ফুট) লম্বা, প্রস্থ ১৫৫ ফুট এবং ৭২.৫ মিটার (২৩৮ ফুট) উচ্চতার জাহাজটি ৬ হাজার ৬৮০ জন যাত্রী বহন করতে সক্ষম। ২০১৫ সালে ফ্রান্সে নির্মাণকাজ শুরু হয় এই জাহাজটির। নির্মাণে কাজ করেছেন ২ হাজারের বেশী শ্রমিক। এর নির্মানে ব্যয় হয় প্রায় ১.৩৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
সিম্ফোনি অব দ্যা সী’জ বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে বড় যাত্রীবাহী জাহাজ। জাহাজটি লম্বায় তিনটি ফুটবল মাঠের সমান। এর উচ্চতা একটি পঁচিশ তলা বিল্ডিং এর সমান। এই বিশাল দেহ নিয়েও এটি ছুটতে পারে ঘণ্টায় ৪১ কিলোমিটার বেগে যেখানে সাধারন লঞ্চগুলো গতিবেগ ঘন্টায় মাত্র ২২ কিলোমিটার।
কি নেই এই জাহাজের ভিতর!!
কি নেই এই জাহাজের ভিতর। এ যেন সমুদ্রের ভাসমান একটি বিশাল শহর। জাহাজটি এতই বড় যে জিপিএস ব্যবহার না করলে কোন যাত্রী হারিয়েও যেতে পারেন এর ভেতরে। জাহাজটির প্রতিটি ডেকেই রয়েছে আনন্দ আর বিনোদনের ভরপুর ব্যবস্থা। রয়েছে ২৭৫৯টি সুসজ্জিত বিভিন্ন ধরনের কেবিন। যাতে থাকতে পারবেন ৬৭৮০ জন যাত্রী। আর এ যাত্রীদের দেখভাল করার জন্য আছেন ২৪০০ জন ক্র। যাত্রীদের খাবার -দাবারের ব্যবস্থা জন্য ২২টি ইটালিয়ান, চাইনিজ, আমেরিকান সহ নানা দেশের বিভিন্ন ফ্লেভারের খাবারের রেস্টুরেন্ট।
এমনকি শুধুমাত্র সামুদ্রিক খাবারের জন্য রয়েছে আলাদা রেস্টুরেন্ট। আছে ২৬টি বার লাউন্স। এর মধ্যে একটি আবার রোবোটিক লাউন্স। যেখানে রোবোট নিজেই বিভিন্ন ধরনের জুস, অ্যালকোহল, ককটেল বানিয়ে যাত্রীদের সার্ভ করে। জাহাজটির ১৭টি ফ্লোরে যাতায়েতের জন্য রয়েছে ২৪টি লিফ্ট। বিনোদনের জন্য রয়েছে ১৯টি সুইমিং পুল, যার মধ্যে ৪টি বিশাল সাইজের সুইমিং পুল এবং আলাদা ভাবে বানানো বাচ্চাদের ১টি সুইমিং পুল। আরো রয়েছে ৯টি উষ্ণ পানির জ্যাকুজি বাথের ব্যবস্থা। আছে ১৪০০ সীটের থিয়েটার। যেখানে সারাদিন চলতে থাকে কোন না কোন বিনোদন মূলক অনুষ্ঠান।শরীরচর্চার জন্য বিশেষভাবে নির্মিত অত্যাধুনিক জিম। আছে মিনি গলফ এরিয়া। বাচ্চাদের জন্য থীম পার্ক। জীপ-লাইনের মত ঝোলার অভিজ্ঞতাও এখানে আছে। শরীর ম্যাসাজের জন্য বিভিন্ন ধরনের স্পা,সনা, পেডিকিউর-মেনিকিউর এর ব্যাবস্থা। পকেটের টাকা অবাধে উড়াতে চাইলে রয়েছে ক্যাসিনোর ব্যাবস্থা। সী বিচের অনুভূতি জাহাজের মধ্যে থেকে গ্রহনের জন্য রয়েছে দ’টি কৃত্রিম সার্ফিং ব্যাবস্থা। চাইলে জাহাজের উপর তলা থেকে নীচ তলা সিঁড়ি দিয়ে না নেমে গড়িয়ে মজা করে নামতে পারে
যাত্রীরা। ছাদে রয়েছে বাস্কেট বল খেলার জন্য আলাদা কোর্ট। পাহাড়ে চড়ার মত অভিজ্ঞতা পাবার জন্য রয়েছে বিশেষ রক ক্লাইম্বিং ওয়াল। আছে বিশ্ব মানের আইচ স্কেটিং ফ্লোর, যেখানে দেখানো হয় নানা রকমের কসরত। জাহাজটির নীচ তলায় রয়েছে সেন্ট্রাল পার্ক নামে একটি পার্ক। যেখানে আছে কয়েক হাজার গাছপালা। জাহাজে থেকেও যাত্রীদের মনে হবে পার্কের মধ্যে দিয়ে হাঁটছে। কেনা-কাটার জন্য রয়েছে বিশাল এক শপিংমল।
সিম্ফনি অব দ্য সিজ তৈরীতে ব্যয়ঃ
জাহাজটির মালিকানা প্রতিষ্ঠান রয়েল ক্যারিবিয়ান ক্রজ লিমিটেড। এটি তৈরী করতে খরচ হয়েছে ১.৩৫ বিলিয়ন ডলার। যেখানে বাংলাদেশের পদ্মা সেতুতে খরচ হয়েছে ১.১ বিলিয়ন ডলার। এ সুবিশাল জাহাজটির শক্তি উৎপাদনে প্রতি ঘন্টায় লাগে ৫২০০ লিটার জ্বালানী। ২০১৮ সালে চালু হওয়া এ বিশাল জাহাজটি যুক্তরাষ্ট্রের মায়ামা থেকে রয়েল ক্যারায়ান বিভিন্ন এলাকায় প্রমোদ ভ্রমনে যায়। যেখানে সাত রাতে ভ্রমনের জন্য জন প্রতি বাংলাদেশী মূদ্রায় ৬৫ হাজার থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ আড়ায় লাখের বেশী খরচ হতে পারে। তবে বছরে সময় ভেদে এ খরচ উঠা-নামা করে। আমেরিকা গেলে আর হাতে কিছু অর্থ থাকলে আপনিও একবার উপভোগ করে আসতে পারেন বিশ্বে সবচেয়ে যাত্রীবাহী জাহাজে সাত দিনের সফর।