বর্তমান বিশ্বে ইন্টারনেট একটি মাইলফলক। অনেক মানুষ এখন ইন্টারনেট থেকে আয় করছেন। ইতোমধ্যেই তারা এই আয়ের মাধ্যমে সচ্ছ্বল। আমাদের দেশেও এখন তা নতুন কিছু নয়। বাংলাদেশেও এখন অনেক ফ্রিল্যান্সার আছেন, যারা ঘরে বসেই ইন্টারনেটে কাজ করে অর্থ আয় করছেন।
কিন্তু, এখনও অনেক Freelancer-দের মধ্যে একটি ভুল বোঝাবুঝি আছে। আমাদের দেশে অনেক লোক ফ্রিল্যান্সিং এর দিকে কম মনোযোগ দেয়।বর্তমানে, আমাদের সমাজ Freelancer-দের সম্পর্কে কিছু নেতিবাচক সমস্যা রয়েছে। আমি আজকের আলোচনায় নতুন ফ্রিল্যান্সারদের প্রশ্ন ও উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব।
ফ্রিল্যান্সিং এর জন্য কি কি যোগ্যতা লাগবে?
অনেকেই পড়ালেখা করেও বিভিন্ন কিছুতেই ব্যর্থ হচ্ছেন। যার দ্বারা বোঝায় যে তারা তাদের ক্যারিয়েরের ব্যাপারে অলস। তাই তারা তা ঠিকমতো সাজাতে পারছেন না।
Freelancing এ অলসতা এবং অযোগ্যতার স্থান নেই। এর জন্য অবশ্যই আপনাকে ডিজিটাল কোনো বিষয়ের মধ্যে ভালো জ্ঞান থাকতে হবে। অলসতা থাকলে চলবে না। যে যত বেশি যোগ্যতা অর্জন করতে পারবে, সে তত এই কাজ থেকে আয় করতে পারবে।
Freelancing এ সফল হতে গেলে অবশ্যই যোগ্যতা থাকতে হবে।
শুধু কি আপওয়ার্ক ব্যবহার করে ফ্রিলান্সিং করতে হবে?
Outsourcing-এ আমরা যে কাজগুলো করে থাকি তার 7% পাওয়া যায় মার্কেটপ্লেসগুলোতে। আমরা যদি ১০০% কাজের মধ্য হতে ৭ % বাদ দেই তাহলে আমাদের হাতে থাকে আরো ৯৩% কাজ যার অর্থাৎ এই ৯৩% কাজ আমরা ইন্টারনেট থেকে পেয়ে থাকবো। এই ৯৩% কাজগুলো প্রায় সবগুলোই মার্কেটপ্লেসের বাইরে হয়ে থাকে।
যারা মনে করেন Freelancing মানেই আপওয়ার্কে কাজ করা তারা একটি ভুল ধারণার মধ্যে আছেন। আপওয়ার্ক ছাড়াও আউটসোর্সিং এর জন্য বিভিন্ন ওয়েবসাইট আছে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ফাইবার, ফ্রিল্যান্সারস, মাইক্রোওয়ার্কারস ক্লিকব্যাংক, অ্যামাজন ইত্যাদি।
ফ্রিল্যান্সিং করতে গেলে কি অল্প কিছু যোগ্যতাই যথেষ্ট?
আসলে Freelancing শুধুমাত্র যোগ্য ব্যক্তিদের জন্য। কারণ, সারাবিশ্বে অনেক ফ্রিল্যান্সার আছে এবং এই Freelancing ওয়েবসাইটগুলোতে যদি কেউ কাউকে দিয়ে তাদের কাজ করাতে চায় তাহলে এই অনেক ফ্রিল্যান্সারদের মধ্য থেকে তারা(Buyer/Client) যে কোন একজন বা দুইজন বা তিনজন বা তাদের ইচ্ছামত মানুষদের বাছাই করে নেন। এক্ষেত্রে, বেশিরভাগ কাজ তারাই পান যাদের যোগ্যতা আছে।
সুতরাং, Freelancing করতে হলে নিজেকে আগে যোগ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। শুধু একটি বিষয়ে জানলে আপানাকে শুধু সেই বিষয় নিয়েই কাজ করতে হবে।
ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য কি অনেক যোগ্যতা থাকতে হয়?
আপনি যদি ফ্রিল্যান্সিং এ নতুন হন এবং পুরনো কোনো ফ্রিল্যান্সারদের দেখেন তাহলে দেখবেন যে তারা আপনার থেকে অনেক উন্নত। এক্সপেরিয়েন্সড ফ্রিল্যান্সারদের চেয়ে নতুনদের যোগ্যতা অনেক কম। কিছু নতুন ফ্রিল্যান্সার ভেবে থাকেন যে তাদের পর্যায়ে পৌঁছানো সম্ভব না। এই ধারণার কারণেই অনেক নতুন Freelancer freelancing থেকে পিছিয়ে পড়েন এবং আশা ছেড়ে দেন।
যারা এই মুহূর্তে সফলভাবে অনলাইনে আয় করছেন তারাও এক সময় খুবই সাধারণ ছিলেন। পরিশ্রম এবং প্রশিক্ষণ এর মাধ্যমে তারা আজকে তাদের এই অবস্থানে এসেছেন। যদি আপনি কাজটি সঠিকভাবে শেখেন এবং তা প্রয়োগ করতে পারেন এবং প্রচুর পরিশ্রম করেন তাহলে আপনি অনলাইনে সফল হতে পারবেন।
ফ্রিল্যান্সিং Part-time নাকি Full-time নেওয়া উচিত?
আমাদের দেশে এখনও অনেকে ফ্রিল্যান্সিংকে চাকরির বিকল্প হিসেবে নিতে চান না । চাকরি বা লেখাপড়ার পাশাপাশি পার্ট টাইম হিসেবেই মানুষ ফ্রিল্যান্সিংকে নিতে চান। আর এই কারনেই Freelancing এর মাধ্যমে আমাদের দেশে যে পরিমাণ আয় করা সম্ভব সেটা বাস্তব হতে পারছে না। ফ্রিল্যান্সিং শুধুমাত্র অতিরিক্ত টাকা আয়ের মাধ্যম না। অন্যান্য দেশগুলোতে যেমন, আমেরিকা , ইংল্যান্ড, ইন্ডিয়া এরকম আরও অনেক বড় বড় দেশগুলোতে মানুষজন চাকরির বিকল্প হিসেবে ফ্রিল্যান্সিংকেই বেছে নিয়েছেন। কারণ, Freelancer হয়ে উন্নত দেশের কোন কোম্পানির হয়ে কাজ করা যায়। আবার তা ঘরে বসেই করা যায়।
আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে, ফ্রিল্যান্সিংকে পার্টটাইম হিসেবে নেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। তার কারণ, এখনও আমাদের দেশে এই কাজ করার মত সম্পুর্ন যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তি খুব কম।
কিন্তু আপনি যদি মনে করেন যে আপনি পারবেন, তাহলে আপনি এই ফ্রিল্যান্সিংকে ফুলটাইম হিসেবে নিতে পারেন। অনেকেই আমাদের দেশে এই ফ্রিল্যান্সিংকে ফুলটাইম হিসেবে নিয়েছেন।
ফ্রিল্যান্সিংয়ের ক্ষেত্রে আয় কি অনিশ্চিত ?
Freelancing হতে প্রাপ্ত চাকরির বেতনের থেকে ২ থেকে ৫ গুণ (কিছু ক্ষেত্রে তারও বেশি) হওয়ার পরেও অনেকেই এই কাজে বাধা দিয়ে থাকে। তার কারণ তারা মনে করেন একসময় ফ্রিল্যান্সিংয়ের আয় বন্ধ হয়ে যেতে পারে । কিন্তু এটি একটি ভুল ধারণা। পৃথিবী যতদিন থাকবে ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজ ততদিন থাকবে। তার কারণ এখানে থাকা মার্কেট /প্রতিষ্ঠানগুলো্তে প্রতিনিয়তই মানুষজনের দরকার পড়ছে। অর্থাৎ কাজ করানোর প্রয়োজন হচ্ছে। কিন্তু সেই অনুযায়ী মানুষজন পাওয়া যাচ্ছে না। তাই ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে তারা তাদের এই কাজগুলো করিয়ে নিচ্ছেন। সুতরাং ফ্রিল্যান্সিংয়ের ক্ষেত্রে আয় অনিশ্চিত নয়।
ফ্রিল্যান্সিং এ কাজ করতে গেলে ইংরেজি জানাটা কি জরুরী?
জ্বি। Freelancing করতে হলে ইংরেজি জানাটা অবশ্যই জরুরি। কারণ, আপনি যদি ভালোমতো ইংরেজি না জানেন তাহলে ফ্রিল্যান্সিংয়ে আপনি ভালো করতে পারবেন না।
ফ্রিল্যান্সাররা বেশিরভাগ কাজই বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে পেয়ে থাকেন। আপনি যদি আপনার ক্লায়েন্টের সাথে ভালো ভাবে যোগাযোগ করতে না পারেন তাহলে তারা আপনাকে কাজটি দিতে চাইবে না। তার কারণ হলো ভাষা। ভাষার ক্ষেত্রে আপনার দুর্বলতা আছে। যার ফলে আপনি তাদেরকে কাজটি ঠিকমতো বুঝিয়ে দিতে পারবেন না। তাই তারা কিছুটা বিরক্ত বোধ করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য ইংরেজি জানতে হবে।
লেখাপড়া না জেনেও ফ্রিল্যান্সিং করা যাবে?
জীবনে ভালো কিছু করতে চাইলে লেখাপড়ার প্রয়োজন অবশ্যই আছে। একজন শিক্ষিত ব্যক্তির জ্ঞানের পরিধি একজন অশিক্ষিত ব্যক্তির চেয়ে অনেক বেশি উন্নত হবে এটাই স্বাভাবিক।
কিন্তু আমাদের মধ্যে একটি ভুল ধারণা আছে এবং তা হল শুধুমাত্র চাকরির জন্য লেখাপড়া করা প্রয়োজন। যা সম্পূর্ণ ভুল।
আপনি যদি লেখাপড়া না জানেন তাহলে আপনি ফ্রিল্যান্সিং এর বিষয় উপযুক্ত প্রশিক্ষণ নিতে পারবেন না। ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য প্রতিনিয়তই প্রশিক্ষণের দরকার হয়। অর্থাৎ আপনাকে প্রতিনিয়তই নতুন কিছু না কিছু শিখতে হবে। শুধুমাত্র কোনো একটি বিষয়ে পারদর্শী হলে চলবে না। এজন্য অবশ্যই আপনাকে লেখাপড়া জানতে হবে ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য।
ট্রেনিং সেন্টারে ফ্রিল্যান্সিং শিখতে হবে?
ট্রেনিং সেন্টারে কোর্স না করলেও Freelancer হওয়া যায়। বর্তমান যুগ ইন্টারনেটের যুগ। আর এখান ইউটিউবসহ বিভিন্ন ব্লগে আপনি প্রচুর ভিডিও টিউটোরিয়াল পাবেন। আপনার যদি ইচ্ছা থাকে তাহলে সেগুলো দেখে দেখে আপনি ঘরে বসেই Freelancing নিয়ে সব কিছু শিখতে পারবেন। আপনি যদি বাঙালি হন তাহলে আপনি বাংলাতেও এই ফ্রিল্যান্সিং শিখতে পারবেন। যা আপনার কাজ শুরু করার জন্য যথেষ্ট । তবে এটা সত্য যে নিজে নিজে সেগুলো পড়ে বা দেখে শিখতে গেলে সময় পরিশ্রম এবং অনেক বেশি লাগবে। যদি একটা কোর্স করে যথাযথ কাজের নির্দেশনা পাওয়া যায় তাহলে সে কাজ করা অনেক সহজ হবে।
ফ্রিল্যান্সিং এর জন্য কি নির্দিষ্ট একটি বিষয়ের শিক্ষার্থী হতে হবে?
আপনি যে বিষয়েই পড়াশোনা করেন না কেন ফ্রিল্যান্সিং সবার জন্য। এর জন্য আপনাকে নির্দিষ্ট কোন বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করতে হবে না। ফ্রিল্যান্সিং এর সাথে একাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ড এর কোন সম্পর্ক নেই। যার ফলে আপনি বিজ্ঞান মানবিক অথবা বাণিজ্য যেই বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করুন আপনি ফ্রিল্যান্সিং এর কাজ করতে পারবেন।
মূল কথা হলো, ফ্রিল্যান্সিংয়ের জন্য আপনাকে অনেক দক্ষ এবং পরিশ্রমী হতে হবে। এসব কিছু করতে পারলেই আপনি ফ্রিল্যান্সিং করে সফল হতে পারবেন।
যারা বর্তমান ইন্টারনেট যুগে এখনও বেকার, তাদের জন্য আমি বলব যে অনলাইন কাজের ক্ষেত্রে ফ্রিল্যান্সিংভিত্তিক কোনো কাজের ট্রেনিং নিয়ে অনলাইন চাকরি খোঁজার চেষ্টা করুন। নিজেকে স্বাবলম্বী হতে দিন।
আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ও পাকিস্তানের অনেক মানুষ আজ ফ্রিল্যান্সিং করে স্বাবলম্বী। এমন নয় যে ফ্রিল্যান্স কাজের ক্ষেত্রে আমাদের দেশ পিছিয়ে রয়েছে। আমাদের দেশেও অনেক তরুণ ফ্রিল্যান্স করে স্বাবলম্বী।
বেকার হওয়ার পরিবর্তে কাজ করতে শিখুন এবং ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হন। আর আল্লাহর ওপর বিশ্বাস রাখুন। সবার জন্য শুভ কামনা।