Science and Technology

ক্লাউড কম্পিউটিং কি

Pathokia 

ক্লাউড কম্পিউটিং  বর্তমানে বিশ্বে জনপ্রিয় প্রক্রিয়া। যতদিন যাচ্ছে ততোই ক্লাউড কম্পিউটিং এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে। কারণ এটি একটি ডিজিটাল সেবা আর এর জন্যই মানুষের অর্থের সাশ্রয় হচ্ছে। তাই মানুষ ক্লাউড কম্পিউটিং কে ব্যবহার হয়ে লাভবান হচ্ছে।

১৯৬০ সালে জন ম্যাক ক্যার্থি ক্লাউড কম্পিউটিং সম্পর্কে মতামত দেন এভাবে, ( কম্পিউটেশন একদিন গঠিত হবে পাবলিক ইউটিলিটি হিসেবে )। তবে প্রকৃতপক্ষে এ ধারণা ভিত্তি লাভ করেছে ১৯৯০ সালের দিকে। ৯০ এর দশকের শেষে বড় বড় কোম্পানি ইন্টারনেটে ব্যবসার আশায় বিশাল বিনিয়োগ করে ডেটা সেন্টার আর নেটওয়ার্কে। ২০০০ সাল নাগাদ হঠাৎ করে পুরা ব্যবসাটায় ধসে যায়, ফলে অনেকে দেউলিয়া হয়ে পড়ে।

তাদের ডেটা সেন্টারের মত্রা ৫% এর মতো ব্যবহৃত হচ্ছিল এবং বাকিটা সময়ে সিস্টেম অলস হয়ে বসে থাকতো। ইন্টারনেটের মাধ্যমে ঘণ্টা হিসেবে ভাড়া দিয়ে অলস বসে থাকা কম্পিউটারগুলোকে কাজে লাগানোর বুদ্ধি থেকেই শুরু হয় ক্লাউড কম্পিউটিং যুগের। ২০০৫ সাল থেকে আমাজন ডট কম ইলাস্টিক কম্পিউট ক্লাউড বা EC2 শুরু করে। এর পর আর পেছনে তাকাতে হয়নি ক্লাউড কম্পিউটিংকে। আইবিএম, মাইক্রোসফট, গুগল থেকে শুরু করে প্রচুর কোম্পানি এখন ক্লাউড কম্পিউটিং ব্যবসার সাথে জড়িত।

ক্লাউডের মডেল ( Model of Cloud Computing )

ক্লাউডকে ৪ ভাগে ভাগ করা যায়। যথা :

  • Infrastructure-as-a-Service ( IaaS ) বা অবকাঠামোগত সেবা দেওয়া হয়ে থাকে।
  • Platform-as-a-Service ( PaaS ) বা প্ল্যাটফর্মভিত্তিক সেবা দেওয়া হয়ে থাকে।
  • Software-as-a-Service ( SaaS ) বা সফটওয়্যার সেবা দেওয়া হয়ে থাকে।
  • IaaS: Infrastructure-as-a-Service বা অবকাঠামোগত সেবা দেওয়া হয়ে থাকে।

অবকাঠামো ভাড়া দেয়ার সার্ভিস। যেমন, আমাজন ইলাস্টিক কম্পিউট ক্লাউড ( EC2 ) এর উদাহরণ। EC2-তে ডেটা সেন্টারের প্রতি সার্ভারে ১ থেকে ৮ টি ভার্চুয়াল মেশিন চলে, ক্লায়েন্টরা এগুলো ভাড়া নেন। ভার্চুয়াল মেশিনে নিজের ইচ্ছেমতো অপারেটিং সিস্টেম বসানো চলে। এতে সুবিধা হলো, সবকিছু ইউজার নিজে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। আর অসুবিধা হলো, সবকিছুর ব্যবস্থা ইউজারকে নিজেকেই করতে হয়।

PaaS : Platform as a Service ( প্ল্যাটফর্ম ভিত্তিক সেবা ) 

এখানে সরাসরি ভার্চুয়াল মেশিন ভাড়া না দিয়ে ভাড়া দেয়া হয় প্ল্যাটফর্ম, যার উপরে এ্যাপ্লিকেশন তৈরি করতে পারেন ইউজারেরা। যেমন- গুগলের অ্যাপএঞ্জিন এর উদাহরণ। এ সার্ভিস ব্যবহার করলে গুগল তাদের এসিআই ব্যবহার করতে দেবে, সেটার অ্যাপ্লিকেশন বানাতে পারবে।এ অ্যাপ্লিকেশন চলবে গুগলের ক্লাউডে।

SaaS : Software as a Service ( সফটওয়্যার সেবা )

সফটওয়্যার এজ এ সার্ভিস হলো ক্লাউডভিত্তিক এমন একটা সেবা, যেখানে ইউজারের ক্লাউডের উপরে চলছে এমন রেডিমেইভ সফটওয়্যার ব্যবহার করতে পারবে। যেমন, Google Docs। গুগল ডক দিয়ে মাইক্রোসফট অফিসের প্রায় সব কাজই করা যায় ( ডকুমেন্ট, স্পেডশিট, প্রেজেন্টেশন )।

ক্লাউডের ডিপ্লয়মেন্ট মডেলঃ

ক্লাউডের ব্যবহারকারী কারা, তার ওপরে ভিত্তি করে কয়েক রকমের মডেল চালু আছে। নিচে এগুলোর বর্ণনা দেয়া হলো।

পাবলিক ক্লাউড ( Public Cloud )

পাবলিক ক্লাউড হলো এমন ক্লাউড যা সাধারণ জনগণের জন্য উন্মুক্ত। যে টাকা দেবে, সেই সার্ভিস পাবে, এমন ক্লাউডকে বলা হয় পাবলিক ক্লাউড। যেমন- আমাজনের EC2 । এসব ক্লাউডের সুবিধা আছে। তাহলো যে কেউ এর সেবা গ্রহণ করতে পারে। কিন্তু অসুবিধা ও আছে। তাহলো একই জায়গায় একাধিক ক্লায়েন্টের আনাগোনার ফলে নিরাপত্তার সমস্যা হয়ে থাকে।

কমিউনিটি ক্লাউড ( Community Cloud )

কমিউনিটি ক্লাউডও শেয়ার করা হয় অনেকের মাঝে, পাবলিক ক্লাউডের মতো যে টাকা দেয়, সেই সার্ভিস পায়। তবে পার্থক্য হলো একটি ক্ষুদ্রতর কমিউনিটির লোকজনই এর সুবিধা নিতে পারে। ধরা যাক, ঢাকার কল্যাণপুর কলোনির লোকজনের চাহিদা মেটানোর জন্য একটা ক্লাউড বসানো হলো, কেবল কল্যাণপুর কলোনিবাসীই এর সেবা নিতে পারবে। তাহলে সেটা পাবলিক ক্লাউড না হয়ে হবে প্রাইভেট ক্লাউড। কারণ এক্ষেত্রে শুধুমাত্র ঐ এলাকার লোকজনেই এটা ব্যবহার করতে পারছে। সুবিধা হলো, কমিউনিটির মধ্যে ইউজার সীমাবদ্ধ থাকে বলে এখানে অনেক সমস্যা যেমন- সিকিউরিটির সমস্যাগুলো নেই। আর অসুবিধা হলো এখানে ক্লায়েন্টের সংখ্যা সীমিত বলে খরচ বেড়ে যাবে।

প্রাইভেট ক্লাউড ( Private Cloud )

প্রাইভেট ক্লাউডকে ক্লাউড বলা চলে কিনা এ নিয়ে মতভেদ আছে। এ রকম ক্লাউড হলো কোনো বড় সংস্থার নিজের নানা সার্ভিস চালাবার জন্য নিজের ডেটা সেন্টারকেই ক্লাউড মডেলে ব্যবহার করা। সমস্যা হলো, এতে করে কিন্তু খরচ অনেক হচ্ছে, নিজস্ব ডেটা সেন্টার বসাতে হচ্ছে, ম্যানেজ করার জন্য লোক রাখা হচ্ছে। তবে বড় সংস্থার ক্ষেত্রে সুবিধাও আছে, কোনো বড় কোম্পানিতে ১০টি ডিপার্টমেন্ট থাকলে ১০টি ডেটা সেন্টার না বসিয়ে ১টিকেই ক্লাউড মডেলে ভাগাভাগি করে ব্যবহার করা যাচ্ছে। ধরা যাক, বাংলাদেশ সরকার তার নানা মন্ত্রণালয়ের কম্পিউটার ব্যবহারের খরচ কমাতে চায়। সেক্ষেত্রে একটা সরকারি প্রাইভেট ক্লাউড ভালো সমাধান হতে পারে।

হাইব্রিড ক্লাউড ( Hybrid Cloud )

হাইব্রিড ক্লাউড হলো পাবলিক আর প্রাইভেটের সংমিশ্রণ। এখানে প্রাইভেট ক্লাউড দিয়ে প্রাথমিক চাহিদা মেটানো হয়, আর প্রাইভেট ক্লাউডের ধারণক্ষমতা অতিক্রান্ত হয়ে গেলে পাবলিক ক্লাউডের সাহায্য নেয়া হয়। পাবলিক ক্লাউডের চেয়ে হাইব্রিড ক্লাউডের খরচ বেশি, কারণ স্থানীয় স্থাপনাতো বানাতেই হচ্ছে এখানে। তবে স্থানীয়ভাবে কাজ করিয়ে নেয়ার সুবিধাগুলো থাকলে, তার সাথে অতিরিক্ত চাহিদা মেটানোরও একটা ব্যবস্থা এখানে থাকছে পাবলিক ক্লাউডে পাঠানোর মাধ্যমে।

Science & Technology সম্পর্কে আরো জানতে এখানে ক্লিক করুণ…

Recommended Posts

বাংলাদেশের ঐতিহাসিক মসজিদ
World Heritage Bangladesh

ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন মসজিদ

মুসলমানদের তথা মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের পবিত্র উপসনালয় মসজিদ। বাংলাদেশ মুসলিম সংখ্যা গরিষ্ঠ দেশ হলেও এখানকার ইসলামের ইতিহাস তেমন পুরাতন নয়। বাংলাদেশে কিছু প্রাচীন মসজিদ ছাড়া মোঘল আমলের পূর্বের প্রায় সকল প্রাচীন মসজিদ ই ধ্বংস হয়ে গেছে। আজ আমরা তেমনই কিছু ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন মসজিদ সম্পর্কে জানবো। সিংগাইর মসজিদঃ মধ্যযুগীয় এই সিংগাইর মসজিদটি ষাটগম্বুজ মসজিদের দক্ষিণ-পূর্ব কোনে অবসিহত। […]

Pathokia 

রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস বা গেঁটেবাত

রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস বা গেঁটেবাত ( Rheumatoid Arthritis ) বলতে কি বোঝ? শতাধিক প্রকারের বাতরোগের মধ্যে রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস বা গেঁটেবাত অন্যতম। সাধারণত বয়স্করা এ রোগে আক্রান্ত হয়। কম বয়সী ছেলেমেয়েদের বেলায় গিঁটে ব্যথা বা যন্ত্রনা হওয়া রিউমেটিক ফিভার বা বাতজ্বর ( Rheumatic Fever ) জাতীয় অন্য রোগের লক্ষণ হতে পারে ( ষষ্ঠ অধ্যায় দ্রষ্টব্য)। অস্থিসন্ধির অসুখের […]

Pathokia 
Artimis:NASA’s Mega Moon Rocket
Science and Technology

আর্টেমিস : আবারও চাঁদের বুকে মানুষ

আর্টেমিস :আবারও চাঁদের বুকে মানুষ Artimis:NASA’s Mega Moon Rocket দীর্ঘ পাঁচ দশক পর আবারও চাঁদের বুকে মানুষ পাঠানোর অভিযানে নাসা। তিন ধাপের মিশনে মনুষ্যবিহীন প্রথম রকেট টি ২৯ আগস্ট যাওয়ার কথা ছিল। আর শেষ ধাপে পাঠানোর কথা ছিল মানুষ। এর মাধ্যমে শুরু হতে যাচ্ছিল বহুল প্রতীক্ষিত আর্টেমিস যুগের। ফ্লোরিডার কেপ কেনেডি স্পেস সেন্টারে (Kennedy Space […]

Pathokia