ইংরেজি বা গ্রেগরিয়ান ক্যালেণ্ডার
History

যেভাবে এলো ইংরেজি ক্যালেণ্ডার

Pathokia 

যেভাবে এলো ইংরেজি ক্যালেণ্ডার

গ্রেগরিয়ান ক্যালেণ্ডার বলতে সাধারনত আমরা সবাই জানি ইংরেজি সাল বা খ্রিস্টাব্দকে । আমরা ইংরেজি বর্ষ পালন করি তা গ্রেগরিয়ান ক্যালেণ্ডার অনুযায়ী। একটি সৌর বছরকে গ্রেগরিয়ান বলা হয়। বর্তমানে আমরা যে ইংরেজী ক্যালেণ্ডারটি দেখছি তা এ পৌঁছাতে কয়েকশো বছর সময় লেগেছে। নানান গবেষনা মূলক পরিবর্তন ও পরিমার্জনের ফল আজকের ক্যালেণ্ডার।এই গ্রেগরিয়ান ক্যালেণ্ডারকে ইংরেজি ক্যালেণ্ডার নামে আমাদের কাছে বেশী পরিচিত।

ক্যালেণ্ডার ব্যবহার শুরুঃ

জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা পরীক্ষানিরীক্ষা করে এই সিদ্ধান্তে এসেছেন যে, খ্রিস্টপূর্ব ৪২৩৬ অব্দ থেকে ক্যালেণ্ডার ব্যবহার শুরু হয়।ইউরোপকে বলা হয় শিল্প-সাহিত্য, জ্ঞান-বিজ্ঞানের স্বর্গ। সভ্যতার সব গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার কিন্তু তাঁরাই করেছেন। আর এদিক দিয়ে এগিয়ে ছিল গ্রিক ও রোমানরা।১৫৮২ খ্রিস্টাব্দের ৪ঠা অক্টোবর আজকের প্রচলিত ক্যালেণ্ডার অর্থাৎ গ্রেগরিয়ান ক্যালেণ্ডার পোপ গ্রেগরি দ্বাদশ দ্বারা প্রবর্তিত হয়েছিল।

ক্যালেণ্ডারে দিনের হিসাব কিভাবে এলো?

  • এই ক্যালেণ্ডার তৈরীর আসল কৃতিত্ব রোমানদের। এই ক্যালেণ্ডার আবার গ্রীকদের থেকে নেওয়া। গ্রীকরা বছরে ৩০৪ দিন হিসেবে চলতেন। তা আবার ১০ মাসে ভাগ করা ছিল। মার্চ মাস থেকে এই ক্যালেণ্ডারের মাস শুরু হত। আর এ নামটি এসেছে রোমান যুদ্ধ ও শস্যের দেবতা ‘মার্স’-এর নামে।
  • পরবর্তিতে রোমানরা এ ক্যালেণ্ডারে আরো দুটি বাড়তি মাস যথাক্রমে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি যোগ করেন অর্থাৎ ১১ ও ১২ নম্বর মাস মানে বছরের শেষ দুটি মাস হিসেবে। এরপর জুলিয়াস সিজার এই দুটিকে মাসকে বছরের প্রথম দুই মাস হিসাবে নিয়ে যান। এটিকে তাই জুলিয়ান ক্যালেণ্ডারও বলা হয়।
  • ‘30 days in September, April, June and November…’ এই ছোট্ট কবিতাটা ছোটবেলায় আমরা সবাই শিখেছি। জুলিয়ান ক্যালেণ্ডারেও মার্চ, মে কুইন্টিলিস ও অক্টোবর মাসের দিন সংখ্যা ছিল ৩১ এবং জানুয়ারি ও সেক্সটিনিস মাসের সঙ্গে দুইদিন যুক্ত করে দিন সংখ্যা করা হয় ৩১৷ ফেব্রুয়ারি মাস গণনা হতে থাকে ২৮ দিনে। পরবর্তীতে জুলিয়াস সিজারের নামানুসারে প্রাচীন কুইন্টিলিস মাসের নাম করা হয় জুলাই এবং তাঁর পুত্র অগাস্টাস সিজারের নামানুসারে সেক্সটিনিস মাসের নাম দেওয়া হয় অগাস্ট। এই দুই সম্রাটই তাঁদের নামের মাসটিকে ৩১ দিনের করার নির্দেশ দেন। ফেব্রুয়ারি মাস থেকে একদিন কেটে আগস্টের সাথে অতিরিক্ত একদিন যোগ করে ৩১ বানিয়ে দেওয়া হয়। আর সে থেকে ফেব্রুয়ারি মাস গননা করা হয় ২৮ দিনে।
  • জানুয়ারি নাম এসেছে প্রাচীন দেবতা ‘জানুস’ নাম থেকে। তিনি দ্বার-রক্ষার দেবতা। দেবতার পুজো করে নতুন বছরে পা দেওয়া। এই দেবতার দুই মাথা। বলা হয় এক মাথা থাকে অতীতের দিকে আর অন্য মাথা ভবিষ্যতের দিকে। ফেব্রয়ারি শব্দটির অর্থ ‘শুদ্ধ করা’। সব শুদ্ধ করে নতুন বছরে আসার জন্য, বছরের শেষ মাস হিসেবে রাখা হয়েছিল প্রথমে।
  • এপ্রিল মাস এসেছে প্রেমের দেবী ভেনাসের নাম থেকে। ভেনাস এর গ্রীক নাম ‘আ্যাফ্রেডাইটি’। যা থেকে এসেছে এপ্রিল। মে মাস এসেছে ‘মায়া’ নাম থেকে। গ্রীক পুরান অনুসারে “মায়া” হলেন পৃথিবী ধারণকারী অ্যাটলাস এর কন্যা। গ্রীক দেবরাজ জুপিটারের রাণী ‘জুনো’-র নাম থেকে এসেছে “জুন” মাসের নাম।
  • এরপর একে একে Septem- সপ্তম, Octo- অষ্টম, Novem- নবম, Dsecem- দশম হিসেবে মাসগুলির নামকরণ হয়। যেহেতু ১০ মাসে ভাবা হত বছর। তাই এখানেই শেষ ছিল পুরোনো ক্যালেণ্ডার। মাসের স্থান পরিবর্তন হলেও নামগুলি এভাবেই চলে আসছে ২০০০ বছর ধরে।

তবে এখনও সারাবিশ্বে প্রায় ৪০ ধরণের ভিন্ন ভিন্ন ক্যালেণ্ডার ব্যবহার করা হচ্ছে। যেমন: উত্তর-পূর্ব আফ্রিকার প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্র ইথিওপিয়ার ক্যালেণ্ডার অনুযায়ী বছর পূর্ণ হয় ১৩ মাসে!

কোন কিছুই নির্ভুল নয়। যদিও গ্রেগরিয়ান রীতির ক্যালেণ্ডার নিয়ে আমাদের কোন সমস্যা হয় না, তথাপি গ্রেগরিয়ান ব্যবস্থাতেও ছোট্ট একটা সমস্যা থেকে গেছে। গ্রেগরিয়ান বছর মূল সৌর বছরের চেয়ে প্রায় ২৬-২৭ সেকেণ্ড লম্বা। অর্থাৎ প্রতি ৩২৩৬ বছরে প্রায় ১ দিনের হিসাব ওলটপালট হবে এ ক্যালেণ্ডারে। অবশ্য ৪৯০৯ সালের আগে আমরা নিশ্চিন্তে এ গ্রেগরিয়ান ক্যালেণ্ডার ব্যবহারকরতে পারি।

আমরা যে বাংলা ক্যালেণ্ডার দেখে ১লা বৈশাখ পালন করি তার প্রবর্তন করেছিলেন সম্রাট আকবর।

ইতিহাস বিষয়ে  আরো জানতে আগ্রহী হলে এখানে ক্লিক্ করুন…

Recommended Posts

বাংলাদেশের ঐতিহাসিক মসজিদ
World Heritage Bangladesh

ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন মসজিদ

মুসলমানদের তথা মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের পবিত্র উপসনালয় মসজিদ। বাংলাদেশ মুসলিম সংখ্যা গরিষ্ঠ দেশ হলেও এখানকার ইসলামের ইতিহাস তেমন পুরাতন নয়। বাংলাদেশে কিছু প্রাচীন মসজিদ ছাড়া মোঘল আমলের পূর্বের প্রায় সকল প্রাচীন মসজিদ ই ধ্বংস হয়ে গেছে। আজ আমরা তেমনই কিছু ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন মসজিদ সম্পর্কে জানবো। সিংগাইর মসজিদঃ মধ্যযুগীয় এই সিংগাইর মসজিদটি ষাটগম্বুজ মসজিদের দক্ষিণ-পূর্ব কোনে অবসিহত। […]

Pathokia 

গেঁটেবাত থেকে মুক্তির উপায়

গেঁটেবাত থেকে মুক্তির উপায় শতাধিক প্রকারের বাতরোগের মধ্যে রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস বা গেঁটেবাত অন্যতম। সাধারণত বয়স্করা এ রোগে আক্রান্ত হয়।কম বয়সী ছেলেমেয়েদের বেলায় গিঁটে ব্যথা বা যন্ত্রনা হওয়া রিউমেটিক ফিভার বা বাতজ্বর ( Rheumatic Fever ) জাতীয় অন্য রোগের লক্ষণ হতে পারে। মানব শরীরে রক্তের সঙ্গে ইউরিক অ্যাসিড (Uric Acid) নামে এক ধরনের উপাদান থাকে, যার […]

Pathokia 
Artimis:NASA’s Mega Moon Rocket
Science and Technology

আর্টেমিস : আবারও চাঁদের বুকে মানুষ

আর্টেমিস :আবারও চাঁদের বুকে মানুষ Artimis:NASA’s Mega Moon Rocket দীর্ঘ পাঁচ দশক পর আবারও চাঁদের বুকে মানুষ পাঠানোর অভিযানে নাসা। তিন ধাপের মিশনে মনুষ্যবিহীন প্রথম রকেট টি ২৯ আগস্ট যাওয়ার কথা ছিল। আর শেষ ধাপে পাঠানোর কথা ছিল মানুষ। এর মাধ্যমে শুরু হতে যাচ্ছিল বহুল প্রতীক্ষিত আর্টেমিস যুগের। ফ্লোরিডার কেপ কেনেডি স্পেস সেন্টারে (Kennedy Space […]

Pathokia