বুর্জ খলিফাকে ছাড়িয়ে এখন জেদ্দা টাওয়ার
বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ভবন দুবাই অবস্থিত বুর্জ খলিফা। এর উচ্চতা ৮২৮ মিটার। কিন্তু খুব বেশিদিন দুবাই এ রেকর্ড ধরে রাখতে পারবে না। কারণ সৌদি আরবের জেদ্দায় নির্মিত হচ্ছে আরেকটি ভবন, যেটি বুর্জ খালিফাকে ছাড়িয়ে উঠে যাবে আরও অন্তত ১৮০ মিটার। জেদ্দা টাওয়ার বা বুর্জ জেদ্দা, যার নাম প্রথমে প্রস্তাব করা হয়েছিল কিংডম টাওয়ার। মুলত সৌদি আরবের অত্যন্ত উচ্চাভিলাষী ২০ বিলিয়ন ডলারের মেগা প্রজেক্ট এর প্রাথমিক ধাপ এটি। সৌদি আরবের জেদ্দার অদূরে লোহিত সাগরের তীরে যে নতুন কিংডম সিটি বা জেদ্দা ইকোনমিক সিটি প্রকল্প নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে জেদ্দা টাওয়ার থাকবে তার প্রাণকেন্দ্রে। তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত এই প্রকল্পটি সম্পন্ন হতে সময় লাগবে মোট ১০ বছর। জেদ্দা টাওয়ারটি বিশ্বের অন্যতম আকর্ষণীয় মেগা টল টাওয়ার এবং বিশ্বের প্রথম কিলোমিটার টাওয়ার। অর্থাৎ এর উচ্চতা হবে এক কিলোমিটারের চেয়েও বেশি। প্রাথমিকভাবে এক মাইল বা ১.৬ কিলোমিটার উঁচু ভবন বানানোর পরিকল্পনা ছিল কর্তৃপক্ষের কিন্তু ভূপ্রকৃতি অনুকূল না হওয়ায় অন্তত এক কিলোমিটার উঁচু ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয়। জেদ্দা টাওয়ারের নকশা করেছেন মার্কিন স্থপতি এন্ড্রিয়ান স্মিথ। যিনি ইতোপূর্বে বুর্জ খলিফার নকশাও তৈরি করেছিলেন। বিশ্বের সর্বোচ্চ ১১টি ভবনের চারটি মার্কিন স্থপতি এন্ড্রিয়ান স্মিথের পরিকল্পনায় তৈরি। জেদ্দা টাওয়ারটি মূলত ব্যবহৃত হবে আবাসিক হোটেল হিসেবে। প্রায় ২০০ তলার এই ভবনের সবগুলো তলার মোট ক্ষেত্রফল হবে ২লক্ষ ৪৫ হাজার বর্গমিটার। এতে থাকবে ২০০ কক্ষ বিশিষ্ট ফোর সিজেন্স হোটেলের অ্যাপার্টমেন্ট, ১২১ টি সেবা প্রদান ভিত্তিক অ্যাপার্টমেন্ট এবং ৩৬০টি আবাসিক অ্যাপার্টমেন্ট। হোটেলের সর্বোচ্চ তলায় স্থান পাবে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচুতে অবস্থিত পর্যবেক্ষণ গৃহ এবং মানমন্দির।
উপর থেকে দেখতে জেদ্দা টাওয়ার এর আকৃতি অনেকটা ইংরেজি “Y” অক্ষরের মতো। ভবনটির তিন পাশের ধার গুলো এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যে এর বিভিন্ন অংশের উপর সবসময়ই আংশিক ছায়া পড়বে এবং খুব কম অংশই সরাসরি সূর্যের তীব্র আলোর মুখোমুখি হবে। ভবনটির নকশা তৈরি করা হয়েছে মরুভূমির এক ধরনের গাছের পাতার আকৃতি থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে। যার উর্দ্ধগামিতা সৌদি আরবের দ্রুত উন্নয়নশীল ভবিষ্যতকেই নির্দেশ করে এবং পবিত্র মক্কা নগরী প্রবেশ পথ হিসেবে জেদ্দাকে বিশ্বের সামনে বিশেষ ভাবে তুলে ধরে। জেদ্দা টাওয়ারের নিচে এবং আশেপাশের নির্মিত হবে শপিংমল, আবাসিক ও বাণিজ্যিক কেন্দ্র এবং সাধারণ মানুষের বিচরনের জন্য খোলা প্রাঙ্গন। ভবনটির চার পাশে থাকবে কৃত্রিমভাবে তৈরি জলাধার । জেদ্দা টাওয়ার নির্মিত হবে উচ্চ গুণাগুণ সম্পন্ন কংক্রিট এবং স্টীলের সমন্বয়ে। এর ভিত্তির পাইলগুলো একেকটির ব্যাসার্ধ প্রায় ৩মিটার এবং এদের কোনো কোনোটির গভীরতা প্রায় ১০০ মিটার পর্যন্ত। ভবনটির বাহিরে চতুরদিকে থাকবে সম্পূর্ণ কাচের দেয়াল। ভবনটির নির্মাণ সম্পন্ন করার জন্য প্রায় ৮০ হাজার টন স্টিলের প্রয়োজন হবে।
লিফ্ট ব্যবস্থাঃ
জেদ্দা টাওয়ারে মোট ৫৯ টি এলিভেটর এবং বারোটি এস্কেলেটর থাকবে। এলিভেটর গুলোর মধ্যে পাঁচটি হবে দোতলা এলিভেটর। যা ঘণ্টায় ৪৫ কিলোমিটার বেগে যাতায়াত করবে। অপেক্ষাকৃত কম সুউচ্চ ভবনের লিফ্টগুলো এর চেয়ে বেশি গতিতে ভ্রমণ করতে পারলেও জেদ্দা টাওয়ারের ক্ষেত্রে তা সম্ভব হবে না কারণ অতিরিক্ত উচ্চতার কারণে বায়ুর ঘনত্ব হ্রাস পাওয়ায় দ্রুতগতি আরোহীদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। ভবনের কোন লিফ্টই নিচ থেকে একেবারে উপর পর্যন্ত যাবেনা। তিনটি স্কাই লবি দ্বারা লিফ্টগুলোর গন্তব্য চার ভাগে বিভক্ত থাকবে, যেন লিফ্টগুলোকে বহনকারী তারের ওজন সীমা ছাড়িয়ে না যায়। আরোহীদের কে এই এই স্কাই লবিগুলোতে বিরতি নিয়ে নিজেদেরকে এক লিফ্ট থেকে অন্য লিফ্ট এ স্থানান্তর করে অপেক্ষাকৃত উঁচুতলাতে পৌঁছতে হবে।
বুর্জ খলিফার ক্ষেত্রে দেখা গেছে ভবনটি নিজে অর্থনৈতিক ভাবে সফল হয়নি কিন্তু ভবনটি কে উপলক্ষ্য করে নির্মিত এর আশেপাশের শপিংমল হোটেল-রেস্টুরেন্ট, পুরো শহরটি অর্থনৈতিকভাবে ব্যাপক লাভবান হয়েছে। জেদ্দা টাওয়ার নির্মাণ এর পেছনেও নির্মাতাদের উদ্দেশ্য একই রকম। ভবনের স্থপতি এন্ড্রিয়ান স্মিথ বলেন তাঁরা আশা করছেন জেদ্দা টাওয়ার নির্মাণ সম্পন্ন হলে বছরে অন্তত ৩০ লাখ পর্যটক এখানে ভ্রমণ করতে আসবে। তুলনামূলকভাবে রক্ষণশীল হওয়ায় সৌদি আরবের ধ্বনি নাগরিকরা বার্ষিক ছুটি উপভোগ করার জন্য ইউরোপ-আমেরিকা বা অন্যান্য আরব রাষ্ট্রে ভ্রমণ করে। জেদ্দা ইকোনমিক কোম্পানির সিইও মুনিব মোহাম্মদ জানান ভবনটি নির্মিত হলে আশা করা যায় সৌদি নাগরিকদের বিদেশে যাওয়ার প্রয়োজন পড়বে না ফলে দেশের অর্থ দেশে থেকে যাবে ।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে জানতে এখানে ক্লিক্ করুন…