
চিপস খেলে বাড়ছে ক্যান্সারের ঝুঁকি
চিপস খেলে বাড়ছে ক্যান্সারের ঝুঁকি
বাজারে বিভিন্ন ব্রান্ডের বিভিন্ন মুখরোচক স্বাদে পটেটো চিপস পাওয়া যায়। শিশুদের এই মুখরোচক পটেটো চিপস্ খাওয়ার ঝোঁক বেশি। আমরাও শিশুদের হাতে হরহামশাই চিপস্ তুলে দেই। আর চিপস পেয়ে বাচ্চার মুখের হাসি দেখে আপনার-আমার মন খুশি হয়। কিন্তু আপনি জানেন কী– বাজারে প্রচলিত মুখরোচক এই চিপসের মধ্যে রয়েছে এমন এক প্রকারের রাসায়নিক উপাদান, যা ক্যান্সার, ডায়বেটিস, উচ্চ রক্তচাপ সহ নানান জটিল মারণ রোগের সৃষ্টি করতে পারে। সম্প্রতি “সুইডিশ ন্যাশনাল ফুড অথরিটি” র একটি গবেষণায় এমন একটি ভয়ংকর তথ্য সামনে এসেছে। আর এইটা যে শিশুর ভবিষ্যতে কি পরিমান স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ায় সেটা জানলে আপনি শিউরে উঠবেন!
এবার আসুন জেনে নিই এই স্বাদের জিনিস চিপস এ স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণঃ
আপনি জানেন কি “এক প্যাকেট চিপস কেনা আর টাকা দিয়ে বাতাস কেনা সমান কথা” । নাইট্রোজেন গ্যাস দিয়ে চিপসের প্যাকেট ফুলিয়ে রাখাকে Slack Filling বলে। আর দুইটি কারনে প্যাকেটের ভিতরে নাইট্রোজেন গ্যাস দেয়া হয় প্রথম কারণ বাইরের চাপে যেন চিপস না ভেঙে যায়। আর দ্বিতীয়তঃ চিপস্ দীর্ঘদিন মচমচে রাখা।
বাংলাদেশে ১৯৯০ সালে প্রথম আলুর চিপস বানানো শুরু হয়। আর মাত্র ৩০ বছরে বাংলাদেশে আলুর চিপস বিপননের শিখরে অবস্থান নিয়েছে। ১৮৫৩ সালে আমেরিকায় আকস্মিক ভাবে আলুর চিপস আবিষ্কৃত হয়।
এখন জেনে নিই কেনো এই মজাদার আলুর চিপস আমাদের স্বাস্থ্য ঝুকি মারাত্বক ভাবে বাড়িয়ে দেয়।
- এক গবেষনায় দেখা গেছে বাংলাদেশে ৩০ বছর বয়সের উপরে ৩০% এবং ৫০ বছরের বয়সের উপরে প্রায় ৬৫% মানুষ উচ্চ রক্তচাপ রোগে ভূগছেন। এই হিসেবে বাংলাদেশে কয়েক কোটি মানুষ হাই ব্লাড প্রেশার বা উচ্চ রক্তচাপ রোগে ভূগছেন। যদিও ডায়াগনোসিস হয় মাত্র ১০% এর কম।
- আমরা জানি কুড়কুড়ে মজাদার চিপসের প্রতি এক আউন্সে সোডিয়াম (Na) থাকে প্রায় ১৮০-২০০ মিলিগ্রাম এবং তা নিম্নমানের সোডিয়াম ক্লোরাইড (NaCl) যা শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকারক।
- চিপসের সাথে থাকে টেস্টিং সল্ট। এই টেস্টিং সল্ট খাবারকে আরো মজাদার করে তোলে। টেস্টিংসল্ট এর রাসায়নিক নাম মনোসোডিয়াম গ্লুটামেট। সংকেত {HOOC-(-CH2)2- CH(NH2)- COONa}। বিগত কয়েক দশক ধরেই মনোসোডিয়াম গ্লুটামেটকে (এমএসজি) স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বলে ধরা হয়। কিন্তু প্রতিদিন আমাদের অজান্তে উচ্চ হারে শরীরে লবণ প্রবেশ করছে।। এই লবন জীবনের শুরু থেকেই আপনার Renin Angiotensin system(RAS) রেনিন অ্যাঞ্জিওটেনসিন সিস্টেম কে উত্তেজিত করে। রেনিন – অ্যাঞ্জিওটেনসিন সিস্টেম (আরএএস ), বা রেনিন-অ্যাঞ্জিওটেনসিন অ্যালডোস্টেরন সিস্টেম (আরএএএস ),একটি হরমোনাল প্রক্রিয়া যা ব্লাড প্রেসার বা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। এই রেনিন অ্যাঞ্জিওটেনসিন সিস্টেম (আরএএস ) যদি অস্বাভাবিকভাবে সক্রিয় থাকে,তবে রক্তচাপ খুব বেশি হবে এবং শুরু হয়ে যাবে হাই প্রেশার বা উচ্চ রক্তচাপ।
- আলুর চিপসে বা চিপস জাতীয় খাবারে যেহেতু হাই ক্যালরির আলু বা কার্বোহাইড্রেট থাকে। তাই তারা শরীরে সহজেই জমা হতে পারে। সেই জমার ফলে খুব দ্রুত ওজন বাড়তে থাকে। সাথে সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ে চর্বিও। আর রক্তনালীতে সেই চর্বি জমা হয় । হার্টের রক্তনালীর গায়ে সেই চর্বি জমা হয়ে রক্ত প্রবাহ এক সময় বন্ধ হয়ে যায় ফলে হার্ট এটাক হয়। আর ব্রেইনের রক্তনালী বন্ধ হলে স্ট্রোক হয় (Ischemic stroke)। আর সৃষ্ট হাই প্রেশারে রক্তনালী ছিড়েও যেতে পারে। তাতে হবে Hemorrhagic stroke।
- হাই ক্যালরি influence এ বার বার ইনসুলিনের বেটা সেল ধ্বংসও চলে পাশাপাশি। এক সময় ডায়াবেটিস রোগ ধরা পড়ে । এছাড়াও মনোসোডিয়াম গ্লুটামেট শরীরে ক্যান্সার তৈরির ব্যপারে কাজ করে।
তাই বাজারে প্রচলিত মুখরোচক এই চিপস শিশুদের সাথে সাথে বড়দের কাওয়া মানেই ভাবষ্যতে তার শরীরে ডায়াবেটিস, হাই প্রেশার বা উচ্চ রক্তচাপ, স্থুলতা, ক্যান্সার সহ নানান জটিল রোগের বীজ বপন করা।
স্বাস্থ্য বিষয়ক আরো তথ্য জানতে এখানে ক্লিক্ করুন…