
উপমহাদেশে ইউরোপীয়দের আগমন ও ইংরেজ শাসনের সূচনা
ভারতীয় উপমহাদেশের সাথে ইউরোপীয়দের ব্যবসা-বাণিজ্যের যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল স্থল ও জলপথ। এই উপমহাদেশের অঢেল ধনসম্পদের আকর্ষণেই ইউরোপীয়দের এখানে আসার কারণ। ফলে বিদেশি ব্যবসায়ীদের মধ্যে এ অঞ্চলে আসা শুরু হয়। পূর্বে জলপথের বাণিজ্য একমাত্র আরব বণিকদের হাতেই ছিল। ১৫শতকের শেষের দিকে ইউরোপ থেকে এই উপমহাদেশে পৌঁছবার নতুন জলপথ আবিষ্কৃত হওয়ার পর এই উপমহাদেশ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া হতে বিভিন্ন পণ্য সামগ্রী সরাসরি ইউরোপে যাওয়া শুরু করে। এভাবেই ভারতীয় উপমহাদেশের সাথে ইউরোপের সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হয় এবং এক নতুন ইতিহাসের সূচনা করে। শুরু হয় এই উপমহাদেশে ইউরোপীয়দের আগমন ও ইংরেজ শাসনের সুচনা।
ভারত উপমহাদেশে ইউরোপীয়দের আগমনঃ
ব্রিটিশ বা ইউরোপীয় শাসন বলতে ভারতীয় উপমহাদেশে ১৮৫৮ থেকে ১৯৪৭ এর মধ্যবর্তী ব্রিটিশ শাসনের সময়কালকে বোঝায়। এই শাসনব্যবস্থা ১৮৫৮ সালে চালু হয়েছিল ।যখন ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী শাসন ব্রিটিশ তথা রাণী ভিক্টোরিয়া এর কাছে হস্তানান্তর করা হয়।
ভাস্কো-দা-গামার আগে ১৪৮৭ খ্রিষ্টাব্দে উত্তমাশা অন্তরীপ হয়ে জলপথে পূর্ব দিকে আগমনের পথ আবিষ্কার করেন – বার্থোলোমিউ দিয়াজ। ভাস্কো-দা-গামা সর্বপ্রথম ভারতের যে বন্দরে আসেন – কালিকট বন্দরে। ভাস্কো-দা-গামা আফ্রিকা মহাদেশের দক্ষিণ উপকূলে অবস্থিত উত্তমাশা অন্তরীপ ঘুরে ভারতে পৌঁছান – ১৪৯৮ সালের ২৭ মে। ইউরোপীয়দের মধ্যে প্রথম বাংলায় আসেন – পর্তুগিজ বণিকরা, ১৫১৪ সালে।
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সুচনাঃ
ভারতে পর্তুগিজ তথা ইউরোপীয়দের প্রথম দূর্গ ছিল – কোচিন। ভারতবর্ষে পর্তুগিজদের প্রথম গভর্নর ছিলেন – আলবুকার্ক। পর্তুগিজরা বাংলাদেশে ফিরিঙ্গী নামে পরিচিত ছিল। কাসিম খান জয়িনী বাংলা থেকে পর্তুগিজদের বিতাড়িত করার কাজটি করেন। চট্টগ্ৰাম দখল করে সেখান থেকে পর্তুগিজদের বিতাড়িত করেন – শায়েস্তা খান। হল্যান্ড বা নেদারল্যান্ডের অধিবাসীরা পরিচিত ডাচ বা ওলন্দাজ নামে। যে দেশের অধিবাসীদের বলা হয় ডেনিস – ডেনমার্ক। ফরাসি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির গঠন করেন – অর্থসচিব কোলবাট। ইংরেজরা বিনা শুল্ক বাণিজ্য করার অধিকার পান – মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের আমলে। পর্তুগিজ জলদস্যুদের বলা হত – হার্মাদ।
উপমহাদেশে ইংরেজ শাসনঃ
১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে জয়লাভ করে বিশ্বাসঘাতকতার উপহারস্বরূপ মীরজাফরকে সিংহাসনে বসান লর্ড ক্লাইভ।
রাজ্যের দেওয়ানি ও শাসনকার্যের ভার যথাক্রমে কোম্পানি ও নবাবের হাতে অর্পিত হওয়া ইতিহাসে দ্বৈতশাসন নামে পরিচিত।শুরু হয় ভারত উপমহাদেশে ইউরোপীয় শাসন ব্যবস্থা।
লর্ড ক্লাইভ ফোর্ট উইলিয়ামের গভর্নরের দায়িত্ব পালন করেন ১৭৫৭ – ১৭৬০ সালে।
লর্ড ক্লাইভ দ্বিতীয়বার ভারতে আসে ১৭৬৫ সালে। বাংলায় দ্বৈতশাসন ব্যবস্থা চালু করেন ১৭৬৫ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি । কোম্পানি যে শর্তে বাংলা দেওয়ানি ক্ষমতা লাভ করেন বাংলার নবাবকে বার্ষিক ৫৩ লক্ষ টাকা ও দিল্লির সম্রাট শাহ আমলকে বার্ষিক ২৬ লক্ষ টাকা কর প্রদানের শর্তে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির পরিচালনা কর্তৃপক্ষকে বলা হতো বোর্ড অব ডিরেক্টরস।
গভর্নরের শাসনঃ
বোর্ড অব ডিরেক্টরসের নির্দেশে হেস্টিংস দ্বৈতশাসন ব্যবস্থা ১৭৭২ সালে বিলুপ্ত করেন । মুর্শিদাবাদ থেকে রাজকোষ ও রাজধানী কলকাতায় প্রথম স্থানান্তর করেন – ওয়ারেন হেস্টিংস।
ভারত শাসন সংক্রান্ত যে আইন সর্বপ্রথম ব্রিটিশ পার্লামেন্ট পাস করা হয় – রেগুলেটিং অ্যাক্ট। ‘ আইন-ই-আকরবী ‘ গ্ৰন্থের ইংরেজি অনুবাদের প্রথম উদ্যোগ নেন – ওয়ারেন হেস্টিংস।
লর্ড কর্নওয়ালিস এর শাসন আমল ( ১৭৮৬-১৮৯৩ )-
চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের আগে কর্নওয়ালিস রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে যে নীতি গ্রহণ করেন দশশালা বন্দোবস্ত। চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে জমির মালিক হয় জমিদারগণ। যে আইন বলে নির্দিষ্ট দিনে রাজস্ব প্রদানে ব্যর্থ হয়ে বহু পুরাতন জমিদার তাদের জমিদারি হারায় “সূর্যাস্ত আইনে”।
গভর্নর জেনারেলের শাসন আমল ( ১৮৩৩-১৮৫৮ )
লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক এর শাসন আমল ( ১৮২৮-১৮৩৫ )
লর্ড বেন্টিংক ১৮২৯ সালের ৪ ডিসেম্বর আইন করে রহিত করেন – সতীদাহ প্রথা। নেপোলিয়নের বিরুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধে বেন্টিংক যার অধীনে যুদ্ধ করেন – ব্রিটিশ সেনাপতি ডিউক অব ওয়েলিংটন। এলাহাবাদে রাজস্ব বোর্ড স্থাপন করেন – উইলিয়াম বেন্টিস্ক। বাংলার গভর্নর জেনারেল পদ ভারতের গভর্নর জেনারেল পদে পরিণত হয় – ১৮৩৩ সালে।
লর্ড ডালহৌসি এর শাসন আমল ( ১৮৪৮-১৮৫৬ )
বিখ্যাত গঙ্গা ক্যানাল খনন করা হয় – ডালহৌসির সময়ে। বাংলায় সর্বপ্রথম রেলপথ তৈরি হয় – রানীগঞ্জ ( কলকাতা )। স্বত্ব বিলোপী নীতি প্রয়োগ করেন – লর্ড ডালহৌসি।
ডাকটিকিটের মাধ্যমে চিঠিপত্র আদান প্রদানের একটি বিশেষ ব্যবস্থা করেন – লর্ড ডালহৌসি।
সরাসরি ব্রিটিশ শাসন ( ১৮৫৮-১৯৪৭ ) লর্ড ক্যানিং (১৮৫৬-১৮৬২) গুরুত্বপূর্ণ তথ্যঃ
সিপাহী বিদ্রোহের পর ব্রিটিশ সরকার ভারতের শাসনভার ইংল্যান্ডের রানী ভিক্টোরিয়ার হস্তে অর্পণ করে – ১৮৫৮ সালের ২ আগস্ট। ইংল্যান্ডের মহারানীর প্রতিনিধি হিসেবে ভাইসরয় বা বড়লাট উপাধি দেওয়া হয় – গভর্নর জেনারেলকে। জমিদারদের হাত থেকে রায়তদের রক্ষার্থে ক্যানিং যে আইন চালু করেন – টেন্যান্সি অ্যাক্ট বা বঙ্গীয় প্রজাস্বত্ব আইন। ১৮৬১ সালে পুলিশ ব্যবস্থা প্রচলন করেন। ইন্ডিয়ান সিভিল আইন পাস করেন – লর্ড ক্যানিং। ইন্ডিয়ান হাউজ হলো – ভারত সচিবের সদর দপ্তর।
লর্ড মেয়ো এর শাসন আমল( ১৮৬৯-১৮৭২ )
ভারতবর্ষের প্রথম আদমশুমারি হয় ১৮৭২ সালে লর্ড মেয়োর শাসনামলে যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
লর্ড কার্জন এর শাসন আমল( ১৮৯৯-১৯০৫)
১৯০৫ সালের ১৮ নভেম্বর পর্যন্ত ভারতের ভাইসরয় ছিলেন – লর্ড কার্জন। ১৯০৫ সালের ১৬ অক্টোবরের ঘোষণায় বাংলা প্রদেশকে দুইভাগে ভাগ তথা বঙ্গভঙ্গ করেন – লর্ড কার্জন।কলকাতায় ভারতের বৃহত্তম গ্ৰন্থাগার ইস্পেরিয়াল লাইব্রেরী প্রতিষ্ঠা করেন – লর্ড কার্জন।
লর্ড মাউন্টব্যাটেন ( ১৯৪৭ )
ব্রিটিশ ভারতের শেষ ভাইসরয় বা বড়লাট ছিলেন – লর্ড মাউন্টব্যাটেন। ভারত বিভাগের সময় ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন – এটলি। ১৯৪৭ সালের ১৮ জুলাই ব্রিটিশ পার্লামেন্টে – ‘ ভারত স্বাধীনতা আইন ‘ পাস হয়। আইন অনুসারে ১৭৪৭ সালের ১৪ আগস্ট করাচিতে পাকিস্তান গণপরিষদের হাতে এবং ১৫ আগস্ট ভারতীয় গণপরিষদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন – লর্ড মাউন্টব্যাটেন। স্যার সাইরিল র্যাডক্রিফের নেতৃত্বে গঠিত হয় র্যাডক্লিফ কমিশন যা ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সীমারেখা চিহ্নিত করে ।

ইতিহাস বিষয়ে আরো জানতে এখানে ক্লিক্ করুন…
উপমহাদেশে রাজনৈতিক আন্দোলন - Pathokia
[…] ভারতীয় উপমহাদেশের আরো ইতিহাস জানতে এখানে ক্লিক করুণ… […]
উপমহাদেশের রাজনৈতিক আন্দোলন - Pathokia
[…] ভারতীয় উপমহাদেশের আরো ইতিহাস জানতে এখানে ক্লিক করুণ… […]