
বাংলাদেশের বিখ্যাত প্রত্নস্থল
বাংলাদেশের বিখ্যাত প্রত্নস্থল
আমাদের দেশে অনেক প্রত্নস্থল আছে। তার সাথে জড়িয়ে আছে আমাদের ইতিহাস, স্মৃতি আরোও অনেক কিছু। এই সব স্থান আমাদের ঐতিহ্য কে বহন করে। আমাদের সবার উচিত আমাদের ইতিহাস এবং ঐতিহ্য সম্পর্কে জানা। আসুন বাংলাদেশের বিখ্যাত প্রত্নস্থল সম্পর্কে কিছু জানি মহাস্থানগড়, পাহাড়পুর, ময়নামতি, উয়ারি-বটেশ্বর, চারপত্র মুড়া সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাকঃ
- মহাস্থানগড় ঃ
মহাস্থানগড় বগুড়া জেলায় অবস্থিত। বগুড়া শহর থেকে ৮ মাইল উত্তরে করতোয়া নদীর ডান তীরের বাঁকে অবস্থিত মহাস্থানগড় বাংলাদেশর প্রাচীনতম ( খ্রীপূঃ ৩য় শতাব্দী ) সমৃদ্ধ নগরী যার প্রাচীন নাম ছিল পুন্ড্রনগর। স্যার আলেকজান্ডার কানিংহাম মহাস্থানগড়কে প্রাচীন পুন্ড্রনগর বলে সনাক্ত করেন। মহাস্থানগড় একটি দূর্গ নগরী যার আয়তন ৫০০০ × ৪৫০০ বর্গফুট। দূর্গটি ইটনির্মিত প্রাচীন ও পরিখা দ্বারা দূর্গের অভ্যন্তরে ও বাহিরে অসংখ্য প্রত্নস্থল রয়েছে। গড়ের ভিতরে রয়েছে বৈরাগীর ভিটা, খোদার পাথর ভিটা, পরশুরামের প্রাসাদ প্রভৃতি।

দূর্গের বাহিরে উত্তর, দক্ষিণ ও পশ্চিমে রয়েছে অসংখ্য প্রত্নস্থল যেমন- গোবিন্দা ভিটা, মঙ্গল কোট, লক্ষীন্দরের মেড, বিষমর্দন প্রভৃতি। দূর্গের প্রায় ৬ মাইল দূরে রয়েছে ভাসুবিহার। মহাস্থানগড় দূর্গের অভ্যন্তরে এবং বাহিরে মৌর্য, শুঙ্গ কুষান, গুপ্ত, পাল, সেন ও মুসলিম যুগের অসংখ্য প্রত্নবস্তু পাওয়া গিয়েছে। ব্রাক্ষী লিপিতে একটি শিলালিপি, NBPW, পোড়া মাটির ফলক, পাথরের ভাস্কর্য, তাম্র ও লৌহ নির্মিত প্রত্নবস্তু, স্বল্প মূল্যের পাথরের গুটিকা, কাঁচা নির্মিত গুটিকা উল্লেখযোগ্য।
- পাহাড়পুরঃ
জামালগঞ্জ রেলষ্টেশন থেকে প্রায় ৩ মাইল পশ্চিমে নাওগাঁ জেলার বাদলগাছি থানায় অবস্থিত পাহাড়পুর বিহারের প্রাচীন নাম সোমপুর বিহার। পাল সম্রাট ধর্মপাল দেব ( ৭৭০-৮১০ খ্রী: ) এটি নির্মান করেন। স্যার আলেকজান্ডার কানিংহাম উনবিংশ শতাব্দীতে এটা আবিষ্কার করেন। উৎখননের ফলে এখানে ৮০ ফুট উঁচু একটি মন্দিরে এবং ১৭৭টি কুঠরি বিশাষ্ট একটি বৌদ্ধ বিহার আবিস্কৃত হয়। এর মধ্যে উত্তরে ৪৫টি ও বাকি তিন দিকে ৪৪টি করে কুঠরি রয়েছে।

কুঠরিগুলোর সামনে ছিল ৮ থেকে ৯ ফুট চওড়া টানা বারান্দা কুঠরি গুলোতে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা বসবাস ও অধ্যায়ন করতেন। প্রাচীন বৌদ্ধ বিহার কে আধুনিক আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে তুলনা করা হয়। পাহাড়পুর বিহারের মূল মন্দিরের বহিঃস্থ দেয়ালে অসংখ্য পোড়ামাটির ফলক রয়েছে। এই পোড়ামাটির ফলক গুলোতে বিভিন্ন রকমের পশু-পাখি, সমাজের বিভিন্ন স্তরের ছবি, দেব- দেবী প্রভৃতি চিত্র অংকিত হয়েছে। বাংলাদেশে আবিস্কৃত বিহার গুলোর মধ্যে পাহাড়পুর বিহার বৃহত্তম এবং সমগ্ৰ পৃথিবীতে এটি অন্যতম হিসেবে স্থান পেয়েছে।
- ময়নামতি
কুমিল্লার ময়নামতি বাংলাদেশের বৌদ্ধ সভ্যতার অন্যতম প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। অষ্টম থেকে দ্বাদশ শতাব্দী পর্যন্ত এ অঞ্চলটিতে প্রধানত; বৌদ্ধ ধর্ম তথা বৌদ্ধ সংস্কৃতি ও সভ্যতার বিকাশ ঘটে। কুমিল্লা জেলা শহর হতে প্রায় ৫ মাইল পশ্চিমে ময়নামতি অবস্থিত।

উৎখননঃ ড. হারুন-আর-রশিদ এর তত্ত্বাবধানে ১৯৫৫ সালে এই প্রত্নতাত্তিক স্থানটি উৎখনন করা হয়।
প্রত্নতাত্তিক ধ্বংসাবশেষঃ
(১) শালবন বিহার।
(২) কোটিল মুড়া।
(৩) চারপত্র মুড়া।
(৪) ইটখোলা মুড়া।
(৫) আনন্দ বিহার।
(৬) রূপবান মুড়া।
(৭) রানীর বাঙ্গালো।
(৮) চন্ডী মুড়া।
(৯) ভোজ রাজার বাড়ী, ইত্যাদি।
- উয়ারি-বটেশ্বর

উয়ারি বটেশ্বর বেলাব, নরসিংদি অবস্থিত। উয়ারি ও বটেশ্বর গ্ৰাম দুটি প্লাইস্টোসিন যুগে গঠিত। উয়ারি ও বটেশ্বর কয়রা নদীর তীরে অবস্থিত। উয়ারি বটেশ্বরের প্রাপ্ত প্রত্নাবশেষ ৪৫০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দের। উয়ারি বটেশ্বরের প্রত্নতাত্বিক গুরুত্ব সর্বপ্রথম মুহাম্মদ হানিফ পাঠান, ১৯৩৩ সালে তুলে ধরে। প্রথমে উয়ারি বটেশ্বর থেকে প্রত্নবস্তু সংগ্ৰহ এবং গবেষণা শুরু করেন মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ পাঠান।
- চারপত্র মুড়া
অবস্থান- কুমিল্লার লালমাই-ময়নামতি অঞ্চলে। বার্ড থেকে প্রায় ৫ কিমি উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত।

উৎখনন- ১৯৫৬ সালে ড. হারুন-আর-রশিদ এর নেতৃত্বে এই প্রত্নতাত্তিক স্থানটি উৎখনন হয়।
ধ্বংসাবশেষ ( মন্দির ): খননের ফলে এখানে বাসুদেব মন্দির আবিষ্কৃত হয়েছে। ড. রশীদের মতে স্থাপত্যটির প্রধান গঠন কাঠামো সলিড, ধারাবাহিক আকৃতির ও অড়ম্বরহীন। তার মতে রাজা শ্রী লড়হ চন্দ্র একাদশ শতাব্দীর প্রথমার্থে এই মন্দিরটি নির্মান করেছিলেন।
অন্যান্য প্রত্ননিদর্শন
তাম্রশাসনঃ
এখানে প্রাপ্ত ৪টি তাম্র শাসনের মধ্যে তিনটি চন্দ্র বংশের এবং একটি শ্রী বীরধরদেবের। চন্দ্র বংশীয় তাম্র শাসনগুলো হলো- (১) লড়হ চন্দ্রের তাম্রশাসন। (২) লড়হ চন্দ্রের দ্বিতীয় তাম্রশাসন। (৩) গোবিন্দ চন্দ্রের তাম্রশাসন।
স্মারকধারঃ
এখানে ব্রোণ্ঞ্জ নির্মিত বৃহত্তর, গোলাকার এবং ঢাকনি আটা স্মারকধার পাওয়া গেছে।
পোড়ামাটির ফলক :
এখানে ফলকচিত্রগুলি-
(১) নারী পুরুষের যুগল প্রতিচ্ছবি।
(২) হরিণ।
(৩) বানর।
(৪) ঘোড়া।
(৫) রাজহংস।
(৬) ফুল, লতা, পাতা।
প্রত্নতত্ত্ব মানুষের অতীত কর্মকাণ্ড নিয়ে অধ্যয়ন করে সে সময়কার বস্তুগত ও অবস্তুগত সহস্কৃতি সম্পর্কে আমাদেরকে সুনির্দিষ্ট ধারণা দেয়। প্রত্নতত্ত্ব প্রাচীনকালের মানুষের স্থাপত্য, জীবন-যাপনের কৌশল, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড প্রভৃতি জানা এবং আমাদের সভ্যতা কত পুরাতন সে সম্পর্কে ধারনা দেয়। তাই আসুন আমরা সকলেই এই মহামূল্যবান সম্পদগুলি রক্ষা করি।
বাংলাদেশের বিখ্যাত প্রত্নস্থলের দ্বিতীয় অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুণ…
বাংলাদেশের বিখ্যাত প্রত্নস্থল - Pathokia
[…] বাংলাদেশের বিখ্যাত প্রত্নস্থল সম্পর্কে আরো জানতে এখানে ক্লিক করুণ… […]