
উপমহাদেশের রাজনৈতিক আন্দোলন
উপমহাদেশের রাজনৈতিক আন্দোলনঃ
এই উপমহাদেশের রাজনৈতিক আন্দোলন ১৯৪৭ এর আগে ও পরে বেশ কয়েকটি বছর প্রবল রাজনৈতিক অস্থিরতায় কেটেছে। ব্রিটিশরা ভারতবর্ষ শাসন ছেড়ে চলে যাওয়ার প্রক্রিয়াটি সহজ ছিলনা। অনেক হত্যা, অসংখ্য লোকের গৃহহীনতা এবং লাঞ্ছনা ও যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে বৃটিশ শাসক ভারতবর্ষ কে বিভক্ত করে দিয়ে এ ভারতবর্ষ ত্যাগ করে —এর নাম স্বাধীনতা এবং সমঝোতার রাজনৈতিক ফল। এবং রেখে গেছে অনেক জটিলতা, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, বৈরিতা এবং সংঘাত।
ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠাতা – অবসরপ্রাপ্ত ইংরেজ সিভিলিয়ন অ্যালান অক্টোভিয়ান হিউম। কংগ্রেস যে নীতিতে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন করতে থাকে – অখণ্ড ভারত নীতিতে ব্যারিস্টার উমেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভাপতিত্বে ১৮৮৫ সালের ২৮ ডিসেম্বর বোম্বেতে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের প্রথম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয় । বঙ্গভঙ্গ কার্যকর হয় – ১৯০৫ সালের ১৬ অক্টোবর লর্ড কার্জনের ঘোষণার মাধ্যমে। সম্রাট পঞ্চম জর্জের অভিষেক অনুষ্ঠান উপলক্ষে আহত দিল্লির দরবারে বঙ্গভঙ্গ রদের ঘোষণা দেয়া হয় ১৯১১ সালের ১২ ডিসেম্বর। বঙ্গভঙ্গ রদ করার সুপারিশ করেন – লর্ড হার্ডিঞ্জ। বঙ্গভঙ্গের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যে গানটি রচনা করেন – ‘ বাংলার মাটি, বাংলার জয়’।
মুসলিম লীগ :
ঢাকায় নিখিল ভারত মুসলিম এডুকেশনাল কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয় – ১৯০৬ সালের ৩০ ডিসেম্বর। মুসলিম লীগের প্রকৃত নাম ছিল – নিখিল ভারত মুসলিম লীগ। মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠিত হয় – নবাব সলিমুল্লাহর উদ্যোগে। দ্বিজাতি তত্ত্বের প্রবক্তা – মুহম্মদ আলী জিন্নাহ। জিন্নাহ দ্বিজাতি তত্ত্বের ঘোষণা করেন – ১৯৩৯ সালে। বাংলার প্রথম মূখ্যমন্ত্রী – এ কে ফজলুল হক। বাংলার গভর্নরের সাথে বিরোধের ফলে এ কে ফজলুল হক পদত্যাগ করলে মন্ত্রিসভা গঠন করেন – মুসলিম লীগের খাজা নাজিমউদ্দীন। বাংলার শেষ মূখ্যমন্ত্রী – সোহরাওয়ার্দী।
লাহোর প্রস্তাব :
১৯৩৯ সালে মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঘোষণা করেন যে, হিন্দু মুসলমান দুটি আলাদা জাতি। তার এ ঘোষণা দ্বি – জাতি তত্ত্ব হিসেবে পরিচিত। ১৯৪০ সালের ২৩ মার্চ লাহোর মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর সভাপতিত্বে মুসলিম লীগের বার্ষিক অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। বাংলার তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাব উত্থাপন করেন। লাহোর প্রস্তাবের মূলকথা ছিল উপমহাদেশের উত্তর – পশ্চিম ও পূর্বাঞ্চলীয় মুসলিম অধ্যুষিত এলাকাগুলো নিয়ে একাধিক স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র গঠন করতে হবে। লাহোর প্রস্তাবে পাকিস্তানের কোন উল্লেখ ছিলনা। তবুও এ প্রস্তাব পাকিস্তান প্রস্তাব নামেও পরিচিত। পরবর্তীকালে এ প্রস্তাবের সংশোধন করা হয়। একাধিক রাষ্ট্রের পরিবর্তে একটি মাত্র রাষ্ট্র গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ প্রস্তাবের ভিত্তিতেই পাকিস্তান রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়।
লাহোর প্রস্তাব উত্থাপন করা হয় – ১৯৪০ সালের ২৩ মার্চ। লাহোর অনুষ্ঠিত মুসলিম লীগের অধিবেশনে ‘ লাহোর প্রস্তাব ‘ উত্থাপন করেন – শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক। লাহোর প্রস্তাবের মূল দাবি – মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকাসমূহ নিয়ে একাধিক স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন করা। বঙ্গীয় প্রজাস্বত্ব আইন, ঋণ সালিশী বোর্ড প্রভৃতি গঠনের মাধ্যমে বাংলার কৃষকদের নিকট স্বরণীয় হয়ে আছেন – এ কে ফজলুল হক।
ভারত বিভাগ ও স্বাধীনতা :
১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট ভারত ও ১৪ আগস্ট পাকিস্তান – স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। উভয় ডোমিনিয়ন স্বাধীনভাবে তাদের শাসনতন্ত্র রচনা করবে। দেশীয় রাজ্যগুলোর ভারত বা পাকিস্তানে যোগদান বা স্বাধীনতা ঘোষণার অধিকার থাকবে। মাস্টার দা সূর্যসেন চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন করেন – ১৮ এপ্রিল ১৯৩০। মাস্টার দা সূর্যসেনকে ফাঁসি দেওয়া হয় ১৯৩১ সালে চট্টগ্রামে।
দ্বি- জাতিতত্ত্ব :
দ্বি – জাতি তত্ত্বের প্রবক্তা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ। দ্বিজাতি তত্ত্ব ঘোষিত হয় ১৯৩৯ সালে। ভারতবর্ষ বিভক্তির সময় সংখ্যালঘিষ্ঠ মুসলমানদের অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ধর্মভিত্তিক ভারতবর্ষ বিভক্তির প্রস্তাবই হল দ্বি-জাতি তত্ত্ব। এই তত্ত্বের মূলকথা হিন্দু – মুসলিম আলাদা জাতি। উল্লেখ্য যে, লাহোর প্রস্তাবের উত্থাপন শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক জিন্নাহর ‘ দ্বি-জাতি তত্ত্বে ‘ বিশ্বাসী ছিলেন না। লাহোর প্রস্তাবের কোথাও ‘ দ্বি-জাতি তত্ত্ব ‘ শব্দটিও নেই।
ভারতীয় উপমহাদেশের আরো ইতিহাস জানতে এখানে ক্লিক করুণ…