ইতিহাস বিখ্যাত গণিতবিদ

Pathokia 

এমন অনেক গণিতবিদ আছে যারা বিশ্বের ইতিহাস বিখ্যাত গণিতবিদ।আবার প্রত্যেকে গণিতের বিভিন্ন শাখায় তাঁর গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে গেছেন। ইতিহাস বিখ্যাত গনিতবিদদের মধ্যে আজ আমরা ইউক্লিড, ইরোটোস্থিনিস এবং থেলিস এর জীবনী নিয়ে আলোচনা করবো। এরা সবাই ইতিহাসের সমানভাবে বিখ্যাত গণিতবিদ।একজনের নাম আলাদা ভাবে বলা খুবই মুশকিল; কারন নানা গণিতবিদ নানা দিকে তাঁর অবদান রেখেছেন।


ইউক্লিড (Euclid) সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যঃ

জন্ম : 325 B.C
মৃত্যু : 265 B.C
আয়ুষ্কাল : 60 বছর
জন্মস্থান : আলেকজান্দ্রিয়া
প্রাচীনকালে বিভিন্ন সময়ে ইউক্লিড নামে তিনজন ব্যক্তির পরিচয় পাওয়া যায় যারা প্রত্যেকেই ছিলেন গণিতজ্ঞ।
একজন ছিলেন গ্যালিলিও এর সময়ে, আর একজন ছিলেন আর্কিমিডিসের কিছু পূর্ববর্তী সময়ে এবং শেষজন ছিলেন প্লেটোর সতীর্থ। তবে আলোচ্য ইউক্লিউকে নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন মত আছে। কারো মতে আলোচ্য ইউক্লিড গ্যালিলিও এর সমসাময়িক কালের আবার কারো মতে তিনি প্লেটোর শিষ্যদের কাছে লেখাপড়া শিখেছেন এবং রাজা টালমির রাজত্বকালে আবির্ভূত হয়েছিলেন। এই মহান গণিতজ্ঞ ইউক্লিড ( এউক্লিদেশ ) জ্ঞান-বিজ্ঞানের উত্তরণের ক্ষেত্রে তাঁর লেখাগুলি ছিল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। কিন্তু তাঁর লেখা গ্ৰন্থগুলির মধ্যে ( ডাটা ), ( অপটিক ) ও ( Elements ) এই গ্ৰন্থ তিনটি পাওয়া যায়। বাকী লেখা কালের গর্ভে হারিয়ে গেছে এবং আজও তা অজানা। ইউক্লিডের মাষ্টারপিস ( The Elements ) বইটি ১৩ খণ্ডে বিভক্ত। প্রায় ৫০ বছর বইটির মাধ্যমে তিনি জ্যামিতির ভিত্তি স্থাপন করে গেছেন। খ্রিষ্টপূর্ব ৪র্থ ও ৫ম শতাব্দীতে আবির্ভূত ইউডক্সস, থিয়েতেতস প্রভৃতি গণিতবিদ জ্যামিতিতে অবদান রেখে গেছেন। অনেকের ধারণা ইউক্লিড মুলত জ্যামিতর বিচ্ছিন্ন সকল তথ্যগুলোকে একীভূত করে ( Elements ) বইটি রচনা করেন। ( Elements ) গ্ৰন্থখানির গুরুত্ব আজো বর্তমান। তিনি অনেকগুলো উপপাদ্যের উৎকর্ষ সাধন করেছিলেন, অনেকগুলো অসম্পূর্ণ উপপাদ্যকে সম্পূর্ণ করেছিলেন। আবার কতগুলো তিনি নিজেই আবিষ্কার করেছিলেন। ইউক্লিডের জীবনকাল সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য কোন তথ্য নেই। কোথায়, কিভাবে এবং কবে এই মহান জ্যামিতিবিদের জীবনাবসান হয়েছে সে কথা আজো কেউ বলতে পারেনি।

ইরোটোস্থিনিস ( Eratosthenes ) সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যঃ 

জন্ম : 276 B.C
মৃত্যু : 194 B.C
বয়স : 82 বছর
জন্মস্থান : আফ্রিকা
ইরাটোস্থিনিস খ্রিষ্টপূর্ব ২৭৬ অব্দে উত্তর আফ্রিকার উপনিবেশ সাইরিন ( Cyrene ) নগরীতে জন্মগ্ৰহণ করেন। প্রাথমিক শিক্ষা লাভের পর তিনি আলেকজান্দ্রিয়ায় ব্যাকরণ ও দর্শন শাস্ত্র নিয়ে অধ্যায়ন করেন। বেশ কয়েক বছর এখানে পড়াশুনা করেন এবং কৃতিত্ত্বের স্বাক্ষর রাখেন। ইরাটোস্থিনিস পাঠ্যবস্থায় কোনোদিনই গণিত শাস্ত্র অধ্যয়ন করেননি। কিন্তু বই পড়তে পড়তে একসময় গণিতের প্রতি অনাবিল ভালোবাসা জন্মালো। রাতভর শুধু গণিত নিয়েই ডুবে থাকতেন‌। শুরু করে দিলেন গণিত নিয়ে গবেষণা। তিনি পৃথিবীর পরিধী ও ব্যাস নির্ণয়ের চেষ্টা করেছিলেন। যদিও নির্ভুল ফলাফল পাননি। তিনি পৃথিবী ও সূর্যের দূরত্ব নির্ণয়ের চেষ্টা করেছিলেন। তিনিই প্রথম বলেছিলেন সূর্য পৃথিবী অপেক্ষা বড় এবং আরো বলেছিলেন গ্ৰহপুঞ্জ পৃথিবীর চারপাশে পরিভ্রমণ করছে। ইরাটোস্থিনিসকে লোকে বিটা ( B ) বলে ডাকত। কারণ তিনি জ্ঞানের সব শাখাতেই পারদর্শী ছিলেন। কিন্তু কোনো শাখাতেই সর্বোচ্চ স্থান অধিকার করতে পারেননি। ইরাটোস্থিনিস হিসেব করে বের করেছিলেন সূর্যের পরিধি ২৫,০০০মাইল। এ হিসেব অন্যান্য গণিতজ্ঞদের প্রায় কাছাকাছি ছিল। আর্কিমিডিস ( The Sand Reckoner ) গ্ৰন্থে লিখেছিলেন পৃথিবীর পরিধী ৩০ মিরিয়াড স্টেডিয়ন। অর্থাৎ ৩০,০০০ মাইল। ১৯১০ সালে হেফোর্ড বের করেছিলেন, পৃথিবীর পরিধী ২৪৯০৭ মাইল। আশ্চার্যের বিষয় হল প্রায় ২০০০ বছর আগে এতটা সঠিক হিসেব করা কম পারদর্শিতার কথা নয়। আর এ হিসেবে তাঁকে বিটা ( B ) বলে আখ্যায়িত করা ঠিক হয়নি। তিনি বের করেছিলেন পৃথিবীর উত্তর-দক্ষিণের পরিধী ৫০০ মাইল ৫০ গুণ বা ২৫,০০০ মাইল। প্রাচীন গ্ৰীসের এই চিন্তানায়ক আনুমানিক ১৯৪ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে মারা যান।

থেলিস ( Thales ) সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যঃ 

জন্ম : 624 B.C
মৃত্যু : 545 B.C
আয়ুষ্কাল : 79 বছর
জন্মস্থান : গ্ৰীস
মিলেতোসের থেলিস 624 খ্রিষ্টপূর্বাব্দে গ্ৰীসে জন্মগ্ৰহণ করেন। তিনি গণিতশাস্ত্র, জ্যোতির্বিদ্যা এবং দর্শনের জনক হিসেবে নন্দিত। তিনি ছিলেন প্রাচীন গ্ৰীসের সাতজন জ্ঞানী ব্যক্তির একজন যাদেরকে সোফি বলা হতো। এরিষ্টটল লিখেছেন যে সমস্ত বিশ্ব একটি মাত্র উপাদান দ্বারা গঠিত, থেলিস এই চিন্তাধারার জন্ম দিয়েছেন। প্রকৃতই থেলিস এ চিন্তার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে একটি দর্শনবিষয়ক অনুকল্প প্রস্তাব করেন যা পানি দর্শন নামে পরিচিত। এ দর্শন মতে সমগ্ৰ বিশ্বজগৎ পানি থেকে সৃষ্টি হয়েছে। তাঁর নিজের ভাষায় ( সব বস্তুই পানি ) সব বস্তুই যে পানি নয় এটা তার দৃষ্টিভঙ্গির গুরুত্বের কাছে অতি নগন্য ছিল। একজন দার্শনিকের মতই বিমূর্ত এর অস্তিত্ব আছে বলে বিশ্বাস করতেন। এছাড়াও তার আরও অনেক উক্তি আছে। থেলিসের জ্যামিতি হতে বীজগণিতের ধারণা পাওয়া যায়। তিনিই প্রথম দেখান যে একটি বিন্দু নির্দিষ্ট শর্তাধীনে চলমান হয়ে জ্যামিতিক সঞ্চারপথ তৈরি করে। থেলিস তৎকালীন ক্ষেত্র পর্যবেক্ষণ করে সঠিক প্রশ্ন উত্থাপন করেন এবং পৃথিবীর সকল ক্ষণস্থায়ী বস্তু বা বিষয়ের মধ্যকার নিয়ম অনুসন্ধানে প্রচেষ্টার সূত্রপাত করেন। তিনি প্রথমে বছরে প্রকৃত দিনের সংখ্যা গণনার সফলতা অর্জন করেন। তারকারাজি পর্যবেক্ষণ দ্বারা সমুদ্রে অবস্থানরত কোনো জাহাজের দূরত্ব নির্ণয়ের পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। থেলিস কিছু যুগান্তকারী উপপাদ্যের জনক। জ্যামিতির 5 টি উপপাদ্য প্রণয়নের জন্যই মূলত তিনি বিখ্যাত হয়ে আছেন। উপপাদ্যগুলি হলো :
(1) একটি বৃত্ত যেকোনো ব্যাস দ্বারা সমদ্বিখণ্ডিত হয়।
(2) সমদ্বিবাহু ত্রিভুজের সমান সমান বাহুগুলোর বিপরীত কোণগুলোও পরস্পর সমান।
(3) অর্ধবৃত্তস্থ কোণের পরিমাণ একসমকোণ বা 90 ডিগ্ৰি।
(4) পরস্পরচ্ছেদী দুটি সরলরেখা দ্বারা উৎপন্ন বিপ্রতীপ কোণদ্বয় সমান।
(5) যদি কোনো ত্রিভুজের ভূমি এবং ভূমি সংলগ্ন কোণদুটি দেয়া থাকে তবেই কেবল ত্রিভুজটি আঁকা যাবে।
তিনি 79 বছর বয়সে 545 থেকে 548 খ্রীষ্টপূর্বাব্দের মাঝে কোনো এক সময় পরলোক গমন করেন।

বিখ্যাত গণিতবিদ সম্পর্কে আরো জানতে এখানে ক্লিক করুণ…

Recommended Posts

বাংলাদেশের ঐতিহাসিক মসজিদ
World Heritage Bangladesh

ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন মসজিদ

মুসলমানদের তথা মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের পবিত্র উপসনালয় মসজিদ। বাংলাদেশ মুসলিম সংখ্যা গরিষ্ঠ দেশ হলেও এখানকার ইসলামের ইতিহাস তেমন পুরাতন নয়। বাংলাদেশে কিছু প্রাচীন মসজিদ ছাড়া মোঘল আমলের পূর্বের প্রায় সকল প্রাচীন মসজিদ ই ধ্বংস হয়ে গেছে। আজ আমরা তেমনই কিছু ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন মসজিদ সম্পর্কে জানবো। সিংগাইর মসজিদঃ মধ্যযুগীয় এই সিংগাইর মসজিদটি ষাটগম্বুজ মসজিদের দক্ষিণ-পূর্ব কোনে অবসিহত। […]

Pathokia 

গেঁটেবাত থেকে মুক্তির উপায়

গেঁটেবাত থেকে মুক্তির উপায় শতাধিক প্রকারের বাতরোগের মধ্যে রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস বা গেঁটেবাত অন্যতম। সাধারণত বয়স্করা এ রোগে আক্রান্ত হয়।কম বয়সী ছেলেমেয়েদের বেলায় গিঁটে ব্যথা বা যন্ত্রনা হওয়া রিউমেটিক ফিভার বা বাতজ্বর ( Rheumatic Fever ) জাতীয় অন্য রোগের লক্ষণ হতে পারে। মানব শরীরে রক্তের সঙ্গে ইউরিক অ্যাসিড (Uric Acid) নামে এক ধরনের উপাদান থাকে, যার […]

Pathokia 
Artimis:NASA’s Mega Moon Rocket
Science and Technology

আর্টেমিস : আবারও চাঁদের বুকে মানুষ

আর্টেমিস :আবারও চাঁদের বুকে মানুষ Artimis:NASA’s Mega Moon Rocket দীর্ঘ পাঁচ দশক পর আবারও চাঁদের বুকে মানুষ পাঠানোর অভিযানে নাসা। তিন ধাপের মিশনে মনুষ্যবিহীন প্রথম রকেট টি ২৯ আগস্ট যাওয়ার কথা ছিল। আর শেষ ধাপে পাঠানোর কথা ছিল মানুষ। এর মাধ্যমে শুরু হতে যাচ্ছিল বহুল প্রতীক্ষিত আর্টেমিস যুগের। ফ্লোরিডার কেপ কেনেডি স্পেস সেন্টারে (Kennedy Space […]

Pathokia