
ভারত বাংলাদেশ ছিটমহল
ছিটমহল (Enclave) কি?
ছিটমহল এমন ভূখণ্ডকে বোঝায় যা একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডের অভ্যন্তরে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় অবস্থিত অন্য কোনো স্বাধীন রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত এলাকা। বিশ্বের অনেক রাষ্ট্রের অভ্যন্তরেই এমন অন্য রাষ্ট্রের ছিটমহল রয়েছে।কুচবিহার রাজ্যের কোচ রাজার জমিদারির কিছু অংশ রাজ্যের বাইরের বিভিন্ন থানা পঞ্চগড়, ডিমলা, দেবীগঞ্জ, পাটগ্ৰাম, হাতিবন্ধা, লালমনিরহাট, ফুলবাড়ী ও ভরূঙ্গামারিতে অবস্থিত ছিল। ভারত ভাগের পর ওই আট থানা পূর্ব পাকিস্তানে যুক্ত হয়। আর কুচবিহার একসাথে হয় পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে। ফলে ভারতের কিছু ভূখণ্ড বাংলাদেশে আসে। আর বাংলাদেশের কিছু ভূখণ্ড যায় ভারতে। এই ভূমিগুলোই হচ্ছে ছিটমহল।মোট ১৬২ টি ছিটমহলের মধ্যে ১১১টি ভারতের ছিটমহল বাংলাদেশে আর ৫১টি বাংলাদেশের ছিটমহল ভারতের দখলে আছে।
মনে রাখার সহজ উপায়ঃ
ভারতের ছিটমহলগুলো বাংলাদেশের যে সকল জেলায় অবস্থিত- ( কুলাপনী ) , কু- কুড়িগ্ৰাম, লা- লালমনিরহাট, প- পঞ্চগড়, নী- নীলফামারী।
ছিটমহলে বসবাসকারী জনসংখ্যা সংখ্যা কত?
ছিটমহলে বসবাসকারী জনসংখ্যা সংখ্যা ৫১ হাজার। সম্প্রতিক ( ২০১১ ) জনগণনা অনুযায়ী ভারতের ছিটমহলে বসবাসরত লোকসংখ্যা ৩৭ হাজার এবং বাংলাদেশের ছিটমহলের লোকসংখ্যা ১৪ হাজার। ২৪২৬৮ একর ভূমি নিয়ে দুই দেশের ছিটমহল। তার মধ্যে ভারতের ১৭ হাজার ১৫৮ একর। বাংলাদেশের ছিটমহলের জমির পরিমাণ ৭ হাজার ১১০ একর।
দহগ্ৰাম-আঙ্গুরপোতা ছিটমহল
১৯৭২ সালে ইন্দিরা-মুজিব চুক্তি অনুযায়ী দহগ্ৰাম আঙ্গুরপোত বাংলাদেশের একটি ছিটমহলে পরিণত হয়। দহগ্ৰাম-আঙ্গুরপোত লালমনিরহাট জেলার পাটগ্ৰাম উপজেলার একটি ছিটমহল। ছিটমহলটির আয়তন ৩৫ বর্গমাইল। এই ছিটমহলের সাথে যোগাযোগের জন্য ( তিন বিঘা করিডোর ) ব্যবহৃত হয়। ১৯৯২ সালের ২৬ জুন ভারত বাংলাদেশের জন্য ( তিনবিঘা করিডোর ) খুলে দেয়। তিস্তা নদীর তীরে অবস্থিত তিনবিঘা করিডোরের মাপ ১৭৮ মিটার × ৮৫ মিটার। উল্লেখ্য ১৯৪৭ সালে গঠিত @(রডকিল্ফ) কমিশন জলপাইগুড়ি জেলার কয়েকটি থানা ভারতকে এবং কয়েকটি পাকিস্তানকে প্রদাধ করে। পরবর্তীতে নেহেরু-নুন ঘোষণায় বেরুবাড়ি ভারতকে এবং দহগ্ৰাম আঙ্গুরপোত পাকিস্তানকে দেয়ার সিদ্ধান্ত হলেও মামলার কারণে তা বাস্তবায়িত হয়নি। মশালডাঙ্গা ছিটমহল : কুড়িগ্রাম জেলায় অবস্থিত।
ছিটমহলবাসীদের নতুন পরিচয় হয়েছিলো যেভাবে
১৯৪৭ সালের মে মাসে বাংলাদেশের তখনকার প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত চুক্তি সই করেন। ওই বছরই বাংলাদেশের সংসদ চুক্তিটি অনুসমর্থন করলেও ভারত তা করতে চায়নি। ফলে দুই দেশের সীমান্ত সমস্যা অমীমাংসিত থেকে যায়। এবং দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর গত মে ( ২০১৫ ) ভারতের রাজ্যসভায় ও লোকসভায় ১০০তম সংবিধান সংশোধনী বিলে সীমান্ত চুক্তিটি পাস হয়। ফলে বাংলাদেশে থাকা ভারতের ১১১টি ছিটমহল – ( আয়তন ১৭ হাজার ১৫৮ একর ও ভারতের মধ্যে থাকা বাংলাদেশের ৫১ টি ছিটমহল ) ( আয়তন ৭ হাজার ১১০ একর ) বিনিময় ও অপদখলীয় জমির হস্তান্তরে আর কোনো বাধা রইল না। তাছাড়া অমীমাংসিত ৬.১ কিলোমিটার সীমান্ত চিহ্নিত হলে অবিলম্বে চুক্তি বাস্তবায়ন সম্পন্ন হবে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে নতুন ভূখণ্ড হিসেবে যোগ হওয়া ছিটমহলগুলোর ল্যান্ড রেকর্ড ( দলিল ) হস্তান্তর করা হয় ১০ আগস্ট, ২০১৫ ইং তারিখে।
কতোগুলো ছিটমহল বিনিময় হয়েছিলো?
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার ১৬২ টি ছিটমহলের বিনিময় কার্যকর হয়। ৩১ জুলাই ২০১৫ মধ্যরাতে। এর ফলে দীর্ঘ ৬৮ বছরের বন্দী জীবন থেকে মুক্তি পায়। ছিটমহলের ৫০ হাজারের অধিক বাসিন্দা। চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ লাভ করে ভারতের ১১টি ছিটমহল এবং ভারত লাভ করে বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল।
ইতিহাস বিষয়ে আরো জানতে এখানে ক্লিক করুণ…