
ফুটপাতে মমি বিক্রি
ফুটপাতে মমি বিক্রি
‘মমি বিক্রি’, এই কথাটি পড়ে অবাক লাগলেও, এটি একসময় মিশরে খুবই সাধারণ বিষয় ছিল। আর এই মমি বিক্রি হত ফুটপাতে, রাস্তার ধারে কিংবা খোলা বাজারে। খ্রিস্টীয় ১৯ শতকে ধনী ইউরোপীয়ান এবং আমেরিকান ভ্রমনার্থীদের নিকট “ভ্রমণ স্মারক” (tourist souvenirs) রূপে মমি বিক্রি মিশরের প্রায় সর্বত্র হত এবং এটি খুবই সাধারণ বিষয় ছিল। কিছুকাল আগে মিশরে আগত পর্যটকদের জন্য রাস্তার ধারে ফুটপাতে মমি গুলো সাজিয়ে রেখে বিক্রি করা হত। যাতে সৌখিন পর্যটকরা এ মমিগুলো ক্রয় করে নিজেদের দেশে, নিজেদের বাড়িতে নিয়ে যেতে পারেন ঘর সাজাবার জন্য বা ব্যবসার জন্য।
“মমি উন্মোচন” পার্টিঃ
ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়নের মিশর বিজয়ের পর অর্থাৎ ভিক্টোরিয়ান যুগে, ইউরোপ তথা ইউরোপীয়ানদের কাছে মিশর এবং মিশরের ইতিহাসের বন্ধ থাকা দরজা খুলে দেয়া হয়েছিল। সেই সময়ে ইউরোপীয়ান সমাজে মমি কে সম্মানের দৃষ্টিতে দেখা হত না। খ্রিস্টীয় ১৮ শতকে, মিশরের রাস্তার ফুটপাতে, রাস্তার ধারে বা বাজার থেকে কেনা মমি গুলোকে ইউরোপে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে ‘মজার জিনিষ’ বলে সকলের সামনে প্রদর্শন করা হত। এমনকি ইউরোপে এই সময়ে ‘মমি উন্মোচন’ পার্টির আয়োজন পর্যন্ত করা হত। এই ধরণের পার্টিতে অতিথি অভ্যাগতদের সামনে মমির থেকে ব্যান্ডেজ খুলে সেগুলো কে উন্মুক্ত করা হত এবং সেই দৃশ্য পানীয় সহযোগে, হাততালি দিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে উপভোগ করতেন পার্টিতে আমন্ত্রিত ব্যক্তিরা।
মমির নিয়ে ব্যবসাঃ
ইউরোপে শিল্প বিপ্লবের সাথে সাথে মিশর থেকে কিনে নিয়ে যাওয়া মমির অন্য ব্যবহার হওয়াও শুরু হল। মিশর থেকে জাহাজ ভরে মানুষ ও পশুর মমি ব্রিটেন ও জার্মানি তে নিয়ে যাওয়া হত, সেখানে সেগুলি জমির সার রূপে ব্যবহার করা হত। মমির শরীর থেকে ব্যান্ডেজ খুলে, সেই ব্যান্ডেজ আমেরিকায় পাঠানো হত, সেখানে সেগুলি কাগজ তৈরির জন্য ব্যবহৃত হত। বিখ্যাত লেখক মার্ক টোয়াইন তাঁর মিশর ভ্রমণের ডাইরি তে লিখে গিয়েছেন যে, মিশরে মমি কে লোকমটিভের জ্বালানি রূপেও ব্যবহার করা হত।
খ্রিস্টীয় ১৯ শতক এগিয়ে আসার সাথে সাথে, মিশরের মমি কেবলমাত্র ধনী ইউরোপীয় এবং মার্কিন প্রাইভেট সংগ্রাহকদের সংগ্রহের বিষয় বস্তু হয়ে দাঁড়ায়। তাঁরা মিশর ভ্রমণকালে উচ্চ মূল্যে এগুলো ক্রয় করে নিতেন “ভ্রমণ স্মারক” রূপে। যাঁরা আবার একটা আস্ত মমি কিনতে পারতেন না বা পেতেন না, তাঁরা চোরা বাজার থেকে মমির শরীরের বিভিন্ন অংশ যেমন মাথা বা পা বা হাত কিনে নিয়ে নিজের দেশে নিয়ে যেতেন।
মমির জন্য মিশরের ছোট বড় কোনও পিরামিডই ধনী ইউরোপীয় এবং মার্কিনদের লোভের হাত থেকে রক্ষা পায় নি। কেবলমাত্র যে পিরামিডগুলোর দরজা কোনও ভাবেই খোলা সম্ভব হয় নি বা যে পিরামিডগুলো তে অজানা মৃত্যু ফাঁদ ছিল, সেগুলোই লুঠের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছিল। এটাও উল্লেখ্য যে মমির সাথে পিরামিডের ভিতরে থাকা বিপুল ঐশ্বর্য এবং জিনিসপত্রও যথেচ্ছ ভাবে লুঠ করে ইউরোপ ও মার্কিন মুলুকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।
জাল মমিঃ
এই ব্যবসাতেও অবশ্য জালিয়াতি ছিল। ছিল জাল মমির উৎপাত। বিচারে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত আসামির দেহ বা বয়স্ক মানুষের মৃতদেহ অথবা গরীব মানুষের দেহ এবং যারা কোনও জটিল রোগে মারা গিয়েছেন তাঁদের দেহ কিছু অর্থের বিনিময়ে ক্রয় করে, সেই মৃত দেহটাকে শুকানোর জন্য একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য মরুভূমির বালিতে পুঁতে রাখা হত এরপর বিটুমিন দিয়ে স্টাফ করে সেগুলোকে ব্যান্ডেজ জাতীয় পাতলা কাপড় দিয়ে ভালোভাবে মুড়িয়ে তারপরে আবার চড়া রোদে শুকিয়ে প্রাচীন মমি বলে বিদেশি পর্যটকদের কাছে চড়া মূল্যে বিক্রয় করা হত।
(তথ্য সৌজন্যে – ব্রিটিশ লাইব্রেরী, ইউনাইটেড কিংডম।)
ইতিহাস বিষয়ে আরও জানতে এখানে ক্লিক করুন…