Twitter Takipçi Satın AlKartal evden eve nakliyatimplantTwitter Takipçi Satın AlKartal evden eve nakliyatimplant

বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব নুর উদ্দিন মুহাম্মদ বাকের জং!

বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব

শেষ স্বাধীন নবাবের অজানা ইতিহাস।

ইতিহাস থেকে মুছে যাওয়া বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব! নবাব নুর উদ্দিন মুহাম্মদ বাকের জং!

বাংলা – বিহার – উড়িষ্যার শেষ স্বাধীন নবাব হিসেবে আমরা সকলেই এককথায় জানি নবাব সিরাজ উদ দৌলার নাম। কিন্তু ১৭৫৭ সালের ২৩ শে জুন সিরাজ উদ দৌলার পতন হওয়ার পরেও প্রায় দুই যুগ ধরে এই বাংলার স্বাধীন নবাবের অস্তিত্ব ছিলো। কি অবাক হচ্ছেন, আর সেই স্বাধীন নবাবের নাম মোগল প্রিন্স নুর উদ্দিন মুহাম্মদ বাকের জং। তাঁর নিয়ন্ত্রণে অবশ্য রাজধানী মুর্শিদাবাদ ছিলো না। তিনি মূলত বৃহত্তর উত্তরবঙ্গে বীরত্বের সাথে নবাবী পরিচালনা করেছেন এবং বারবার ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন।তিনি ছিলেন বৃটিশ বিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম প্রাণপুরুষ।

ব্রিটিশদের ভাষায় তিনি ফকির মজনু শাহ,আর লেখক সৈয়দ শামসুল হক এবং তৎকালীন কৃষক আন্দোলনের অগ্রদূত যাকে স্থানীয় কৃষকরা তাকে চিত্রায়িত করেছেন কৃষক নেতা নুরুলদীন হিসেবে। কিন্তু এই দুইটার একটাও তার আসল পরিচয় নয়। আসল নাম হলো নুর উদ্দিন মুহাম্মদ বাকের জং। তিনি ছিলেন মোগল শাহজাদা, মোগল সম্রাট ২য়  শাহ্ আলম এর আপন চাচাতো ভাই এবং ভগ্নিপতি।

ব্রিটিশদের হাতে ১৭৫৭ সালে নবাব নবাব সিরাজ উদ দৌলার পতনের পর মুর্শিদাবাদের নবাব হিসেবে মীর জাফর, মীর কাশেমকে বাংলার মসনদে বসায় ব্রিটিশরা। আর ঠিক সে সময় দিল্লি হতে  রংপুর – দিনাজপুর তথা বৃহত্তর উত্তরবঙ্গ অঞ্চলের শাসন কর্তা হয়ে মোগল শাহজাদা নুর উদ্দিন বাকের জং-এর আগমন ঘটে। আর ধারণা করা হয়, মোগল রাজদরবার থেকেই তাকে পাঠানো হয় সে অঞ্চলের নবাবী পরিচালনার জন্য।

ব্রিটিশরা যে এই নতুন নবাবকে অর্থাৎ নুর উদ্দিনকে মেনে নিবে না, সেটা ভালো করেই তিনি  জানেন। তাই প্রথম থেকেই নবাব নুর উদ্দিন বাকের জং  ব্রিটিশ বেনিয়াদের সাথে লড়াই করার প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। আর এই লড়ায়ের ধারাবাহিকতায় ১৭৬০ সালে সংগঠিত হয় ” ব্যাটল অফ মাসিমপুর ” (Battle of Masimpur) যুদ্ধ। এই যুদ্ধে নবাব নুর উদ্দিন এর কাছে হেরে যায় ব্রিটিশ বেনিয়ারা এবং তাদের অনুগত বিহার রাজ্যের ডেপুটি নবাব রাম নারায়ণের বাহিনী।

মাসিমপুর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন শাহজাদা দ্বিতীয় শাহ আলম, যিনি পরবর্তীতে মোগল সম্রাট হন। মাসিমপুরে বিজয় অর্জনের পর সমগ্র উত্তরবঙ্গ নিয়ন্ত্রণে আসে নবাব নুর উদ্দিন বাকের জংয়ের। আর ব্রিটিশদের মধ্যে শুরু হয় আতংক। ব্রিটিশদের আমলে লিখিত ইতিহাসে এ নবাবের নাম  লিখা হয়নি। তারা এই যুদ্ধকে ” ফকির বিদ্রোহ ” হিসেবে নামকরণ করে।

ইংরেজ শাসন উৎখাতে ১৭৬০ সাল থেকে ১৭৮৩ সাল পর্যন্ত সুদীর্ঘ ২৩ বছর উত্তর ও মধ্য বঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় নবাবের সাথে ব্রিটিশ বেনিয়া এবং তাদের অনুগত জমিদারদের যুদ্ধ হয়। কিন্তু কোনোভাবেই ব্রিটিশরা নবাবকে পরাস্ত করতে সক্ষম হয়নি। অবশেষে ১৭৮৩ সালের  ফেব্রুয়ারী মাসে লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলার মোগলহাট ইউনিয়নে “কৃষক বিদ্রোহ” এর এক যুদ্ধে পিছন থেকে নবাবকে আঘাত করে আহত করে এক ব্রিটিশ সেনা। আর সেই আঘাতের কারণে কয়েকদিন পর ১৫ অথবা ২২শে ফেব্রুয়ারী তিনি ফুলচৌকিস্থ নিজ বাসভবনে মৃত্যু বরণ করেন। প্রতিশোধ পরায়ণ বৃটিশ শাসক গোষ্ঠি তাঁকে ফুলচৌকি জামে সসজিদের মূল গেট বরাবর কবরস্থ করতে বাধ্য করে।

যদি হয় নবাব, তবে কোথায় তার রাজধানী?

নবাব নুর উদ্দিন মোহাম্মদ বাকের জং বর্তমান রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলাধীন ফুলচৌকি নামক স্থানকে রাজধানী করার নিমিত্তে কাজ শুরু করেছিলেন। কিন্তু তিনি তা সমাপ্ত করতে পারেননি।

তবে তিনি বেশকিছু দাপ্তরিক দালান, কোর্ট, একটি মসজিদ এবং প্রাসাদের  আংশিক কিছু কাজ সমাপ্ত করেন। তবে তাঁর আমলে নির্মিত মসজিদটি ছাড়া আর কোনোকিছুরই এখন অক্ষত নেই। অবশ্য মসজিদটার অসম্পূর্ণ কাজ পুরোপুরি সম্পন্ন করেন তার পুত্র শাহজাদা কামাল উদ্দিন।

ব্রিটিশরা নবাবের এই রাজধানী ইতিহাস থেকে মুছে দিতে কম চেষ্টা করেনি। কামানের মাধ্যমে মসজিদ আর বসবাসের প্রাসাদটি ছাড়া আর সব স্থাপত্য গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল সেই সময়। কালের পরিক্রমায় ঐ এলাকা জুড়ে তৈরী হয় শালবন। তাতে ঢেকে পড়ে নবাব নুর উদ্দিন মোহাম্মদ বাকের জং এর গড়ে তোলা অসম্পুর্ণ রাজধানীটি।

মোগল প্রিন্স এই নবাবের সাথে জড়িয়ে আছে বেশকিছু ঐতিহাসিক নাম।

  • নবাব নুর উদ্দিন বাকের জং এর সহযোগী ছিলেন ভবানী পাঠক এবং জমিদার জয়দুর্গা দেবী চৌধুরাণী ( দেবী চৌধুরাণীর নামে রংপুর অঞ্চলে একটা রেলস্টেশনের নামকরণ করা হয়েছে। বঙ্কিমচন্দ্রের ” দেবী চৌধুররাণী ” উপন্যাসের নায়িকাও এই মহীয়সী নারী )। ১৮৩০ সালে নবাবের কন্যা শাহজাদী লালবিবির সাথে রংপুর অঞ্চলে নবাবের সহযোগী ভবানী পাঠককে ব্রিটিশরা এমব্যুশ করে হত্যা করেন।
  • নবাব নুর উদ্দিন মোহাম্মদ বাকের জং ব্রিটিশ বেনিয়ার সৈন্যের দ্বারা জখম হওয়ার পর তার সেবা- শুশ্রূষা করেন ধনাঢ্য এবং বীর নারী যোদ্ধা এবং তৎকালীন কৃষক আন্দোলনের কৃষক নেতা ও নুরুলদীন এর সহযোদ্ধা লালমনি। এই লালমনির নামেই নামকরণ হয় লালমনিরহাট জেলার।
  • নবাবের কন্যা লালবিবি হলেন মোঘল বাদশাহ দ্বিতীয় আকবরের স্ত্রী। আর তাদের ওরশে জন্মগ্রহণ করেন শেষ মোঘল সম্রাট বাহাদুর শাহ। এই বাহাদুর শাহের মা এবং শেষ নবাব নুর উদ্দিন বাকের জং এর কন্যা লালবিবি সমাধিস্থ হন এই রংপুর জেলায়। ব্রিটিশরা কৃষক আন্দোলনের নেতা এবং নবাবের এ মহীয়সী কন্যাকে গুলি করে হত্যা করে। একই দিনে ভবানী পাঠককেও রাণীর সাথে গুলি করে হত্যা করা হয়।
  • ইংরেজ শাসনামলে রাণী ভবানী (১৭১৬-১৮০২)নাটোরের জমিদার ছিলেন। নবাব নুর উদ্দিন বাকের জং তার এই সংগ্রামে সহায়তা করার জন্য মহারাণী ভবানীকে চিঠি লিখে আমন্ত্রণ জানান। তবে রাণী ভবানী তার এই আমন্ত্রণে সাড়া দেননি।
  • দিনাজপুর জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলার নামকরণ হয় এ অঞ্চলে নবাব তার ঘাঁটি স্থাপন করা থেকেই।

ব্রিটিশদের ঘৃণ্য ইতিহাস বিকৃতি!

বাংলার তথা দিনাজপুর-রংপুর অঞ্চলে অর্থাৎ বৃহত্তর উত্তরবঙ্গ অঞ্চলের বৈধ এবং যোগ্য শাসন কর্তা এই নবাবকে ব্রিটিশ বেনিয়ারা ফকির মজনু শাহ নামে ইতিহাসে ঠাঁই দেয়। শুধু তাই নয় ব্রিটিশরা কখনো প্রচার করেনি যে, নবাব নুর উদ্দিন বাকের জং এর  সাথে তাদের যুদ্ধ হচ্ছে। কেননা এটা প্রচারিত হলে পুরো দেশজুড়ে আরো অধিক সংখ্যক মানুষ বিদ্রোহে জড়িয়ে যেতো। ব্রিটিশ ইতিহাসবিদ ডব্লিউ হান্টারের ভাষায় মজনু শাহ একজন স্বঘোষিত নবাব ছিলো এবং নবাবের মোঘল পরিচয়কেও অস্বীকার করেন তিনি। অথচ এটা সম্পূর্ণ ইতিহাস বিকৃতি।

তৎকালীন দিনাজপুর-রংপুর  অঞ্চলের সব সাধারণ জনগণই নবাবকে গ্রহণ করে নেন তার অসামান্য কৃতিত্ব এবং সাধারন কৃষকদের সাথে একাত্ব প্রকাশের জন্য। আর এই সাধারণ মানুষের শক্তিতে বলীয়ান হয়েই সুদীর্ঘ দুই যুগ ব্রিটিশদের ভীত কাঁপিয়ে তোলেন আমাদের নবাব নুর উদ্দিন মোহাম্মদ বাকের জং।

নবাবের মৃত্যুর পর ব্রিটিশরা সবসময় কড়া নজর রাখতো নবাব নুর উদ্দিন জং এর বংশধরদের উপর। যাতে কখনোই নবাব এবং তার রাজধানীর পরিচয় প্রকাশিত না হয়। ব্রিটিশ আমলের পুরোটা সময় পর্যন্ত এসব নিয়ে কথা বলাটা দন্ডনীয় ছিলো। বৃহত্তর দিনাজপুর-রংপুর এবং আশেপাশের অঞ্চলে গোয়েন্দাদের কড়া নজরদারি চলতো, যাতে কেউ নবাবের ইতিহাস প্রচার না করে। ব্রিটিশরা নবাবের আসল মৃত্যু সাল পর্যন্ত লুকিয়ে রেখেছিলো ৩-৪ বছর পর্যন্ত। নবাব শহীদ হন ১৭৮৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারিতে , কিন্তু ব্রিটিশ ইতিহাসে লিখা হয় ১৭৮৭ সালে নবাবের মৃত্যুর কথা।

নবাব নুর উদ্দিন জং এর বীরত্বপূর্ণ জীবন-সংগ্রাম নিয়ে কয়েকজন ব্রিটিশ বিরোধী সন্ন্যাসী মিলে রচনা করেন ” অজ্ঞাতের ইতিহাস ” নামক একটি বই। কিন্তু ব্রিটিশ শাসক গোষ্ঠি এই বইটির সব কপি খুঁজে খুঁজে বের করে ধ্বংস করে ফেলে।

সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো, ব্রিটিশরা এদেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার পরেও এদেশের ইতিহাস স্বীকৃতি দেয়নি এই শেষ নবাবকে। এখনো ব্রিটিশদের শিখানো “ফকির বিদ্রোহ” হিসেবে অবমূল্যায়ন করা হয় নবাবের ঐ সংগ্রামকে। অথচ ইতিহাস খুঁজলে এটা বুঝা যায়, সাধারণ ফকির বা সন্ন্যাসী দ্বারা কখনো এতোবড় বৃটিশ শাসক শক্তির বিপক্ষে লড়াই করা সম্ভব নয়। একমাত্র রাজশক্তির বলে বলীয়ান কোনো যোগ্য নেতাই ব্রিটিশ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ভারতবর্ষে এরকম সংগ্রাম চালাতে পারেন।

বৃটিশ বিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম প্রাণপুরুষ এই নবাবের বৃটিশ বিরোধী অন্দোলনের মুছে যাওয়া ইতিহাস হায়দার আলী চৌধুরী (নবাবের ৬ষ্ঠ বংশধর) এই  কর্তৃক লেখা হয় ” পলাশী যুদ্ধোত্তর আজাদী সংগ্রামের পাদপীঠ ” নামক একটি  বই। এই বইটি পড়লে বুঝা যায় , ব্রিটিশ বেনিয়ারা অনেক চেষ্টা করেছিলো আমাদের এই শেষ নবাব নুর উদ্দিন বাকের জং এর নাম আমাদের বীরত্বপূর্ণ ইতিহাসকে মুছে ফেলতে।

মসজিদের সদর দরজা বরাবর কবর!

শেষ নবাব নুর উদ্দিন বাকের জং এর মৃত্যুর পর সমগ্র অঞ্চল দখলে চলে আসে ব্রিটিশ শাসকদের হাতে। ব্রিটিশরা তখন বাধ্য করে তাঁর নবনির্মিত মসজিদের সদর দরজা বরাবর তাঁকে কবরস্থ করতে।এবং কবরের জায়গাটিকে সমান করে বিলিন করার জন্য সেখানে তারা বাগান তৈরী করে।

তাঁর ছেলে কামালউদ্দিন পরবর্তীতে মসজিদের কাজ পুরোপুরি সমাপ্ত করেন। কিন্তু তখনো সদর দরজার সামনে নবাবের কবরের উপর দিয়ে হেঁটেই মুসল্লীদের মসজিদে ঢুকতে হতো। ১৮৫৭ সালে তৎকালীন বিখ্যাত আলেম মাওলানা কারামত আলী জৌনপুরী নবাবের কবরের সামনের সদর দরজাটি বন্ধ করতে সক্ষম হয় এবং এই সদর দরজার পাশেই একটা ছোট দরজা নির্মাণ করার ব্যবস্থা করেন। তখন থেকে এই মসজিদের সদর দরজা বন্ধ এবং মুসল্লী এখন এই ছোট দরজা দিয়েই মসজিদে প্রবেশ করেন।

আমাদের সোনালী বীরত্বগাঁথা ইতিহাস থেকে ম্লান হয়ে যাওয়া শেষ  নবাব নুর উদ্দিন মোহাম্মদ বাকের জং। আমাদের দেশে ব্রিটিশদের দেওয়া ”ফকির মজনু শাহ” ব্রীজ নামে একটা স্থাপনা রয়েছে। যদিও  এ নামটি  নবাবের আসল নামের প্রতিনিধিত্ব করছেনা। কারণ নবাবের তো আসল নাম নবাব নুর উদ্দিন বাকের জং। বরং তার আসল নামটি মুছে ফেলতেই ব্রিটিশদের এই ঘৃনিত প্রয়াস।

নবাব নুর উদ্দিন মোহাম্মদ বাকের জংয়ের মতো এমন সাহসী এবং দেশপ্রেমিক যোদ্ধা যে কৃষক আন্দোলন এবং বৃটিশ বিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম প্রাণপুরুষ, তার স্মৃতি রক্ষা করা এবং এই লুকায়িত ইতিহাস সবার সামনে নিয়ে আসার দায়িত্ব  আমাদেরই।

বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব

ইতিহাস বিষয়ে আরো জানতে এখানে ক্লিক্ করুন…

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

istanbul escorthacklink satın alporno izleizmir escorteryaman escortankara escortGaziantep escortonwin girişHacklink satın alTavşanlı escortGiresun escortizmir escortankara escortkayseri escortistanbul escorthacklink satın alporno izleizmir escorteryaman escortankara escortGaziantep escortonwin girişHacklink satın alTavşanlı escortGiresun escortizmir escortankara escortkayseri escort