Twitter Takipçi Satın AlKartal evden eve nakliyatimplant

বিস্ময়কর মাছ ইলেকট্রিক ইল

ইলেকট্রিক ইল

বিস্ময়কর মাছ ইলেকট্রিক ইল

জীবজগৎ বড়ই বিচিত্র। এখানে নানা বৈচিত্র্যময় উদ্ভিদ ও প্রাণী রয়েছে। অসংখ্য প্রাণীর মধ্যে এমনই এক বিচিত্র প্রাণী হচ্ছে ইলেক্ট্রিক ইল। এটি এক ধরনের বৈদ্যুতিক মাছ। এটি ৬.৭ ফুট পর্যন্ত লম্বা ও ২০ কিলোগ্রাম পর্যন্ত ওজনের হয়ে থাকে। মাছটিকে দক্ষিণ আমেরিকার আমাজন নদী ও অরেনকো নদীতে পাওয়া যায়। মাছটি শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপন্ন করতে পারে বলেই এমন নামকরণ করা হয়েছে। ইংরেজিতে ইল ও বাংলায় বাইম মাছের সাথে মিলানো  হলেও প্রকৃতপক্ষে মাছটি দেখতে অনেকটা মাগুর জাতীয় মাছের মতো । বিজ্ঞানীরা একে কোন শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত করবেন তা নিয়ে বরাবর-ই দ্বিধায় থাকতেন। তাই বহুবার এর শ্রেণীবিন্যাস পরিবর্তন করেন।

ইলেকট্রিক ইল

ইলেকট্রিক ইল নিশাচর প্রাণী।  এটি  নদীর জলস্রোত, জলাশয় এবং নিমজ্জিত জলজ এলাকার তলদেশে কর্দমাক্ত স্থানে থাকতে পছন্দ করে। যদিও মাছটির অর্থনৈতিক গুরুত্ব তেমন নেই তথাপি বহু বছর ধরে এটিকে নিয়ে ব্যাপক গবেষণা চলছে। বাচ্চা ইলের বৈদ্যুতিক ক্ষমতা কম থাকায় আমাজন এলাকার স্থানীয় লোকেরা ছোট মাছকে খাবার হিসেবে গ্রহণ করে। তবে পূর্ণাঙ্গ ইল-এর মৃত্যুর প্রায় আধঘন্টা পরেও শরীর থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা থাকায় খাবার হিসেবে ইল মাছকে খেতে নিরুৎসাহিত করা হয়।

এরা জলজ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে। ভ্যান্ডারবিল্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী ও লেখক তিনেথ ক্যাথানিয়ার সাম্প্রতিক গবেষণা থেকে জানা যায় এরা জলের তলদেশে থাকলেও শিকারের জন্য বৈদ্যুতিক ইল পানির উপর লাফিয়ে ওঠে। তিনি লক্ষ্য করেন মাছ ধরার জন্য ব্যবহৃত জালের সাথে লাগানো ধাতব লাঠিতে লাফ দিয়ে উঠে উচ্চমাত্রার বৈদ্যুতিক শক্ দেয় মাছটি।

সন্তানের প্রতি দায়িত্ব পালনে এদের খুবই অদ্ভুত একটি বিষয় লক্ষ্য করা যায় প্রথমে পুরুষ ইল লালা দিয়ে ফেনাযুক্ত বাসা নির্মাণ করে । এ বাসায় স্ত্রী ইল  হাজার হাজার ডিম পারে। সঠিক ভাবে এ পর্যন্ত ১৭০০০  ডিমের হিসাব পাওয়া গিয়েছিল। অসংখ্য ডিমের মধ্যে থেকে গড়ে প্রায় ১২০০ টি ইল বাচ্চার জন্ম হয়। উভয়ই বাচ্চাকে রক্ষার জন্য নিয়োজিত থাকে । বাচ্চাগুলো  ৪ থেকে ৬ ইঞ্চি লম্বা না হওয়া পর্যন্ত বাবা-মা নজর রাখে।

ইল মাছ মুখ দিয়ে বাতাস থেকে অক্সিজেন গ্রহণ করে।  শতকরা ৮০ ভাগ অক্সিজেন এরা বাতাস থেকে নেয়। যদিও এদের ফুলকা আছে তবুও অক্সিজেন গ্রহণের জন্য প্রধানত মুখের উপরই নির্ভরশীল।  খুব বেশি প্রয়োজন না হলে এরা ফুলকা ব্যবহার করে পানি থেকে অক্সিজেন গ্রহণ করে না।

ইলেকট্রিক ইল

কর্দমাক্ত পানিতে বাস করলেও বৈদ্যুতিক  ইলের দৃষ্টি শক্তি প্রখর নয়। তবে এরা তৈরিকৃত বৈদ্যুতিক ক্ষেত্রটিকে রাডারের মত ব্যবহার করতে পারে। এজন্য প্রথমে শিকার করার জন্য প্রাণীকে বৈদ্যুতিক শক দেয় পরে বৈদ্যুতিক শকের স্থান শনাক্ত করে শিকার খুজে নেয়।

কর্দমাক্ত পানিতে তারা ক্রমাগত দশ ভোল্ট পরিমাণ চার্জ প্রদান করে উভচর প্রাণী, মাছ এবং পাখি কে শনাক্ত করে। শিকারের আকার আকৃতি ও শক্তি বিবেচনা করে ইল  নিজেদের শরীর বাকা করে মাথা ও লেজ কাছাকাছি নিয়ে আসে।  ইলের মাথা ধনাত্মক ও লেজ ঋণাত্মক প্রান্তের কাজ করে। তাই অধিক পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন করার উদ্দেশ্যে ইল এমনটি করে থাকে ।এরপর ক্রমাগত ইলেকট্রিক শক দিতে থাকে । এতে শিকার পেশী দ্রুত অবসন্ন হয়ে যায়্। শিকার দেহ নিস্তেজ হওয়ার পর  দ্রুত তাকে গিলে ফেলে। একটি পূর্ণবয়স্ক বৈদ্যুতিক ইল মাত্র ২ মিলি সেকেন্ড ৬০০ ভোল্ট  বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে, যা আমাদের বাসা বাড়িতে সংযুক্ত বৈদ্যুতিক ব্যবস্থায় প্রাপ্ত ভোটের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি।

ইলেকট্রিক ইল

সামান্য পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপন্ন করতে এরা কয়েক’শ থেকে কয়েক হাজার পেশী কোষ ব্যবহার করে।  জানা যায় ৬০০ থেকে ৮৬০ ভোল্ট পর্যন্ত বিদ্যুত উৎপাদন করতে  ৬  ফুট লম্বা  ইল ৬০০০ পেশী কোষকে ব্যবহার করে।

বৈদ্যুতিক ইল উৎপন্ন বিদ্যুতের সাহায্যে কুমিরকেও নিস্তেজ করতে পারে বলে ব্রাজিলের একজন কৃষক জানিয়েছিলেন। এ ছাড়াও ক্রমাগত বৈদ্যুতিক শকের মাধ্যমে এরা একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষকেও মেরে ফেলতে পারবে। তবে নিজে বৈদ্যুতিক শক পায় কিনা এই নিয়ে এখনো গবেষণা চলছে।  অনেকের মতে শক্ পেলেও তা খুবই কম, হয়তো এদের ত্বকে বিদ্যুৎ রোধীর ব্যবস্থা রয়েছে।  বৈদ্যুতিক ইলের তিন জোড়া বিদ্যুৎ উৎপন্নকারী অঙ্গ রয়েছে তাদের মধ্যে প্রধান অঙ্গ হচ্ছে হান্টারস এবং স্যাস অঙ্গ। হান্টারস বা শিকারী অঙ্গ থেকে অধিক বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়। আলাদাভাবে হান্টারস অঙ্গ ৬৫০ ভোল্ট এবং স্যাস অঙ্গ মাত্র দশ ভোল্ট পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপন্ন করতে পারে। এই দশ ভোল্ট বিদ্যুৎ যোগাযোগের জন্য, প্রজননের জন্য বিপরীত লিঙ্গ ঈলকে এবং শিকারকে শনাক্তকরণে ব্যবহৃত হয়। অঙ্গগুলো হাজার হাজার ইলেকট্রিক সেল বা কোষ দিয়ে তৈরি। প্রতিটি কোষ ০.১৫ ভোল্ট  বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে। কোষগুলো একটির সাথে আরেকটি শ্রেণীবদ্ধ ভাবে  একসঙ্গে যুক্ত থাকে্ কোষগুলো থেকে একটানা এক ঘণ্টা পর্যন্ত বিরতিহীন বিদ্যুৎ উৎপন্ন করতে সক্ষম। ইলের কোষ গুলো সারিবদ্ধ ভাবে বিন্যস্ত থাকে।  প্রতিটি কোষ আলাদা আলাদা ব্যাটারীর মত কাজ করে। আলাদা আলাদা কোষের স্তুপ একত্রে সক্রিয় হয়ে প্রয়োজনীয় পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে।

পরিস্কার পানিতে  বিদ্যুৎ পরিবাহীতা খুবই কম তাই বৈদ্যুতিক ইল যেখানে বৈদ্যুতিক ক্ষেত্র তৈরি করবে সেখানকার পানিতে লবণ ও অন্যান্য খনিজ উপাদান থাকতে হয়। বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ইল মস্তিষ্ক থেকে স্নায়ুর মাধ্যমে বৈদ্যুতিক কোষগুলোতে সংকেত প্রেরণ করে তখন মাছের মাথার দিক থেকে পানির মাধ্যমে লেজের দিকে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয়। এ সময় মাছের চারদিকে বৈদ্যুতিক ক্ষেত্র তৈরি হয়। এই বৈদ্যুতিক ক্ষেত্রের  নিকট কোন প্রাণী থাকলে তা শক্তিশালী শক্ এর মাধ্যমে অচেতন হয়ে যায় এভাবেই শিকার ধরা, খাদ্য অনুসন্ধান, যোগাযোগ ও আত্মরক্ষার কাজে আশ্চর্যজনকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে বৈদ্যুতিক ইল মাছ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

istanbul escorthacklink satın alporno izleizmir escorteryaman escortankara escortGaziantep escortonwin girişHacklink satın alTavşanlı escortGiresun escortizmir escortankara escortkayseri escort