আপনি জানেন কি?
কুকুরের ঘ্রাণশক্তি কেন মানুষের ঘ্রাণশক্তি থেকে বেশি?
কুকুর মাংসাশী ও স্তন্যপায়ী (Carnivora) কার্নিভোরা বর্গের প্রাণী। এরা ভীষন প্রভূভক্ত । আনুমানিক দেড় হাজার বছর আগে কুকুর মানুষের শিকারের সঙ্গী হওয়ার মাধ্যমে গৃহপালিত পশুতে পরিণত হয়। অন্য মতে প্রায় ১ লক্ষ বছর আগে থেকে কুকুর মানুষের বশে আসে। পৃথিবীতে (breed) এর মাধ্যমে বিভিন্ন জাতের কুকুর জন্মানো হয়েছে, যার মধ্যে “চিহুয়াহুয়া” জাতের কুকুরের উচ্চতা মাত্র কয়েক ইঞ্চি আবার “আইরিশ উলফহাউন্ড” এর উচ্চতা প্রায় তিন ফুট। তবে গৃহপালনের জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রজাতির কুকুর হলো ল্যাব্রাডর।


কুকুরে ঘ্রান ও শ্রবন শক্তি মানুষের চেয়ে কয়েক গুন বেশী।
কুকুরের শ্রবণশক্তি মানুষের চেয়ে চারগুণ এবং ঘ্রাণশক্তি আঠাশ হাজার গুণ বেশি। কুকুর সাধারনত দুইশত পঞ্চাশ টির মত শব্দ ও অঙ্গভঙ্গি বুঝতে পারে। দুই বছরের শিশুর সমান একটি পূর্ণবয়স্ক কুকুরের বুদ্ধিমত্তা।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের একদল গবেষকরা দেখেছেন যে, কুকুর ঘ্রাণশক্তি দিয়ে সনাক্ত করতে পারে রোগি থাইরয়েড ক্যান্সার আক্রান্ত কিনা ?
পোষা প্রানিদের মধ্যে কুকুর দুটো কারণে মানুষের প্রিয়, এক কুকুর অত্যন্ত প্রভুভক্ত এবং দ্বিতীয়টি এর আছে প্রখর ঘ্রাণশক্তি । আজ আমরা জানবো কুকুরের এই প্রখর ঘ্রাণ শক্তির পেছনে কি কারণ রয়েছে ।
কুকুরের ঘ্রাণ শক্তি মানুষের থেকে প্রায় দশহাজার গুণ বেশি শক্তিশালী হয়, কি অবাক করা তথ্য তাই নয় কি! আর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুরদের এই ক্ষমতা প্রায় এক লক্ষ গুণ বেশি হয়ে থাকে।
ফ্লোরিডা স্টেট ইউনিভার্সিটির সেন্সর রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক, জেমস ওয়াকার, কুকুরের ঘ্রান শক্তি সম্পর্কে একটি অবাক করা তথ্য দিয়েছেন তা হচ্ছে, কুকুরের ঘ্রাণ ক্ষমতাকে যদি দৃষ্টিশক্তির সঙ্গে তুলনা করা যায় তাহলে মানুষের দৃষ্টিশক্তি সর্বোচ্চ ৩০০ মিটার দূরত্বের বেশি প্রসারিত হয় না সেখানে তিন হাজার কিলো মিটারের বেশী দূরত্ব দেখতে সক্ষম কুকুরের দৃষ্টিশক্তি।
খাদ্য গ্রহণ, শিকার ধরা ও শত্রু চেনার জন্য কুকুর তার ঘ্রাণশক্তিকে ব্যবহার করে থাকে।
কুকুরের এই অসাধারন ঘ্রাণশক্তির রহস্যটা তার মস্তিস্কে লুকায়িত আছে। মানুষের মস্তিষ্কের তুলনায় প্রায় চল্লিশ গুণ বেশী অংশ কুকুরের মস্তিষ্কে ঘ্রাণ সংক্রান্ত কার্যাবলী নিয়ন্ত্রণ করে। মানুষের নাকে ষাট লক্ষ ঘ্রাণ রিসেপ্টর রয়েছে, সেখানে কুকুরের রয়েছে ত্রিশ কোটি।
আরো একটি বৈশিষ্টের কারণে কুকুরকে অন্য সব প্রাণীর থেকে স্বতন্ত্র করা য়ায় তার ঘ্রাণ নেওয়ার পদ্ধতি। অধিকাংশ প্রাণির শ্বাস গ্রহণ পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য হল শ্বাসবায়ু আর ঘ্রাণ গ্রহণের পথ একটাই আর তা হলো নাক, ফলে যখন শ্বাস ছাড়া হয় তখন গ্রহণ করা ঘ্রাণ অণুগুলোও শ্বাসের সাথে সাথে বেড়িয়ে যায় এবং সাধারন প্রাণি কোন ঘ্রাণ অণু সঞ্চয় করে রাখতে পারে না কিন্তু কুকুরের শ্বাস গ্রহণ আর ঘ্রাণ নেওয়ার পদ্ধতি আলাদা আলাদা ভাবে গঠিত। কুকুর যখন শ্বাস গ্রহণ করে সেই গৃহীত শ্বাস বায়ুর বারো শতাংশ চলে যায় নাকের পেছনে অবস্থিত ঘ্রাণ প্রকোষ্ঠে আর অবশিষ্ট বায়ু প্রবেশ করে ফুসফুসে।এবার কুকুর যখন শ্বাস ত্যাগ করে ত্যাগ করা বায়ু আমাদের মত প্রবেশ পথ দিয়েই বেরিয়ে না গিয়ে নাসারন্ধ্রের দুপাশ দিয়ে বেরিয়ে যায় আর মধ্যিখান দিয়ে শ্বাসবায়ু নাসারন্ধ্রে প্রবেশ করতে থাকে।
সহজ ভাবে বলতে, মানুষের নাকের মধ্যে প্রায় ২৫০ বর্গ মিঃমিঃ জুড়ে হলুদাভ একটি জায়গা আছে। যেখানে চুলের মতো লম্বাটে লাখ লাখ ঘ্রাণসংবেদনশীল কোষ Chemoreceptor (কেমো-রিসেপটরস) থাকে। ওই স্থানটি সব সময় শ্লেষ্মা দ্বারা ভেজা ভেজা থাকে। এই কেমোরিসেপটরগুলো মস্তিষ্কের ঘ্রাণসংক্রান্ত কুণ্ডের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে।

কি ভাবে কাজ করেঃ
যখন কোন বস্তু থেকে আমরা গন্ধ নেই তখন সে বস্তু থেকে ঘ্রান অনু গুলো বাতাসের মাধ্যমে আমাদের নাকের কেমোরিসেপটরে সংবেদন করে এবং ঐ স্থানের স্নায়ু গুলোকে তাড়িত করে এবং ঘ্রাণসংক্রান্ত কুণ্ডের মাধমে আমরা সে বস্তু থেকে আসা গন্ধ অনুভব করতে পারি।
এই ঘ্রাণসংক্রান্ত কুণ্ড আকারে যত বড় হবে ঘ্রাণশক্তি হবে তত প্রখর।
কুকুরের এই ঘ্রাণসংক্রান্ত কুণ্ড আকারে অনেক বড়, আর এজন্যই কুকুরের ঘ্রাণশক্তি মানুষের চেয়ে কয়েক গুন বেশি।তাছাড়া কুকুরের নাক এবং নাকের গহ্বর সর্বদা ভেজা থাকে, ভেজা নাকে ঘ্রান অনু গুলো আটকে থাকে যা গন্ধ শুকে চিনতে সাহায্য করে।