রক্তচাপ কি ও রক্তচাপ কিভাবে কমাবো?

রক্তচাপ কিভাবে কমাব

রক্ত একটি অস্বচ্ছ, মৃদু ক্ষারীয় এবং লবণাক্ত পদার্থ। রক্ত হৃৎপিণ্ড, শিরা, উপশিরা, ধমনি, শাখা ধমনি এবং কৈশিকনালি পথে আবর্তিত হয়। লোহিত রক্তকণিকায় হিমোগ্লোবিন নামক রঞ্জক পদার্থ থাকার কারণে রক্তের রং লাল দেখায়। হাড়ের লাল অস্থিমজ্জাতে রক্তকণিকার জন্ম হয়। রক্তে যেমন রক্ত কনিকা আছে তেমনি রক্তে রক্তরস ও আছে। রক্ত কনিকা আছে ৪৫% এবং  রক্তরস ৫৫% আছে।

আমরা আজকে রক্তচাপ কি ও রক্তচাপ কিভাবে কমাব তা জানব।

রক্তচাপ ( Blood pressure ) বলতে কি বোঝ?

রক্তপ্রবাহের সময় ধমনির গায়ে যে চাপ বা প্রেসার সৃষ্টি হয়, তাকে রক্তচাপ বলে। হৃৎপিণ্ডের সংকোচন বা সিস্টোল অবস্থায় ধমনির গায়ে রক্তচাপের মাত্রা সবচেয়ে বেশি থাকে। একে সিস্টোলিক চাপ বা ( Systolic Pressure ) বলে। হৃৎপিণ্ডের ( প্রকৃতপক্ষে নিলয়ের ) প্রসারণ বা ডায়াস্টোল অবস্থায় রক্তচাপ সবচেয়ে কম থাকে। একে ডায়াস্টোলিক চাপ ( Diastolic Pressure ) বলে।

রক্তচাপ কিভাবে কমাব
Image by tomwieden from Pixabay

আদর্শ রক্তচাপ :

চিকিৎসকদের মতে, পরিণত বয়সে একজন মানুষের আদর্শ রক্তচাপ ( Blood pressure ) সাধারণত 120/80 মিলিমিটার মানের কাছাকাছি। রক্তচাপকে ২টি সংখ্যায় উল্লেখ করা হয়। প্রথমটি উচ্চচাপ এবং দ্বিতীয়টি নিম্নচাপ। রক্তের উচ্চ চাপকে সিস্টোলিক ( Systolic ) চাপ বলে যার আদর্শ মান 80 মিলিমিটারের নিচে। এই চাপটি হৃৎপিণ্ডের দুটি বিটের মাঝামাঝি সময় রক্তনালিতে সৃষ্টি হয়। দুধরনের রক্তচাপের পার্থক্যকে ধমনিঘাত বা নাড়িঘাত চাপ ( Pulse pressure ) বলা হয়। সাধারণত সুস্থ অবস্থায় হাতের কব্জিতে রেট তথা হৎস্পন্দনের মান প্রতি মিনিটে 60-100। হাতের কবজিতে হালকা করে চাপ দিয়ে ধরে পালস রেট বের করা যায়। স্ফিগমোম্যানোমিটার ( Sphygmomanometer ) বা সংক্ষেপে বিপি যন্ত্রের সাহায্যে রক্তচাপ মাপা যায়। এই যন্ত্র দিয়ে ডায়াস্টোলিক ও সিস্টোলিক চাপ দেখে রক্তচাপ নির্ণয় করা যায়।

উচ্চ রক্তচাপ ( High blood pressure or hypertension)  উচ্চ রক্তচাপকে নীরব ঘাতক হিসেবে গণ্য করা হয়। সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্টে বলা হয়েছে 2020 সালের মধ্যে স্ট্রোক ও করোনারি ধমনির রোগ হবে বিশ্বের এক নম্বর মরণব্যাধি এবং দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে এর প্রকোপ ছড়িয়ে পড়বে মহামারী আকারে। হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের অন্যতম প্রধান কারণ হলো উচ্চ রক্তচাপ।

উচ্চ রক্তচাপ কি ?

রক্ত চলাচলের সময় রক্তনালিগাত্রে যে চাপ সৃষ্টি হয়, তাকে রক্তচাপ বলে। আর স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি রক্তচাপকে উচ্চ রক্তচাপ বলা হয়। একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের ক্ষেত্রে সাধারণত সিস্টোলিক চাপ 120 মিলিমিটার পারদের নিচে এবং ডায়াস্টোলিক চাপ 80 মিলিমিটার পারদের নিচের মাত্রাকে কাঙ্ক্ষিত মাত্রা হিসেবে ধরা হয়। আর এই রক্তচাপ যখন মাত্রাতিরিক্ত হয় তখনই আমরা তাকে উচ্চ রক্তচাপ বলে থাকি।

উচ্চ রক্তচাপ ঝুঁকির কারণ :

বাবা বা মায়ের উচ্চ রক্তচাপ থাকলে তার সন্তানদের উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এছাড়াও যারা স্নায়বি‌ক চাপে ( Tension ) বেশি ভোগেন অথবা ধূমপানের অভ্যাস আছে, তাদের উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার বেশি লক্ষণ দেখা দেয়। দেহের ওজন বা মেদ বেশি বেড়ে গেলে কিংবা লবণ এবং চর্বিযুক্ত খাদ্য বেশি খেলে এমনকি পরিবারের সদস্যদের ডায়াবেটিস বা কোলেস্টেরলের পূর্ব কারো থাকলে উচ্চ রক্তচাপ দেখা দেয়। খিঁচুনি রোগের ( Eclampsia ) কারণে সন্তান জন্মদানের সময় মায়ের রক্তচাপ বৃদ্ধি পেতে পারে।

উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ :

মাথাব্যথা, বিশেষ করে মাথার পেছন দিকে ব্যথা করা উচিত রক্তচাপের প্রাথমিক লক্ষণ। এছাড়া রোগীর মাথা ঘোরা, ঘাড় ব্যথা করা, বুক ধড়ফড় করা ও দুর্বল বোধ করাও উচ্চরক্তচাপের লক্ষণ। অনেক সময় রোগীর নাক দিয়ে রক্ত পড়ে। উচ্চ রক্তচাপের রোগীর ভালো‌ ঘুম হয় না এবং অল্প পরিশ্রমে তারা হাঁপিয়ে ওঠে। ভয়ের ব্যাপার হলো, প্রায় 50% ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপ হলে কোনো লক্ষণ প্রকাশ পায় না। তখন স্ট্রোক বা হার্ট অ্যাটাক হয়ে কিছু বুঝে ওঠার আগেই।

রক্তচাপ নির্ণয় করা :

রক্তচাপ মাপক যন্ত্র বা বিপি যন্ত্র দিয়ে রক্তচাপ মাপা হয়। রক্তচাপ মাপার শুরুতে রোগীকে কয়েক মিনিট নিরিবিলি পরিবেশে সোজা হয়ে শুয়ে থাকতে হবে। কমপক্ষে 15 থেকে 20 মিনিটের ব্যবধান রেখে রক্তচাপ নির্ণয় করা ভালো।

উচ্চ রক্তচাপের প্রতিকার :

উচ্চ রক্তচাপের প্রতিকারে টাটকা ফল এবং শাক-সবজি খাওয়ার অভ্যাস করা উচিত। দেহের ওজন নিয়ন্ত্রণে রেখে শারীরিক পরিশ্রম করা বা ব্যায়াম করা প্রয়োজন। চর্বিজাতীয় খাদ্য গ্ৰহণ থেকে বিরত থাকা ছাড়াও খাবারের সময় অতিরিক্ত লবণ ( কাঁচা লবণ ) খাওয়া উচিত নয়। ধূমপান ছেড়ে দেওয়া জরুরি। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে না থাকলে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ শুরু হতে পারে, যা স্ট্রোক নামে পরিচিত‌। কর্মক্ষমতা, স্বাস্থ্য, বয়স এবং রোগের কারণে রক্তচাপের মাত্রার পরিমাণ কমবেশি হতে পারে। মোটা লোকদের ওজন হ্রাস, চর্বিজাতীয় খাদ্য কম খাওয়া, খাবারে লবণ কম খাওয়া ইত্যাদি নিয়ম মেনে চললে উচ্চ রক্তচাপ এর ঝুঁকি এড়ানো যায়। রক্তচাপ অনেক বেশি হলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত ঔষধ সেবন করা উচিত।

কোলেস্টেরল ( Cholesterol ) বলতে কি বোঝ?

কোলেস্টেরল হাইড্রোকার্বন কোলেস্টেরল থেকে উৎপন্ন একটি যৌগ। উচ্চশ্রেণির প্রাণিজ কোষের এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। কোলেস্টেরল লিপোপ্রোটিন নামক যৌগ সৃষ্টির মাধ্যমে রক্তে প্রবাহিত হয়। রক্তে তিন ধরনের লিপোপ্রোটিন দেখা যায়।

(a) LDL ( Low Density Lipoprotein ) : একে খারাপ কোলেস্টেরলের বলা হয়, কারণ এটি হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। সাধারণত আমাদের রক্তে 70% LDL থাকে। ব্যক্তিবিশেষে এই পরিমাপের পার্থক্য দেখা যায়।

(b) HDL ( High Density Lipoprotein ) : একে সাধারণত ভালো কোলেস্টেরল বলা হয়। এটি হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।

(c) ট্রাই- গ্লিসারাইড ( Triglyceride ) : এই কোলেস্টেরল চর্বি অথবা কার্বোহাইড্রেট থেকে তৈরি হয়ে থাকে।

নিচের সারণিতে রক্তে কোলেস্টেরলের আদর্শ মান দেখানো হলো।
কোলেস্টেরলে প্রকার-মিলিমোল/লিটার LDL —– < 1.8
HDL —– > 1.5
ট্রাই- গ্লিসারাইড ——- < 1.7

অনেক মাত্রার কোলেস্টেরল আছে এমন খাদ্যের মধ্যে উপস্থিত এমন খাদ্যের মধ্যে মাখন, চিংড়ি, ঝিনুক, গবাদিপশুর যকৃৎ, ডিম, বিশেষ করে ডিমের কুসুম উল্লেখযোগ্য।

রক্তে উচ্চ কোলেস্টরলের সমস্যা :

দেহের অন্যান্য অঙ্গের মতো হৃৎপিণ্ডে অক্সিজেন এবং খাদ্যসার সরবরাহের প্রয়োজন হয়। হৃৎপিণ্ডের করোনারি ধমনিগাত্রে চর্বি জমা হলে ধমনিতে স্বাভাবিক রক্তপ্রবাহে বিঘ্ন ঘটে, ফলে হৃৎপিণ্ড পর্যাপ্ত অক্সিজেন এবং খাদ্যসার না পাওয়ায় ক্ষতিগ্ৰস্থ হয়। রক্ত চলাচল কমে যাওয়ার কারণে বুকে ব্যথা অনুভূত হয়। এ অবস্থাকে অ্যানজিনা ( Angina ) বলা হয়। এছাড়া ধমনির গায়ে বেশি চর্বি জমা হলে রক্তপ্রবাহ বাধাগ্ৰস্থ হয় ফলে করোনারি হৃদরোগের আশঙ্কা অনেকগুণ বেড়ে যায়।

কোলেস্টেরলের কাজ উপকারিতাঃ

কোলেস্টেরল কোষপ্রাচীর তৈরি এবং রক্ষার কাজ করে। প্রতিটি কোষের ভেদ্যতা ( Permeability ) নির্ণয় করে বিভিন্ন দ্রব্যাদি কোষে প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করে। মানবদেহের জনন হরমোন এনড্রোজেন ও ইস্ট্রোজেন তৈরিতে সাহায্য করে। অ্যারেনাল গ্ৰন্থির হরমোন ও পিত্তরস তৈরিতে কোলেস্টেরলের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। কোলেস্টেরল পিত্ত তৈরি করে। সূর্যালোকের উপস্থিতিতে চামড়ার কোলেস্টেরল থেকে ভিটামিন ( ডি ) তৈরি হয়, যা রক্তের মাধ্যমে কিডনিতে গিয়ে ভিটামিন ( ডি)র কার্যকর রূপে পরিণত হয় এবং আবার রক্তে ফিরে আসে। কোলেস্টেরল মাত্রা দেহের চর্বিতে দ্রবণীয় ভিটামিনকে ( এ, ডি, ই, এবং কে ) বিপাকে সহায়তা করে। স্নায়ুকোষের কার্যকারিতার জন্য কোলেস্টেরল প্রয়োজন। দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার সাথে কোলেস্টেরল ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত।

কোলেস্টেরলের জন্য স্বাস্থ্যঝুঁকিঃ

গবেষণায় প্রমাণিত যে রক্তে উচ্চমাত্রায় কোলেস্টেরল হৃৎপিণ্ড এবং রক্ত সংবহনের বিশৃঙ্খলার সাথে জড়িত। কোলেস্টেরল পিত্তরসের অন্যতম উপাদান হলেও এটি একটি বর্জ্য পদার্থ এবং যকৃতের মাধ্যমে দেহ থেকে অপসারিত হয়।পিত্তরসে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে গেলে তা তলানির মতো পিত্তথলিতে জমা হয়। কোলেস্টেরলের এ তলানিই শক্ত হয়ে পিত্তথলির পাথর ( Gallbladder stone ) নামে পরিচিত হয়। উল্লেখ্য, কোলেস্টেরল ছাড়াও পিত্ত, ফসফেট, ক্যালসিয়াম প্রভৃতি জমেও পিত্তথলির পাথর হতে পারে।

কোলেস্টেরলের কমানোর উপায়ঃ

পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে। নিয়মিত ব্যায়াম বা শারীরিক শ্রম ব্যয় করতে হবে। অস্বাস্থ্যকর খাবার পরিহার করতে হবে। অনিয়মতান্ত্রিক জীবন-যাপন করা যাবেনা। চিকিৎসক এর পরামর্শ অনুযায়ী চলতে হবে।

 

সুস্থতা আমাদের সবার জন্য বড় নিয়ামত। তাই আমাদের সবাইকে নিজের স্বাস্থ্যের প্রতি নজর দিতে হবে। মনে রাখতে হবে যে শরীর ভালো থাকলে মন ও ভালো থাকবে।

Read More Topics at @Pathokia

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


hacklink satın alporno izleizmir escorteryaman escortGaziantep escortonwin girişTavşanlı escortGiresun escortankara escortkayseri escorteryaman escortsweet bonanza oynaPendik Escortistanbul escortanadolu yakası escorthalkalı escortmaltepe escortKurtkoy Escortyeşilköy escortYeşilköy otele gelen escortflorya eve gelen escortFlorya Kolombiya Escortgenç escort yeşilköyOtele Gelen Escort Yeşilköybeylikdüzü escortbuca escortfethiye escortısparta escortEscort BayanTürkiye Escort, Escort Bayanmarmaris escortBahçeşehir escortizmir escortBursa EscortSlot bonusu veren sitelerdeneme bonusu veren sitelerhacklink satın alporno izleizmir escorteryaman escortGaziantep escortonwin girişTavşanlı escortGiresun escortankara escortkayseri escorteryaman escortsweet bonanza oynaPendik Escortistanbul escortanadolu yakası escorthalkalı escortmaltepe escortKurtkoy Escortyeşilköy escortYeşilköy otele gelen escortflorya eve gelen escortFlorya Kolombiya Escortgenç escort yeşilköyOtele Gelen Escort Yeşilköybeylikdüzü escortbuca escortfethiye escortısparta escortEscort BayanTürkiye Escort, Escort Bayanmarmaris escortBahçeşehir escortizmir escortBursa EscortSlot bonusu veren sitelerdeneme bonusu veren sitelerSütunlar güncellendi.
Twitter Takipçi Satın AlKartal evden eve nakliyatimplantantalya haberkeçiören evden eve nakliyatDeselerMasal OkuMasallar OkuNasrettin Hoca FıkralarıMasallarMasallarİstanbul mevlid lokmasıankara evden eve nakliyatİstanbul izmir evden eve nakliyatmamak evden eve nakliyatEtimesgut evden eve nakliyattuzla evden eve nakliyateskişehir uydu tamirankara parca esya tasımaTwitter Takipçi Satın AlKartal evden eve nakliyatimplantantalya haberkeçiören evden eve nakliyatDeselerMasal OkuMasallar OkuNasrettin Hoca FıkralarıMasallarMasallarİstanbul mevlid lokmasıankara evden eve nakliyatİstanbul izmir evden eve nakliyatmamak evden eve nakliyatEtimesgut evden eve nakliyattuzla evden eve nakliyateskişehir uydu tamirankara parca esya tasımaSütunlar güncellendi.