
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আশির্বাদ না অভিশাপ
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) কি?
কম্পিউটারের নিজস্ব কোনো বুদ্ধি নেই। এটি শুধু নিজের কাছে সংরক্ষিত তথ্য এবং প্রোগ্ৰামের আলোক কাজ করতে পারে। কোনো সমস্যার আলোকে নিজ থেকে সিদ্ধান্ত নিয়ে কাজ করতে পারে না। কম্পিউটারও যাতে কোনো সমস্যা দেখা দিলে নিজ থেকে সিদ্ধান্ত নিতে পারে বা নিজের বুদ্ধি প্রকাশ করতে পারে তাই এর ভেতর অনেক সমস্যার সমাধান করে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এটিকেই বলে আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স (Artificial Intelligence) বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা।অর্থাৎ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা হলো মানুষের চিন্তাভাবনাগুলোকে কৃত্রিম উপায়ে কম্পিউটার বা কম্পিউটার প্রযুক্তিনির্ভর যন্ত্রের মধ্যে রূপ দেয়ার ব্যবস্থা। একটা রোবোটের কথা যদি চিন্তা করি, রোবোটের বুদ্ধি হচ্ছে আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্সি। রোবোটে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগের ফলে রোবোট স্বয়ংক্রিয়ভাবে মানুষের নির্দেশ অনুযায়ী যে কোনো সাধারণ কিংবা মানুষের দুঃসাধ্য যে কোনো কাজ সম্পাদন করতে পরে। আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্সি বা সংক্ষেপে AI ( এ আই ) বর্তমানে কম্পিউটার বিজ্ঞানের একটি শাখা হিসেবে পরিচিত লাভ করেছে।
এ শাখায় কম্পিউটারকে মানুষের মতো চিন্তাভাবনা করে অসম্পূর্ণ তথ্য ব্যবহার করে পূর্ণাঙ্গ সিদ্ধান্তে পৌঁছবে, সমস্যার সমাধান করবে, পরিকল্পনা প্রণয়ন করবে—সে বিষয়গুলো নিয়ে ব্যাপকভাবে গবেষণা চলছে। একারণেই কম্পিউটারকে প্রোগ্ৰামভিত্তিক যন্ত্র হিসেবে অভিহিত করা হয়। বুদ্ধি হচ্ছে জ্ঞান আহরণ করা এবং তা প্রয়োগ করার ক্ষমতা। সাধারণ প্রোগ্ৰামগুলো জ্ঞান আহরণ করতে পারে না। কিন্তু যে সব মেশিন বা প্রোগ্ৰাম এমনভাবে তৈরি করা হয়, যেন তারা নিজে নিজে কিছু শিখে নিতে পারে, সেগুলোকে আমরা বলি বুদ্ধিমান প্রোগ্ৰাম বা বুদ্ধিমান মেশিন।যেমন – গুগল সার্চ প্রোগ্ৰামটা একটা বুদ্ধিমান প্রোগ্ৰাম। আমরা কিছু সার্চ করলে এটি আগের সার্চ হিস্টোরি, বয়স, লোকেশন ইত্যাদির ওপর নির্ভর করে আমাদের সার্চ রেজাল্ট প্রদর্শন করে।
টুরিং টেস্ট (Turing Test) কি?
১৯৫৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের MIT এর John McCarthy সর্বপ্রথম আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স শব্দটি উল্লেখ করেন। তবে আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্সের জনক হিসেবে চিহ্নিত করা হয় প্রতিভাবান কম্পিউটার বিজ্ঞানী অ্যালান টুরিং ( Alan Turing কে )। তার করা টুরিং টেস্ট আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্সের ভিত্তি স্থাপন করে। ১৯৫০ সালে টুরিং তার এই যুগান্তকারী পরীক্ষাটি প্রকাশ করেন। টুরিং টেস্ট হলো এমন একটি পরীক্ষা যার মাধ্যমে বুঝা যায় কোনো যন্ত্রের চিন্তা করার ক্ষমতা আছে কি-না? এই টেস্টে উতরে গেলে উক্ত যন্ত্রটির কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আছে বলে ধরে নেওয়া হয়। অন্যান্য প্রতিভাবান অ্যালান টুরিংকে অনেকে আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্সের জনক হিসেবে উল্লেখ করলেও আসলে তিনি তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের জনক হিসেবেই বেশি সমাদৃত।
রোবোটিক্স ( Robotics )
রোবোটিক্স ( Robotics ) হলো প্রযুক্তির একটি শাখা যেটি রোবোট সমূহের ডিজাইন, নির্মাণ, কার্যক্রম ও প্রয়োগ নিয়ে কাজ করে। পাশাপাশি এটি রোবোট সমূহের নিয়ন্ত্রণ, সেন্সরি ফিডব্যাক এবং তথ্য প্রক্রিয়াকরণের জন্য কম্পিউটার সিস্টেমগুলোর জন্যও কাজ করে। এসব প্রযুক্তি অটোমেটেড মেশিনগুলোর সাথে কাজ করে যা বিপজ্জনক পরিবেশ বা উৎপাদন প্রক্রিয়াসমূহের মানুষের স্থান দখল করে কিংবা মানুষের উপস্থিতি, আচরণ ইত্যাদির সাথে মিল থাকে। আজকের দিনের অধিকাংশ রোবোটই ( বায়ো-ইন্সপায়াড রোবোটিক্স ) ক্ষেত্রটির দ্বারা উৎসাহিত হয়ে তৈরি। সহজভাবে বলতে গেলে রোবোটিক্স এর সাধারণ বিষয়গুলো হলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ইঞ্জিনিয়ারিং এবং মনোবিদ্যা। এ প্রযুক্তিটি কম্পিউটার বুদ্ধিমত্তা দ্বারা গঠিত এবং কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত রোবোট মেশিন তৈরি করা হয়। যেগুলো আকারের দিক থেকে অনেকটাই মানুষের মতো হয় এবং অনেকটা মানুষের মতোই দেহের গঠন ও ক্ষমতাসম্পন্ন হয়ে থাকে।
এ ক্ষেত্রটিতে তাই রোবোটকে যেসব বৈশিষ্ট্য দেয়ার চেষ্টা করা হয় সেগুলো হলোঃ
- দৃষ্টিশক্তি বুলতে ভিজ্যুয়াল পারসেপশন
- স্পর্শ ইন্দ্রিয়গ্ৰাহ্য সক্ষমতা
- নিয়ন্ত্রণ ও ম্যানিপুলেশনের ক্ষেত্রে দক্ষতা
- লোকোমোশন বলতে বোঝায় যেকোনো স্থানে দৈহিকভাবে নড়াচড়ার ক্ষমতা
- নেভিগেশন বলতে বোঝায় কোনো একটি গন্তব্যে কারও যাবার পথকে যথাযথভাবে খুঁজে বের করার বুদ্ধিমত্তা
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার আমাদের আশির্বাদঃ
- স্বয়ংক্রিয় ভাবে পরিবহন পরিচালনা ও ট্রাফিকিং ব্যাবস্থায়।
- সাইবর্গ টেকনোলজি অর্থৎ যান্ত্রিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ মানব শরীরে প্রতিষ্থাপন যা মস্তিষ্ক দ্বারা চালিত হবে।
- বিপজ্জনক বা ঝুঁকিপূর্ণ কাজে ব্যাপক হারে ব্যবহার।
- জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যা সমাধানে ও আবহাওয়া পূর্বাভাস কাজে।
- জটিল অস্ত্রপাচার অর্থৎ চিকিঃসা ক্ষেত্রে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কুফলঃ
- কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারের জন্য সৃষ্টিশীল কাজ থেকে মানুষ বিমুখী হতে পারে।
- কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অপব্যবহার মানবজাতির জন্য হুমকি স্বরুপ।
- কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহারে বুদ্ধিসম্পন্ন বিষয় গুলোর এক সময় মানুষের নিয়ন্ত্রণ এর প্রভাব ফেলতে পারে।
- কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং রোবট অসংখ্য চাকরি কেড়ে নেবে। কারণ ভবিষ্যতে অনেক কিছুই করা হবে মেশিন দিয়ে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপরিকল্পিত প্রসার ও অযাচিত ব্যবহার রোধে কার্যকরী আসু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এবং নিয়ন্ত্রণমূলক আইন প্রতিষ্ঠা মাধ্যমেে এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নিরাপদ ব্যবহার নিশ্চিত করতে সকলকে সজাক দৃষ্টি সাথে সাথে গবেষক, বিজ্ঞানী, ব্যবসায়ী, সর্বোপরি বিশ্ব নেতৃবর্গকে ঐকমত্যে পৌঁছতে হবে।
Science & Technology সম্পর্কে আরো জানতে এখানে ক্লিক করুণ…