বাংলাদেশের বিখ্যাত প্রত্নস্থল -০২ (চাকলাপুঞ্জি, কালিয়াকৈর মুটের চালা , লালবাগ দূর্গ, হাজীগঞ্জ দূর্গ, ষাটগম্বুজ মসজিদ)
চাকলাপুঞ্জি
বৃহত্তর সিলেটের হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১০কিলোমাটার উত্তর-পশ্চিমে চন্ডির মাজার বাসস্ট্যান্ডের কাছাকাছি চাকলাপুঞ্জি চা বাগানে ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দে একটি প্রত্নস্থলের সন্ধান পাওয়া গেছে। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা থেকে সড়ক পথে এর দূরত্ব ১৩০ কিলোমিটার। উদ্যানের কাছাকাছি ৯টি চা বাগান আছে। উদ্যানের পশ্চিম দিকে সাতড়ি চা বাগান এবং পূর্ব দিকে চাকলাপুঞ্জি চা বাগান অবস্থিত।

১৯৯৭ সালে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি দল হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাটস্থ চাকলাপুঞ্জি চা বাগানে প্রাগৈতিহাসিক দ্রব্যসমেত একটি অবস্থান চিহ্নিত করে দলটি প্রস্তুরীভূত জীবাশ্ম কাঠের নির্মিত কিছু প্রত্নবস্তুও উদ্ধার করে। সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে রয়েছে প্রায় ২০০রো বেশি গাছপালা। এর মধ্যে শাল, সেগুন, আগর, গর্জন, চাপালিশ, পাম, মেহগনি, কৃষ্ণচূড়া, ডুমুর, জাম, জামরুল, সিধাজারুল, আওয়াল, মালেকাস, ইউক্যালিপটাস, আকাশমনি, বাঁশ, বেত-গাছ ইত্যাদির বিশেষ নাম করা যায়। উদ্যানের অভ্যন্তরভাগে টিপরা পাড়ায় একটি পাহাড়ী উপজাতির ২৪টি পরিবার বসবাস করে। এই ক্রান্তীয় ও মিশ্র চিরহরিৎ পাহাড়ী বনভূমি ভারতীয় উপমহাদেশে এবং উন্দো-চীন অঞ্চলের সংযোগস্থলে অবস্থিত
কালিয়াকৈর মুটের চালা
গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার বোয়ালী ইউনিয়নের ঢোলসমুদ্র এলাকার মুটের চালা এলাকায় পাল আমলের প্রাচীন স্থাপনার সন্ধান পাওয়া গেছে। এটি ১ হাজার বছর আগে পরিকল্পিত জনপদ ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। চলমান প্রত্নতাত্ত্বিক খনন ও গবেষণায় এ পর্যন্ত পাওয়া স্থাপনা জুড়ে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের অধীনে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের তত্ত্বাবধানে কালের আবর্তনে হারানো সংস্কৃতির খুজে বের করার জন্য ওই খনন কাজ চলছে। ওই স্থানে মাটি খননের পর বেড়িয়ে আসছে শতশত বছর আগের প্রাচীন মূল্যবান নিদর্শন।
রাকি রায়ের নেতৃত্বে খনন কাজের ফিল্ড অফিসার হিসেবে কাজ করছেন নাছিম শাহীন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এখানে হাতে কলমে কাজ করছে। এ ছাড়া মাঠ পর্যায়ে ৩০জন কর্মী সরাসরি খনন কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। খননে সুলতানী আমলের পয়সা ও সুলতানী আমলের একটি মসজিদের ধ্বংসাবশেষ। চারিদিকে সীমানা প্রাচীরের নমুনা দেখা যাচ্ছে। চারিদিকের যে সীমানা প্রাচীর পাওয়া গেছে সেখানে মুল দরজার সন্ধান পাওয়া গেছে দক্ষিণে ও পূর্ব দিকে চলাচলের ব্যবস্থা রয়েছে বলে ধারনা করা হচ্ছে। খনন করার পর যে ইট বেরিয়ে আসছে এই অলংকৃত ইটের নকশায় মুসলিম যুগ অথবা সুলতানী যুগের ইট পাথরের গ্লেস দেওয়া ব্যবহারের নমুনাও লক্ষ্য করা গেছে।
অপর দিকে পুকুর ঘাট ও মাঠে চওড়া দেওয়ালের নমুনাও লক্ষ্য করা গেছে। প্রাথমিক ভাবে ধারনা করা হচ্ছে গাজিপুরে যশোদামাধরের শাসন আমলের স্বাক্ষর বহন করছে। খননে বের হওয়া ইট গুলোতে ফুল লতা পাতা, পুতুল ও মুর্তির নকসা দিয়ে কারো কাজ করার নমুনা পাওয়া গেছে। কোথাও কোথাও জ্যামিতিক নকসাও দেখা গেছে। দুটি পাথর মাটির নিচ থেকে বের হয়েছে যেখানে ভাস্কর্য খচিত মুর্তির মত নকসা করা। ফলে এটি একটি মন্দিরের ঘর বলে ধারনা হচ্ছে। জাতীয় ইতিহাস বইগুলোতে এ রাজবাড়ির বিষয়ে কোনো তথ্য নেই এটা একটি কঠিন ব্যাপার ছিল। বাংলাদেশের ইতিহাসে গাজীপুরের কোন ইতিহাস পাঠ্যপুস্তকে নেই। এবার এ সকল কাহিনী পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে।
লালবাগ দূর্গ
ঢাকা শহরের লালবাগ এলাকায় অবস্থিতির কারণে এই প্রত্নস্থানটি লালবাগ কেল্লা নামেই অধিক পরিচিত। চলতি শতকের ষাট থেকে নব্বই দশকে এই দূর্গের অংশবিশেষ কয়েক দফা খনন পরিচালিত হয়েছে সম্রাট আওরঙ্গজেবের পুত্র শাহাজাদা মোহাম্মদ আজম ১৬৭৮ খ্রিঃ এ প্রাসাদ দূর্গ নির্মাণের কাজ শুরু করেন। পরবর্তীতে সুবাদার শায়েস্তা খান কর্তৃক ১৯৮৪ খ্রিঃ এই দূর্গ অসমাপ্ত পরিত্যক্ত হয়।

এই দূর্গের কমপ্লেক্স রয়েছেঃ
(১) পরিবিবির সমাধি।
(২) সুরমা দ্বিতল দরবার হল।
(৩) তিন গম্বুজ বিশিষ্ট একটি মসজিদ।
(৪) একটি পুকুর।
তিনটি সুদৃশ্য তোরন ছাড়াও মূল দূর্গ প্রচীরের দক্ষিণ এ পশ্চিম অংশে মাঝে মাঝে অর্ধ-বৃত্তাকার বুরুজ রয়েছে। এই দূর্গ মোগল আমলের স্থাপত্য কলার নিদর্শন বহন করছে।
পরিবিবির সমাধি
পরিবিবির সমাধি লালবাগ দুর্গে অবস্থিত। এই অনন্য ইমারতটি মোগল সুবাদার শায়েস্তা খানের প্রিয় কন্যা পরিবিবির সমাধি সৌধ হিসেবে পরিচিত। বাংলাদেশের এই একটি মাত্র সমাধিতে মার্বেল পাথর, কষ্টিপাথর ও বিভিন্ন রং এর এক শ্রেণির ফুল পাত শোভিত চাকচিক্যময় টালির সাহায্যে অভ্যন্তরীন নয়টি কক্ষ অলংকৃত করা হয়েছে কক্ষগুলোর ছাদ কারবেল পদ্ধতিতে কষ্টি পাথরের তৈরি। সমাধি সৌধের কেন্দ্রিয় কক্ষের উপর এর কৃত্রিম গম্বুজটি তামার পাত দিয়ে আচ্ছাদিত। এটি ১৬৮৮ এর পূর্বের নির্মিত।

হাজীগঞ্জ দূর্গ
অবস্থান: হাজীগঞ্জ দূর্গটি নারায়ণগঞ্জ শহরের উত্তর-পূর্ব দিকে হাজীগঞ্জ এলাকায় অবস্থিত।
নির্মাণকাল ও নির্মাণের উদ্দেশ্য:
সপ্তদশ শতাব্দীতে ( মোগল আমলে ) হাজীগঞ্জ দুর্গটি নির্মিত হয়েছে। এই দূর্গের পাশ দিয়ে শীতলক্ষ্যা নদীর অবস্থান। তখন নদী পথে আরাকানী ( মগ ) জলদস্যুদের আক্রমন প্রতিহত করার জন্য সম্ভবত এই দূর্গটি নির্মাণ হয়েছিল।

স্থাপত্যিক বর্ননা নিয়ে কিছু কথাঃ
পাঁচ কোণাকরে নির্মিত এই দূর্গের বাহুগুলো এক মাপের নয়। দূর্গের কোনো গুলো অর্ধবৃত্তাকারে নির্মিত। কোণাগুলি কামান বসানোর জন্য বুরুজ নির্মান করা হয়েছিল এবং সেগুলি মোটামুটি এখনও টিকে আছে। দূর্গের দেওয়াল বেশ উচু এবং প্রায় তিন ফুট পুরু। এই বেষ্টনী দেওয়ালের স্থানে স্থানে কামান দাঁড়ানোর জন্য ছিদ্র আছে। আর আছে দেওয়ালের সাথে লাগানভাবে তৈরি কয়েকটি উঁচু বেদী। দূর্গের এক কোণে ইটের তৈরি বড় আকারের একটি চতুষ্কন বেদী আছে। দূর্গের ভেতরে কোন ইমারতের ধ্বংসাবশেষ নেই।
ষাটগম্বুজ মসজিদ
খুলনা বিভাগের বাগেরহাট একটি গুরুত্বপূর্ণ জেলা। এই জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নস্থল হলো ষাটগম্বুজ মসজিদ। বাগেরহাট জেলার দক্ষিনের সুন্দরবনও বঙ্গোপসাগর, পশ্চিমে সাতক্ষীরা জেলা, পূর্বে গোপালগঞ্জ ও পিরোজপুর, উত্তরে খুলনা ও গোপালগঞ্জ, ষাটগম্বুজ মসজিদটি নির্মাণ করেন। মসজিদটির দৈর্ঘ্য ১৬০ ফুট, প্রস্থ ১০৮ ফুট এবং উচ্চতা ১২ ফুট। এটি নাম ষাটগম্বুজ মসজিদ নাম হলেও এর গম্বুজ সংখ্যা ৮১ টি। মসজিদটি সুলতানি আমলের স্থাপত্য শিল্পের অনন্য নির্দশন।
