ইন্টারনেট কিভাবে কাজ করে?
বর্তমান যুগে আমরা ইন্টারনেট ছাড়া একটা মুহূর্ত কল্পনা করতে পারিনা । আপনার মনে কি কখনো মনে একটা প্রশ্ন আসেনি, এটা কিভাবে কাজ করে? এই ইন্টারনেটের মালিকই বা কে? আর কে-ই বা ইন্টারনেট পরিচালনা করে? আর তথ্যই বা কিভাবে পাই?
আজকের আলোচনায় থাকছে এরকমই রোমাঞ্চকর কিছু অজানা প্রশ্নের উত্তর।
আমরা জানি বাংলাদেশ সহ পৃথিবীর প্রত্যেকটি দেশ ইন্টারনেটের সঙ্গে যুক্ত। সাধারণত আমরা সকলেই মনে করি যে ইন্টারনেট স্যটেলাইটের মাধ্যমে কাজ করে কিন্তু বাস্তবতা একেবারেই ভিন্ন। শতকরা ৯৯ ভাগ ইন্টারনেট কাজ করে অপটিক্যাল ফাইবার এর সাহায্যে। এই অপটিক্যাল ফাইবার হচ্ছে অত্যন্ত সরু একটি তন্তু বা ফাইবার । যেটা মানুষের চুলের চেয়েও সরু। এখন আপনাদের মনে প্রশ্ন আসতে পারে যে মোবাইল ব্যবহারের সময় তো আমাদের সঙ্গে কোন ক্যাবলই যুক্ত থাকে না তাহলে কেনইবা ক্যাবলের কথা বলা হল? আসলে বিষয়টা হচ্ছে যেই টাওয়ার থেকে আপনার মোবাইলে নেটওয়ার্ক আসে সেই টাওয়ারটি থেকে আপনার যে ওয়েবসাইট ব্রাউজ করছেন সেখানকার সার্ভার পর্যন্ত কেবল বিছানো থাকে। ইন্টারনেট আমাদের কাছে আসে মূলত বিভিন্ন বিভিন্ন স্তরে। এই স্তরকে আবার তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এই তিনটি স্তরকে বলা হয় TR-1, TR-2 এবং TR-3. এর মধ্যে TR-1 স্তরে যেসব কোম্পানী রয়েছে তারা নিজেদের অর্থায়নে সমুদ্রের তলদেশ দিয়ে এক দেশ থেকে আরেক দেশে জালের মত অপটিক্যাল ফাইবার বিছিয়ে রেখেছে । এভাবেই একটি দেশ অন্য সব দেশগুলোর সঙ্গে ক্যাবলের সাহায্যে যুক্ত হয়ে যায়, তারপর দেশ থেকে বিভিন্ন প্রদেশে বা জেলায় এই অপটিক্যাল ফাইবার গুলো বিভক্ত হয়ে যায় । তারপর সবশেষে আপনার এলাকার টাওয়ারে এসে সেই সংযোগ পৌঁছায় এবং সেখান থেকে আপনি কেবল বিহীন ইন্টারনেট সংযোগ পেয়ে থাকেন।
এবার বিষয়টা একটু বোঝার চেষ্টা করব, সমুদ্রের তলদেশ দিয়ে ফাইবার অপটিক ক্যাবল গুলো বিছানো হয়। এই ফাইবার অপটিক ক্যাবল গুলো চুলের মত সরু হলেও এগুলোর ডাটা ট্রান্সফারের ক্ষমতা ৬ গেগা বাইট প্রতি সেকেন্ড পর্যন্ত হয়ে থাকে ।
আগেই বলেছিলাম যারা এই ক্যাবেল বিছানোর কাজ করে তারা TR-1কোম্পানি এবং তাঁরা নিজেদের খরচে এমন কাজগুলো করে থাকে। বাংলাদেশে এমন একটি TR-1 কোম্পানি হলো “বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি লিমিটেড”। বাংলাদেশে দুইটি ল্যান্ডিং পয়েন্ট রয়েছে তার মধ্যে একটি হচ্ছে কুয়াকাটায় আরেকটি হচ্ছে কক্সবাজারে। এখন আপনি যদি কোন ওয়েবসাইট ভিজিট করেন আর সেটির সার্ভার যদি অন্য কোন দেশে হয়ে থাকে তাহলে আপনার ব্রাউজ করার সমস্ত ডাটা পুনরায় এসে এই ল্যান্ডিং পয়েন্ট এর মধ্যেই সেই নির্দিষ্ট সার্ভারে গিয়ে পৌঁছবে এবং পুনরায় সেই সার্ভার থেকে আপনার ডিভাইজে ডাটা রিসিভ হবে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই ল্যান্ডিং পয়েন্ট থেকে কিভাবে ইন্টারনেট আপনার হাত পর্যন্ত আসে এমনকি এর জন্য আসলে কতোইবা টাকা খরচ হয়? বাংলাদেশের ক্ষেত্রে যদি আমরা ধরি, তাহলে দেশের ভেতরের বিভিন্ন অপারেটর যেমন গ্রামীণফোন, রবি, বাংলালিংক ল্যান্ডিং পয়েন্ট থেকে পরবর্তী ধাপে তারের মাধ্যমে নিজেদের কানেকশন পুরো বাংলাদেশে ছড়িয়ে দেয় এরা হচ্ছে TR-2 কোম্পানি। আর এই কোম্পানিগুলো প্রতি গেগা বাইটে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা TR-1 কোম্পানি গুলোকে দিয়ে থাকে। এছাড়াও লোকাল পর্যায়ে বিভিন্ন ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার বা আইএসপি রয়েছে ।যারা মূলতঃ TR-3 কোম্পানি।
মূলত TR-1, TR-2 এবং TR-3 এই তিনটি স্তর এর মাধ্যমেই ইন্টারনেট আমাদের হাত পর্যন্ত আসে। ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করলে জানা যায় যে ইন্টারনেটের জন্য আসলে কোন খরচ নেই যা আমরা দেই তা শুধুমাত্র কেবল ক্যাবল বিছানো এবং মেরামত করার জন্য। আর এত কিছুর মধ্যেই আমরা সহজেই বুঝতে পারছি যে এখানে স্যাটেলাইটের কোনো কাজই নেই ইন্টারনেট প্রায় পুরোটাই এই ক্যাবলের মাধ্যমে আপনার আমার হাতে এসে পৌঁছায়। তাই সেই হিসেবে ইন্টারনেটের আসলে কোন মালিক নেই।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে আরো জানতে এখানে ক্লিক্ করুন…