টিপু সুলতানের তৈরি অনন্য নিদর্শন ‘মঞ্জারাবাদ দুর্গ”
চারপাশে পাহাড়-পর্বতে ঘেরা গভীর অরণ্য আর এই মাঝেই রয়েছে তারা সদৃশ দুর্গ । দুর্গটি আরব সাগর বা আকাশ থেকে তাকালেও দেখতে পাওয়া যায়। এই তারা সদৃশঃ দুর্গটি টিপু সুলতানের তৈরি। সৈন্যবাহিনী ও যুদ্ধাস্ত্র লুকিয়ে রাখার কাজে ব্যবহৃত হতো দুর্গটি। দক্ষিন ইন্ডিয়ার কর্ণাটক রাজ্যের মান্ডিয়া জেলার শ্রীরঙ্গপত্তনম গ্রামটিই এই বীর টিপু সুলতানের রাজ্য ছিল আর সেখানেই রয়েছে ১৮০০ শতকের এই দুর্গটি। যা ভারত তথা ইন্ডিয়ার ফরাসি-সামরিক স্থাপত্যের এক দুর্দান্ত নিদর্শন। দুর্গের নাম মঞ্জারাবাদ, স্থানীয়রা একে তারা দুর্গ নামে বেশী চেনে।অষ্ট ভূজাকৃতির দুর্গটি তারা আকৃতির। তৎকালীন সুলতান টিপু সুলতান এটি ১৭৯০ সালে কর্ণাটক এলাকায় একটি পাহাড়ের উপর তৈরি করেছিলেন।টিপু সুলতান তৎকালীন বৃটিশ ভারতের মহিশূরের শাসনকর্তা ছিলেন । ১৭৫০ সালের ২০ নভেম্বর এই বীরের জন্ম হয়, যার পুরো নাম ফতেহ আলী সাহাব টিপু।তার বীরত্ব আর শৌর্য -বীর্যের কারণে তাঁকে শের-ই-মহীশূর (মহীশূরের বাঘ) ভূষিত করা হয়েছিল। তাঁকে ভারত উপমহাদেশের বীরপুত্রও বলা হয়। এই বীর যোদ্ধা টিপু সুলতান (শের-ই-মহীশূর) ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গে যুদ্ধে ৪ঠা মে ১৭৯৯ সালে নিহত হন।
টিপু সুলতানের উদ্ভাবনী চিন্তার এক অনন্য নিদর্শন এই মঞ্জারাবাদ দুর্গ। মঞ্জারাবাদ অর্থ কুয়াশা। উক্ত অঞ্চলটি প্রায় সময় ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন থাকতো বলে তিনি এই তারা সদৃশ দুর্গের নাম রেখেছিলেন “মঞ্জারাবাদ দুর্গ”।
এই দুর্গ গড়তে টিপু ফরাসি ইঞ্জিনিয়ারদের বেছে নেন কারণ ফরাসিরা ছিল ইংরেজদের শত্রু । এই ফরাসিরা টিপু সুলতানের সেনাবাহিনীকে প্রশিক্ষণে সহায়তা করেছিলেন। বিশেষ কায়দায় নির্মাণ করা হয়েছে দুর্গটি। বিশাল এ দুর্গটি নির্মাণ করতে ব্যবহ্যত হয়েছিল বিশাল বিশাল গ্রানাইট পাথর আর কাদামাটি। দুর্গটি রণকৌশল ও শত্রুদের গোলক ধাঁধাঁয় ফেলার জন্য তারার আকৃতি করা হয়। সেই সময় ইউরোপের সামরিক প্রকৌশলী “সেবাস্তিয়ান লে প্রেস্ট্রে দে ভোবান” (১৬৩৩ থেকে ১৭০৭) ফরাসি রাজা লুই চতুর্দশ এর অধীনে ইঞ্জিনিয়ারের দায়িত্ব পালন করছিলেন। তার সহায়তায় এই দুর্গ নির্মিত হয়। দুর্গ নির্মাণকালে ফরাসিরা এর বিভিন্ন দেয়ালে ধনুক, তীর, বর্শা, তলোয়ার এমনকি কামানও লুকিয়ে রাখার ব্যবস্থা রাখেন। যাতে যুদ্ধের সময় হাতের কাছেই অতি সহজেই টিপুর সৈন্যরা যুদ্ধাস্ত্র পেতে পারেন। আর কামান বসানোর জন্য দুর্গের দেয়াল লম্বা ও পাতলা কোণা করে নির্মাণ করা হয়েছিল।
যখন টিপু সুলতান উপর এই দুর্গ তৈরি করেছিলেন তখন এ অঞ্চলটি ঘন জঙ্গলে পরিপূর্ণ আর জলাশয়গুলোতে ছিল কুমির ও সাপের রাজত্ব। “মঞ্জারাবাদ দুর্গের অভ্যন্তরের ভবনগুলো ইট নির্মিত সেনা ব্যারাক ও অস্ত্রাগার হিসেবে ব্যবহৃত হতো।দেয়ালগুলো অলংকরণ দেখে অনুমান করা হয়, বিশেষ নকশার কারণেই সৈন্যরা দুর্গের কাছাকাছি আসা শত্রুদের ওপর সহজেই আক্রমন ও গুলি চালাতে পারত । এর গোলাকার ঘাঁটিগুলো ছিল মৃত অঞ্চলের মতো। দুটি দুর্গের মাঝে মাঝে একটি করে ঘাঁটি স্থাপন করা হয়। বাইরে থেকে শত্রুরা বুঝতেই পারত না এমন জায়গা থেকে আক্রমণ আসতে পারে। পাথর এবং গুলি ছোড়ার সুবিধার্থে প্রাচীরগুলো তীর আকৃতির করা হয়েছিল।
দুর্গের ভেতরে দুটি কক্ষ ছিল। যা গ্রীষ্মেও শীতল থাকত। গানপাউডার সংরক্ষণের জন্য ব্যবহার করা হতো এ ঘর দুটোকে। এছাড়াও দুর্গের ঠিক জ্যামিতিক কেন্দ্রে বৃষ্টির পানি ধরে রাখার জন্য নির্মাণ করা হয়েছিল ক্রস আকারের একটি ট্যাঙ্ক। দুর্গের উত্তর এবং উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল দিকে খিলানযুক্ত কক্ষ ছিল। যেখানে রক্ষীরা বিশ্রামের জায়গা হিসেবে ব্যবহার করত। এছাড়াও অস্ত্র ও গোলাবারুদ সংরক্ষণের জন্যও ভূগর্ভস্থ বিশেষ কক্ষ ছিল।
তথ্য লাইফহিস্টরি ইন্ডিয়া
ইতিহাস বিষয়ে আরো জানতে এখানে ক্লিক্ করুন…