পৃথিবী থেকে দূরে সরে যাচ্ছে চাঁদ
দূরে সরে যাচ্ছে চাঁদ। তাহলে কি পৃথিবী থেকে চাঁদকে আর দেখাই যাবে না?
চাঁদ-সূর্য-তারা ক্রমাগত গতিশীল। আমরা সবাই জানি পৃথিবীর সহ সব গ্রহ উপগ্রহই নিজ নিজ কক্ষপথে গতিশীল অবস্থায় আছে। প্রায় সাড়ে চার বিলিয়ন বছর আগে চাঁদের উদ্ভব। বিগ ব্যাং থিওরি মতে এক বড় ধরনের বিস্ফোরণের ফলে সৃষ্টি হয়েছে মহাবিশ্বের । সেই গতিশীল বিস্ফোরণের প্রতিফল এখনো বহন করছে সব গ্রহ উপগ্রহ। বিজ্ঞানীদের এক হিসেবে দেখা গেছে সেই সৃষ্টির শুরুতে চাঁদের সঙ্গে পৃথিবীর যে দূরত্ব ছিল এখন আর সেই একই দূরত্বে চাঁদের অবস্থান নেই।
বর্তমানে চাঁদ আগের অবস্থান থেকে ১৮ গুণ দূরে অবস্থান করছে। পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ চাঁদ লক্ষ কোটি বছর ধরে নির্দিষ্ট দূরত্বে পৃথিবীর চারদিকে ঘুরছে এবং ক্রমে দূরে সরে যাচ্ছে চাঁদ। সথে সাথে কমে যাচ্ছে এর ঘূর্ণন গতি, এর থেকে পুরো বিশ্বে ঘটতে পারে আরও বড় বড় ভূমিকম্প । পরিবেশের জন্য হতে পারে মহাবিপর্যয়। এমনকি ধ্বংস হয়ে যেতে পারে পৃথিবী। পৃথিবী নিয়ে এমনই ভয়াবহ তথ্য জানিয়েছেন মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার বিজ্ঞানীরা।
প্রতিবছরই গ্রহের আহ্নিক ও বার্ষিক গতি মন্থর হয়ে যাচ্ছে । এর কারণ হিসেবে বিজ্ঞানীরা বলছেন চাঁদের আকর্ষণই এই পৃথিবীতে যে জোয়ার সৃষ্টি হয় সেটা পৃথিবীর মতোই একই গতিতে ঘোরে, যা একইসঙ্গে পৃথিবীর গতি এবং এর পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখে। কিন্তু এই গতি যখনই চাঁদের কক্ষপথ কে ছাড়িয়ে যায় তখনই চাঁদ একে টেনে ধরার চেষ্টা করে। এ কারণেই মন্থর হয়ে যায় পৃথিবীর গতি। আবার পৃথিবীর গতির ভারসাম্য রাখতে গিয়ে চাঁদের কক্ষপথ কখনো কখনো পৃথিবীর কক্ষপথের সামান্য সামনে চলে আসে চাঁদ তখন পৃথিবীর গতি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে। এটা করতে গিয়ে পৃথিবীর কক্ষপথ থেকে কিঞ্চিৎ সরে যায়।
নাসার সৌর ব্যবস্থা বিষয়ক কর্মকর্তা ম্যাথিও ফ্রাংক বলেন এভাবে প্রতি বছরেই আমাদের গ্রহ থেকে অন্তত দেড় ইঞ্চি করে সরে যাচ্ছে আমাদের একমাত্র উপগ্রহ টি। বিজ্ঞানীরা বলছেন জোয়ারকে চাঁদের কক্ষপথ থেকে এগিয়ে রাখতে কাইনেটিক এনার্জি তথা গতিশক্তি ব্যবহার করে পৃথিবী। যা প্রতিনিয়ত একটু একটু করে ফুরিয়ে যাচ্ছে, পরিণামে এর ফলাফল বিপর্যয় ও করুণ হতে পারে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা । বর্তমানে পেরু থেকে মেক্সিকো, ইরান থেকে জাপান গত কয়েক বছরে একের পর এক বড় বড় ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছে পৃথিবী। কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়ের রজার বিল হ্যাম ও মন্টানা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেবেকা বেন্ডিক তাদের এক গবেষণা পত্রে পৃথিবীর ঘূর্ণন গতির সঙ্গে বিশ্বব্যাপী ভূমিকম্পের একটি সুস্পষ্ট সম্পর্কের যোগসূত্রের কথা তুলে ধরেছেন। তাদের গবেষণা অনুযায়ী বিগত ১০০ বছরের পাঁচটি ঘটনার ক্ষেত্রে দেখা গেছে বছরে সাতমাত্রা বা এর চেয়ে বড় ভূমিকম্পের সংখ্যা ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে আর এর সঙ্গে পৃথিবীর গড় ঘূর্ণন গতি মন্থর হয়ে যাওয়ার সম্পর্ক রয়েছে। এই দুই মার্কিন বিজ্ঞানীর ভবিষ্যদ্বাণী সত্যি হলে পরবর্তী বছরগুলোতে আরো ভয়ঙ্কর ভূমিকম্পের মুখোমুখি হতে চলেছে আমাদের এই পৃথিরী নামের গ্রহটির । পৃথিবীর ঘূর্ণন গতি ধীরে ধীরে কমে যাওয়া, ব্যাপকমাত্রায় ভূগর্ভস্থ শক্তি বিচ্ছুরণ এর জন্য যথেষ্ট । বিল হ্যাম ও বেনডিক তাদের গবেষণাপত্রে এ ব্যাপারে নির্দিষ্ট ব্যাখ্যা দিতে না পারলেও তাদের সন্দেহ পৃথিবীর কেন্দ্রের সামান্য পরিবর্তন এই ধরনের ভূমিকম্পের জন্য দায়ী হতে পারে। দুই বিজ্ঞানী আরো জানিয়েছেন যে পৃথিবী এমুহূর্তে ৫ বছর মেয়াদী উচ্চতর ভূ-কম্প পর্যায়ে প্রবেশ করেছে। বিজ্ঞানীরা এখন পর্যন্ত সঠিকভাবে ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দিতে সফল হননি ফলে বিল হ্যাম ও বেনডিক কথা যে কতটা সত্যি হবে তা আগামী পাঁচ বছরেই বলে দেবে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে আরো পড়তে এখানে ক্লীক করুন…