History

ইতিহাসে বিখ্যাত গণিতবিদ

Pathokia 

এমন অনেক গণিতবিদ আছে যারা বিশ্বের ইতিহাসে বিখ্যাত গণিতবিদ।আবার প্রত্যেকে গণিতের বিভিন্ন শাখায় তাঁর গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে গেছেন। ইতিহাস বিখ্যাত গনিতবিদদের মধ্যে আজ আমরা জোহান্স কেপলার, পিথাগোরাস, অ্যাপোলোনিয়াস এর জীবনী নিয়ে আলোচনা করবো। এরা সবাই ইতিহাসের সমানভাবে বিখ্যাত গণিতবিদ।একজনের নাম আলাদা ভাবে বলা খুবই মুশকিল; কারন নানা গণিতবিদ নানা দিকে তাঁর অবদান রেখেছেন।

জোহান্স কেপলার ( Johannes Kepler ) সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যঃ 

জন্ম : 27/12/1571 খ্রিষ্টাব্দ
মৃত্যু : 15/11/1630 খ্রিষ্টাব্দ
আয়ুষ্ককাল : 59 বছর
জন্মস্থান : জার্মান
জোহান্স কেপলার ছিলেন জার্মান গণিতবিদ ও জ্যোতির্বিদ। তিনি ১৫৭১ খ্রিষ্টাব্দের ২৭শে ডিসেম্বর জন্মগ্ৰহণ করেন। সপ্তদশ শতকের এই বিজ্ঞানী গ্ৰহ উপগ্ৰহের গতি সম্পর্কীয় সূত্র আবিষ্কারের জন্য বিখ্যাত হয়ে আছেন। ১৬১৯ সালে হারমোনিক্স মান্ডিতে তার বিখ্যাত সূত্র Kepler’s Law of Planetary motion প্রকাশিত হয়। কেপলারের এস্ট্রোনোমিয়া নোভা, হারমোনিক্স মান্ডি, এপিটাম অফ কোপার্নিকান এস্ট্রোনোমি ইত্যাদি নিউটনের মহাকর্ষীয় সূত্রের অন্যতম ভিত্তি। কর্ম জীবনে তিনি ছিলেন মূলত একজন গণিত শিক্ষক।

শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি জ্যোতির্বিদ্যা, জ্যোতিষতত্ত্ব, গণিত ও ভৌত দর্শন নিয়ে কাজ করেন। কেপলার তাঁর আলোচনায় ধর্মীয় বক্তব্যও তুলে ধরেন। তাঁর বক্তব্য হলো স্রষ্টা যৌক্তিক ও বোধগম্য কারণেই বিশ্বজগৎ সৃষ্টি করেছেন যা পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে উপলব্ধি করা যেতে পারে। কেপলার যুগে জ্যোতির্বিদ্যা ও জ্যোতিষবিদ্যার মধ্যে স্পষ্ট কোনো পার্থক্য ছিল না। তবে মনীষীরা জ্যোতির্বিদ্যা ও পদার্থবিজ্ঞানের মধ্যে পরিষ্কার পার্থক্য করতে শিখেছিলেন। কেপলার সে সময় এক নতুন ধরনের জ্যোতির্বিদ্যার ব্যাখ্যা দেন। তাঁর এই নতুন ধরনের জ্যোতিবিজ্ঞানের নাম দেন Celestial physics. এতে জ্যোতিবিজ্ঞানকে মূলত সর্বজনীন গাণিতিক পদার্থবিদ্যা হিসেবে দেখানো হয়। ১৬৩০ সালের ১৫ নভেম্বর এই মহান জ্যোতিবিজ্ঞানী পরলোক গমন করেন।

পিথাগোরাস ( Pythagoras ) সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যঃ 

জন্ম : 580 B.C
মৃত্যু : 495 B.C
আয়ুষ্কাল : 85 বছর
জন্মস্থান : তুরষ্ক
পিথাগোরাস আনুমানিক 580 খ্রিষ্টাব্দে বর্তমান তুরুষ্কের পশ্চিমে ইজিয়ান সাগরের সামস দ্বীপে জন্মগ্ৰহণ করেন। প্রাচীন কালে যেসব চিন্তাশীল ব্যক্তি জন্মগ্ৰহণ করেছিলেন, তিনি তাদের মধ্যে অন্যতম। পিথাগোরাসের প্রধান খ্যাতি মূলত দার্শনিক হিসেবে। মিশরের পিরামিড দর্শন করে তিনি বিষ্ময়ে অভিভূত হয়ে যান। বিশাল পিরামিড নির্মাণে যে গাণিতিক নিয়ম মানা হয়েছিল মূলত সেখান থেকেই জ্যামিতির চিন্তা-ভাবনা জেগে ওঠে।

ইউক্লিডের প্রায় ২০০ বছর আগে পিথাগোরাস জ্যামিতি বিষয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করেন, যার পরিণতি হলো তাঁর বিখ্যাত সূত্র ( সমকোণী ত্রিভুজের অতিভুজের উপর অঙ্কিত বর্গক্ষেত্র, অপর দুই বাহুর উপর অঙ্কিত বর্গক্ষেত্রদ্বয়ের সমষ্টির সমান। পিথাগোরাসের শিষ্যরা তাঁর কাছে পাঁচ বছর যথাযথভাবে শিক্ষালাভের পর অঙ্কশাস্ত্র শিক্ষার সুযোগ পেত। সেখানে জ্যামিতি, অঙ্কশাস্ত্র, জ্যোতিবিজ্ঞান, সঙ্গীত, দর্শন শিক্ষা দেওয়া হত। সকলেই তাদের শিক্ষা ও গবেষণার বিষয় গোপন রাখার অঙ্গীকার করত। পিথাগোরাসের জীবনকালের মধ্যেই তাঁর অনুগামীদের নিয়ে একটি সম্প্রদায় গড়ে ওঠে।

এরা সকলেই ভ্রাতৃত্ববোধে উদ্ধুদ্ধ ছিল। রাষ্ট্র ব্যবস্থার প্রতি তাদের শ্রদ্ধাবোধ ছিল না। তাঁরা জ্ঞানচর্চা ও ধর্মীয় অনুশীলনের মধ্যে জীবনচরণ করতেন। পিথাগোরাস বিশ্বাস করতেন বিশ্বের সকল বস্তুকেই সংখ্যা দিয়ে ব্যাখ্যা করা সম্ভব। সংখ্যা নিয়ে তাদের ব্যাখ্যা ছিল যেমন বিচিত্র তেমনি অদ্ভুদ যেমন : রেখাকে ২ হিসেবে ধরে নেওয়া হত। ক্ষেত্রফল প্রকাশ করার জন্য ৩ ব্যবহার করা হত। বস্তুর ঘনত্ব প্রকাশ করা হতো ৪ দিয়ে, পিথাগোরাসের মতে ১ হলো সকল সংখ্যার আদি সংখ্যা, এর পূর্বে আর কোনো সংখ্যা নেই সুতরাং এই সংখ্যাটির মধ্য দিয়ে স্বয়ং ঈশ্বরই ব্যক্ত হয়েছেন তাই ১ হলো অত্যন্ত পবিত্র সংখ্যা, ২ হলো নারী সংখ্যা, ৩ হলো পুরুষ সংখ্যা। ২+৩ = ৫ হলো বিবাহের সংখ্যা। পিথাগোরাস ১০ কে বিবেচনা করতেন যাদু সংখ্যা হিসেবে।

অ্যাপোলোনিয়াস ( Apollonius ) সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যঃ 

জন্ম : 240-c BC
মৃত্যু : c.190 BC
আয়ুষ্কাল : 50 বছর
জন্মস্থান : গ্ৰীস
অ্যাপোলোনিয়াস ( Apollonius ) এর জন্ম তারিখ সঠিক পাওয়া যায়নি। তবে ইতিহাসবিদদের ধারণা অনুযায়ী ইউক্লিডের গ্ৰন্থ রচনায় প্রায় 50 বছর পরে অর্থাৎ 15 খ্রিষ্টাব্দের দিকে তিনি ইতালিতে জন্মগ্ৰহণ করেন। ইউক্লিড যে স্কুলে পাঠদান করাতেন তিনি সে স্কুলের ছাত্র ছিলেন। জ্যামিতির ( কণিক – সেকশন ) অ্যাপোলোনিয়াসের নিজস্ব দান। 1637 সালে ফরাসি গণিতবিদ দেকার্তের অক্ষ-জ্যামিতির বীজ গণিতের সাহায্যে কণিক-সেকশন বিদ্যা আগের চেয়ে সহজ হলেও অ্যাপোলোনিয়াসের প্যারাবোলা, ইলিপ্স, হাইপ্যারাবোলার সংজ্ঞা আগের মতোই রয়েছে। বিখ্যাত এই গণিতবিদ 190 খ্রিষ্টাব্দে পরলোকে গমন করেন।

বিখ্যাত গণিতবিদ সম্পর্কে আরো জানতে এখানে ক্লিক করুণ…

Recommended Posts

বাংলাদেশের ঐতিহাসিক মসজিদ
World Heritage Bangladesh

ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন মসজিদ

মুসলমানদের তথা মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের পবিত্র উপসনালয় মসজিদ। বাংলাদেশ মুসলিম সংখ্যা গরিষ্ঠ দেশ হলেও এখানকার ইসলামের ইতিহাস তেমন পুরাতন নয়। বাংলাদেশে কিছু প্রাচীন মসজিদ ছাড়া মোঘল আমলের পূর্বের প্রায় সকল প্রাচীন মসজিদ ই ধ্বংস হয়ে গেছে। আজ আমরা তেমনই কিছু ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন মসজিদ সম্পর্কে জানবো। সিংগাইর মসজিদঃ মধ্যযুগীয় এই সিংগাইর মসজিদটি ষাটগম্বুজ মসজিদের দক্ষিণ-পূর্ব কোনে অবসিহত। […]

Pathokia 

গেঁটেবাত থেকে মুক্তির উপায়

গেঁটেবাত থেকে মুক্তির উপায় শতাধিক প্রকারের বাতরোগের মধ্যে রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস বা গেঁটেবাত অন্যতম। সাধারণত বয়স্করা এ রোগে আক্রান্ত হয়।কম বয়সী ছেলেমেয়েদের বেলায় গিঁটে ব্যথা বা যন্ত্রনা হওয়া রিউমেটিক ফিভার বা বাতজ্বর ( Rheumatic Fever ) জাতীয় অন্য রোগের লক্ষণ হতে পারে। মানব শরীরে রক্তের সঙ্গে ইউরিক অ্যাসিড (Uric Acid) নামে এক ধরনের উপাদান থাকে, যার […]

Pathokia 
Artimis:NASA’s Mega Moon Rocket
Science and Technology

আর্টেমিস : আবারও চাঁদের বুকে মানুষ

আর্টেমিস :আবারও চাঁদের বুকে মানুষ Artimis:NASA’s Mega Moon Rocket দীর্ঘ পাঁচ দশক পর আবারও চাঁদের বুকে মানুষ পাঠানোর অভিযানে নাসা। তিন ধাপের মিশনে মনুষ্যবিহীন প্রথম রকেট টি ২৯ আগস্ট যাওয়ার কথা ছিল। আর শেষ ধাপে পাঠানোর কথা ছিল মানুষ। এর মাধ্যমে শুরু হতে যাচ্ছিল বহুল প্রতীক্ষিত আর্টেমিস যুগের। ফ্লোরিডার কেপ কেনেডি স্পেস সেন্টারে (Kennedy Space […]

Pathokia 

1 Comment

  1. […] বিখ্যাত গণিতবিদ সম্পর্কে আরো জানতে এখানে ক্লিক করুণ… […]

Comments are closed.