রক্তের গ্রুপ ও Rh ফ্যাক্টর কি ও এর আলোচনা।

রক্তের গ্রুপ ও Rh ফ্যাক্টর কি

রক্ত হচ্ছে মানুষের জীবন রক্ষাকারী এক বিশেষ তরল যোজক টিস্যু। যার মাধ্যমে বিভিন্ন রক্তবাহিকা দেহের সকল কোষে পুষ্টি, ইলেকট্রোলাইট, হরমোন, ভিটামিন, অ্যান্টিবডি, অক্সিজেন, ইমিউন কোষ ইত্যাদি বহন করে এবং কার্বন অক্সাইড  ও বর্জ্য পদার্থ প্রত্যাহৃত হয়। সুনির্দিষ্ট বাহিকার মাধ্যমে রক্ত দেহের সব খানে সঞ্চালিত হয়।

আজ আমরা রক্তের গ্রুপ ও Rh ফ্যাক্টর কি তা নিয়ে আলোচনা করব।

রক্তের গ্ৰুপ বলতে কি বোঝ? 

রক্তের ধরণ হল রক্তের শ্রেণিবিন্যাস, যা রক্তের লোহিত কণিকার পৃষ্ঠে অ্যান্টিবডি এবং উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত অ্যান্টিজেনিক পদার্থের উপস্থিতি ও অনুপস্থিতির উপর ভিত্তি করে  রক্তের গ্রুপ করা হয়। অ্যান্টিজেন এবং  অ্যান্টিবডি উপর ভিত্তি করে রক্তের গ্রুপ করা হয়।

রক্তের গ্রুপ ও Rh ফ্যাক্টর কি

অ্যান্টিজেন এবং অ্যান্টিবডি বলতে কি বোঝ?

দুটি বিষয় বুঝতে হবে, একটি হচ্ছে অ্যান্টিজেন, অন্যটি হচ্ছে অ্যান্টিবডি।

অ্যান্টিজেন হচ্ছে বহিরাগত কোনো বস্তু বা প্রোটিন, যেটি আমাদের রক্তে প্রবেশ করলে আমাদের শরীরের নিরাপত্তাব্যবস্থা ( Immune System ) সেটাকে শরীরের জন্য ক্ষতিকর মনে করে তাকে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করে।

অ্যান্টিজেনকে প্রতিরোধ করার জন্য আমাদের রক্ত যে পদার্থ তৈরি করে, সেটাই হচ্ছে অ্যান্টিবডি।

অ্যান্টিজেন এবং তাকে প্রতিরোধ করার জন্য সৃষ্ট অ্যান্টিবডি যখন একই দ্রবণে থাকে, তখন একটি বিশেষ ধরনের বিক্রিয়া ঘটে। অ্যান্টিজেনকে আক্রমণ করার এই বিক্রিয়াকে অ্যান্টিবডি- অ্যান্টজেন বিক্রিয়া বলা যায় এবং রক্তের মাঝে এই বিক্রিয়ার কারণে রক্ত কণিকাগুলো গুচ্ছবদ্ধ হয়ে যায়। ১৯০০ সালে ড. কার্ল ল্যান্টাস্টেইনার পরীক্ষা- নিরীক্ষা করে আবিষ্কার করলেন। বিভিন্ন মানুষের রক্তের লোহিত কণিকায় দুই ধরনের অ্যান্টিজেন পাওয়া যায়। তাই স্বভাবিক ভাবেই এই দুইটি অ্যান্টিজেনকে প্রতিরোধ করার জন্য বিভিন্ন মানুষের সিরামে ( যে তরলে লোহিত কণিকা ভাসমান থাকে ) দুটি অ্যান্টবডি পাওয়া যায়। লোহিত কণিকায় থাকা এই দুটি অ্যান্টিজেনকে A এবং B বলে ।

একজন মানুষের রক্তের লোহিত কণিকায় যদি A অ্যান্টিজেন থাকে তাহলে কোনো ভাবেই তার রক্তে A অ্যান্টিজেনের অ্যান্টিবডি থাকতে পারবে না- যদি থাকে তাহলে এই অ্যান্টিবডি এই অ্যান্টিবডি নিজেই নিজের রক্তের লোহিত কণিকাকে আক্রমণ করে মৃত্যুর কারণ হয়ে যাবে। A অ্যান্টিজেনের অ্যান্টিবডি না থাকলেও, B অ্যান্টিজেনের অ্যান্টিবডি থাকে‌। একইভাবে যে রক্তের লোহিত কণিকায় B অ্যান্টিজেন আছে সেখানে A অ্যান্টিজেনের অ্যান্টিবডি আছে।

অ্যান্টিজেন এবং তার অ্যান্টিবডির বিষয়টির সাথেই আমাদের রক্তকে  বিভিন্ন গ্ৰুপে ভাগ করা হয়েছে ।
যদি লোহিত রক্ত কণিকায় A ও B এই দুটি অ্যান্টিজেন থাকা সম্ভব হয় । তাই আমরা রক্তকে ৪ ভাগে বিভক্ত করতে থাকি :

১। গ্রুপ  A

২। গ্রুপ  B

৩। গ্রুপ  AB

৪। গ্রুপ  O

গ্রুপ  A  রক্তের ব্যক্তি  গ্রুপ  A  ও গ্রুপ  O থেকে রক্ত নিতে পারে। আর গ্রুপ  A  ও গ্রুপ  AB কে  রক্ত দিতে পারে।

গ্রুপ   B  রক্তের ব্যক্তি  গ্রুপ  B  ও গ্রুপ  O থেকে রক্ত নিতে পারে। আর গ্রুপ B  ও গ্রুপ  AB কে  রক্ত দিতে পারে।

কোন মানুষের কোন গ্ৰুপের রক্ত দেওয়া সম্ভব এটা রক্তের গ্রুপের উপর নির্ভর করে। O গ্ৰুপের রক্তের লোহিত কণিকায় যেহেতু কোনো অ্যান্টিজেনই নেই তাকে যেকোনো গ্ৰুপেই দেওয়া সম্ভব। সেই গ্ৰুপে যে অ্যান্টিবডিই থাকুক, কোনো ক্ষতি করা সম্ভব নয়। এজন্য O গ্ৰুপকে বলা হয় ইউনিভার্সাল ডোনার।

আবার অন্যদিকে AB গ্ৰুপের রক্ত, নিজের গ্ৰুপ ছাড়া অন্য কোনো গ্ৰুপকে দেওয়া সম্ভব নয়, কারণ অন্য সব গ্ৰুপেই কোনো না কোনো অ্যান্টিবডি আছে এবং AB গ্ৰুপ দুটো অ্যান্টিজেনই থাকার কারণে যে কোনো‌ একটি বা দুটি অ্যান্টিবডিই লোহিত কণিকাকে আক্রান্ত করে গুচ্ছবদ্ধ করে দেয়। A গ্ৰুপ এবং B গ্ৰুপের নিজের গ্ৰুপ ছাড়া শুধু AB গ্ৰুপে দেওয়া যেতে পারে, কারণ AB গ্ৰুপে কোনো অ্যান্টিবডি নেই, তাই A কিংবা B অ্যান্টিজেনকে আক্রান্ত করতে পারবে না। আবার আমরা যদি গ্ৰহীতার দৃষ্টিকোণ থেকে দেখি তাহলে উল্টোটা দেখতে পাব। O গ্ৰুপ কারো রক্তই নিতে পারবে না, কারণ অন্য কোনো গ্ৰুপের সিরামে দুই ধরনের অ্যান্টিবডিই আছে। অন্যদিকে AB গ্ৰুপ সবার রক্তই নিতে পারবে কারণ তার সিরামে কোনো ধরনের অ্যান্টিবডিই নেই‌। এজন্য AB কে বলা হয় Universal Acceptor.

Rh ফ্যাক্টর বলতে কি বোঝ?

রক্তের গ্ৰুপে  শুধু A,B,AB কিংবা O বলা হয় না, সবসময়েই এর পর একটি প্লাস বা মাইনাস যুক্ত করা হয় ( যেমন A+, O- ইত্যাদি )। এই প্লাস(+) বা মাইনাস(-) চিহ্নটি দিয়েই Rh ফ্যাক্টর  প্রকাশ করা হয়।

রেসাস নামের বানরের লোহিত রক্তকণিকায় এক ধরনের অ্যান্টিজেন রয়েছে যেটি অনেক মানুষের রক্তের লোহিত কণিকায় পাওয়া যায়। এই বানরের নাম অনুসারে এটাকে Rhesus Factor বলা সংক্ষেপে Rh ফ্যাক্টর বলে। যাদের শরীরে এই অ্যান্টিজেন পাওয়া যায়, তাদের রক্তকে Rh+ এবং যাদের শরীরে এটি নেই, তাদের রক্তকে Rh- বলা হয়। রক্তের গ্ৰুপের পিছনে যে প্লাস এবং মাইনাস চিহ্নটি থাকে, সেটি এই Rh ফ্যাক্টর ছাড়া অন্য কিছু নয়। Rh- রক্ত সবসময়ই Rh+ বিশিষ্ট রক্তের মানুষকে দেওয়া সম্ভব কিন্তু উল্টোটা এক ধরনের জটিলতা সৃষ্টি করে‌। Rh- রক্তবিশিষ্ট মানুষকে Rh+ বিশিষ্ট রক্ত দিয়ে প্রথমবার গ্ৰহীতার কোনো প্রতিক্রিয়া হয় না কিন্তু ধীরে ধীরে গ্ৰহীতার রক্ত রসে Rh+ অ্যান্টিজেনের বিপরীত অ্যান্টিবডি তৈরি হবে। কাজেই দ্বিতীয়বার Rh+ বিশিষ্ট রক্ত দেওয়া হলে এই অ্যান্টিবডি Rh+ রক্তের লোহিত কণিকার সাথে বিক্রীয়া করে রক্তকে জমাট বাঁধিয়ে দেবে। তবে একবার Rh+ বিশিষ্ট রক্ত গ্ৰহণ করার পর যদি গ্ৰহীতা আর ঐ রক্ত গ্ৰহণ না করে তাহলে ধীরে ধীরে তার শরীরের Rh+ এর অ্যান্টিবডি নষ্ট হয়ে যায় এবং গ্ৰহীতা তার স্বাভাবিক রক্ত ফিরে পায়।

সন্তানসম্ভবা মায়েদের জন্য এই Rh ফ্যাক্টরটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদি মায়ের রক্ত Rh- এবং বাবার রক্ত Rh+ হয় তাহলে তাদের সন্তান হবে Rh+ বিশিষ্ট, কারণ Rh+ একটি ( প্রকট ) বৈশিষ্ট্য ( অর্থাৎ এটি Dominate করে ) মাতৃগর্ভে ভ্রূণ প্ল্যাসেন্টা বা ( অমরা ) – এর মধ্যেমে মায়ের জরায়ুর সাথে যুক্ত থাকে। সন্তানের Rh+ রক্ত প্ল্যাসেন্টার মাধ্যমে মায়ের রক্তে পৌঁছাবে এবং মায়ের রক্তরসে Rh+ এর বিপরীত অ্যান্টিবডি তৈরি হবে। যেহেতু এই অ্যান্টিবডি খুব ধীরে ধীরে তৈরি হয়, তাই প্রথম সন্তানের বেলায় মায়ের রক্তের Rh+ এর অ্যান্টিবডি সন্তানের দেহে পৌঁছে তার রক্তের কোনো ক্ষতি করতে পারে না এবং একজন সুস্থ সন্তান জন্মদানে সাহায্য করে।

তবে দ্বিতীয় সন্তান গর্ভধারন করার পর মায়ের শরীরের Rh+ এর অ্যান্টিবডি সন্তানের রক্তে প্রবেশ করতে থাকে এবং ভ্রুণের লোহিত কণিকা ধ্বংস করে, ভ্রুণ বিনষ্ট হয়, অনেক সময় গর্ভপাত হয়। সন্তান জীবিত জন্ম নিলেও তার প্রচণ্ড রক্তস্বল্পতা থাকে এবং জন্মের পর জন্ডিস রোগ দেখা দেয়। এজন্য বিয়ের আগেই হবু বর- কনের রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা করে নেওয়া উচিত এবং প্রয়োজনে সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


hacklink satın alporno izleizmir escorteryaman escortGaziantep escortonwin girişTavşanlı escortGiresun escortankara escortkayseri escorteryaman escortsweet bonanza oynaPendik Escortistanbul escortanadolu yakası escorthalkalı escortmaltepe escortKurtkoy Escortyeşilköy escortYeşilköy otele gelen escortflorya eve gelen escortFlorya Kolombiya Escortgenç escort yeşilköyOtele Gelen Escort Yeşilköybeylikdüzü escortbuca escortfethiye escortısparta escortEscort BayanTürkiye Escort, Escort Bayanmarmaris escortSütunlar güncellendi.
Twitter Takipçi Satın AlKartal evden eve nakliyatimplantantalya haberkeçiören evden eve nakliyatDeselerSütunlar güncellendi.