কম্পিউটার ক্রাইম বা সাইবার ক্রাইম কি? -০২
সাইবারথেফট (Cybertheft)
অসৎ উদ্দেশ্যে ব্যবহারের জন্য কিংবা অন্যান্য অবৈধ ব্যবহারের জন্য কম্পিউটার ব্যবহার করে ব্যবসায়িক এবং/অথবা ব্যক্তিগত তথ্যাদি চুরি করাই হলো সাইবারথেফট। সাইবারথেফট প্রধানত দুধরনের হয়। এগুলো হলো- ডেটা থেফট ( Data Theft ) এবং আইডেন্টিটি থেফট ( Identity Theft )
ক্ষতিকারক সফটওয়্যার- ভাইরাস, ওয়ার্ম, ট্রোজান হস এবং স্পাইওয়্যার
কম্পিউটার ভাইরাস একটি ক্ষতিকারক প্রোগ্ৰাম। কম্পিউটার ভাইরাস বাইরের উৎস থেকে কম্পিউটারের মেমোরিতে প্রবেশ করে মেমোরিতে গোপনে বিস্তার লাভ করে মূল্যবান প্রোগ্ৰাম, তথ্য নষ্ট করা ছাড়াও অনেক সময় কম্পিউটারকে অচল করে দেয়।

সফটওয়্যার পাইরেসি ( Software Piracy )
সফটওয়্যার পাইরেসি বলতে প্রস্ততকারীর বিনা অনুমতিতে কোনো সফটওয়্যার কপি করা, বিতরণ করা, আংশিক পরিবর্তন করে নিজের নামে চালিয়ে দেয়া ইত্যাদি কার্যক্রমকে বুঝায়। অন্যের জিনিস চুরি করার মতো সফটওয়্যার পাইরেসি করাও একটি অপরাধ। সফটওয়্যার পাইরেসির কারণে সফটওয়্যার প্রস্তুতকারি প্রতিষ্ঠান আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং সকল তথ্য চুরি হয়ে যায়।
হার্ডওয়্যার চুরি ( Hardware Theft )
মাইক্রোকম্পিউটার-এর বিভিন্ন যন্ত্রাংশ মূল্যবান, কিন্তু সহজে বহনযোগ্য বিধায় চুরির মতো ঘটনা বেশি ঘটে থাকে।
মূল্যবান একটি ল্যাপটপকে একটি ব্রিফকেসের মধ্যে নিয়ে সহজেই স্থানান্তর করা যায়। হার্ডওয়্যার চুরির ফলে ব্যবহারকারীর তৈরি প্রোগ্ৰাম এবং হার্ডওয়্যার সংরক্ষিত মূল্যবান ডেটাও হাতের বাইরে চলে যায়। ফলে ব্যাপক ক্ষতি হয়ে থাকে।
ডেটা চুরি ( Data Theft )
সরকারি গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন ক্ষেত্রে কিংবা ব্যবসা ক্ষেত্রে ডেটা চুরি হবার ঘটনা খুবই স্পর্শকাতর একটি বিষয়। ডেটা চুরি হলে একটি প্রতিষ্ঠানের অনেক গোপন তথ্য প্রকাশিত হয়ে পড়তে পারে বা এমন কারো হাতে যেতে পারে যার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি হতে পারে।
প্লেজিয়ারিজম ( Plagiarism )
যে কোনো উৎসের লেখা সংযোজন করা হোক না কেন তাতে মূল লেখক বা মূল কর্মের স্রাষ্টার নাম অবশ্যই সংযোজন করা উচিত। এটিই বিধান। এর ব্যতিক্রম হলে তা অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে। এ ধরনের অপরাধই হলো প্লেজিয়ারিজম ( Plagiarism )। তথ্য প্রযুক্তির ক্ষেত্রেও প্লেজিয়ারিজমের প্রচলন লক্ষ করা যায়। বিশেষ করে অন্যের ধ্যান-ধারণা, গবেষণা, কৌশল, প্রোগ্ৰামিং কোড, গ্ৰাফিক্স, কথা, লেখা, ডেটা, ছবি, শব্দ, গান ইত্যাদির উৎস অনেক ক্ষেত্রেই উল্লেখ না করে নিজের নাম বলে চালিয়ে নেওয়া হয় এটাই প্লেজিয়ারিজম।
বর্তমানে শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্লেজিয়ারিজমের ব্যাপক অপপ্রয়োগ লক্ষ করা যায়। এর কারণ হলো ইন্টারনেটে ব্যাপক তথ্য বিনামূল্যে ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়। তবে বিভিন্ন তথ্য উন্মুক্তভাবে ব্যবহারের জন্য রাখা হলেও এগুলো ব্যবহারের জন্যও কিছু নীতিমালা রয়েছে এবং এগুলোও ইন্টারনেট একধরনের লাইসেন্সের আওতাভুক্ত। এই লাইসেন্স টি ক্রিয়েটিভ কমন লাইসেন্স বা CCL নামে পরিচিত। এই পাবলিক নীতিমালার অন্তর্গত তথ্যসমূহ থেকেও বিনামূল্যে ব্যবহার করতে পারলেও এক্ষেত্রে অবশ্যই এর উৎসের নাম উল্লেখ করা অত্যাবশ্যক। বিশ্ববিথ্যাত মুক্ত জ্ঞানভাণ্ডার উইকিপিডিয়ার সকল তথ্যই এই ক্রিয়েটিভ কমন লাইসেন্সের অন্তর্ভূক্ত।
ফিশিং ( Phishing )
আসলে ইন্টারনেটে অনেক সাইট আছে যারা বসে থাকে যে কিভাবে মানুষকে বোকা বানানো যায় এবং তাদের সব তথ্য নেওয়া যায়। যেমন মাছ ধরা হয় টোপ ফেলে তেমনি ইন্টারনেটে এমন কিছু সাইট আছে যেগুলো অত্যন্ত বিশ্বস্ত ভঙ্গিতে ইউজারকে বিভিন্ন ওয়েবসাইটে নিয়ে গিয়ে সেখানে তার ব্যক্তিগত তথ্য যাচাই করার জন্য অনুরোধ করে থাকে। অসচেতন ব্যবহারকারী এ ফাঁদে পা দিলে হ্যাকাররা এখানে থেকে তার সকল ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করে তার ক্ষতিসাধন করে। এটিকে ফিশিং বলা হয়।
ভিশিং ( Vishing )
টেলিফোন বা অডিও ব্যবহার করে ফিশিং করাকে অডিও ফিশিং বা ভিশিং বলা হয়ে থাকে। কাউকে ফোন লটারী পাবার খবর দিয়ে সেই লটারীর টাকা উত্তোলন ব্যাংক ভেরিফিকেশনের তথ্য চাওয়া হয়। পরে ভিশার ঐ তথ্য ব্যবহার করে নানা অনৈতিক কার্যক্রম চালিয়ে থাকে।
কম্পিউটার ক্রাইম একটা মারাত্নক অপরাধ। তাই সবাই কম্পিউটার ক্রাইম থেকে বিরত থাকুন।
পাঠ-০১ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।