
আর্টেমিস :আবারও চাঁদের বুকে মানুষ
Artimis:NASA’s Mega Moon Rocket
দীর্ঘ পাঁচ দশক পর আবারও চাঁদের বুকে মানুষ পাঠানোর অভিযানে নাসা। তিন ধাপের মিশনে মনুষ্যবিহীন প্রথম রকেট টি ২৯ আগস্ট যাওয়ার কথা ছিল। আর শেষ ধাপে পাঠানোর কথা ছিল মানুষ। এর মাধ্যমে শুরু হতে যাচ্ছিল বহুল প্রতীক্ষিত আর্টেমিস যুগের। ফ্লোরিডার কেপ কেনেডি স্পেস সেন্টারে (Kennedy Space Center) (টিটাসভিল (Titusville) শহরের পাশে আটলান্টিক উপকূলে মেরিট আইল্যান্ড (Merritt Island) নামক একটি দ্বীপে অবস্থিত। প্রস্তুত ছিল পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে শক্তিশালী রকেট। গন্তব্য পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ চাঁদ। ২০২২ সালের ২৯ আগস্ট স্থানীয় সময় সকাল ৮:৩৩ মিনিটে ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার (Kennedy Space Center) থেকে মহাশূন্যের উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়ার কথা ছিল আর্টেমিস ওয়ানের (Artemis 1)। এবং প্রায় ৪০০,০০০ মানুষ এ স্বরনীয় মুহুর্তটি দেখার জন্য উৎগ্রীব ছিল। কিন্তু হঠাৎ রকেট উৎক্ষেপণের আগ মুহুর্তে এ অভিযানটি রকেটের ইঞ্জিনে ফাটল দেখা য়াওয়ার কারণে আগামী এক মাসেরও বেশী সময় অর্থাৎ ৩ সেপ্টেম্বর থেকে মধ্য অক্টোবর পর্যন্ত সময়ের জন্য স্থগিত হয়ে যায় বলে নাসা জানায়।
তিন ধাপের মিশনে প্রথম রকেটটি যাবে মানুষ ছাড়াই। চাঁদ প্রদক্ষিণ শেষে পৃথিবীতে ৪২ দিন পর ফিরে আসার কথা আর্টেমিস ওয়ানের। ৩২২ ফুট লম্বা মেগা এ রকেটটি বানাতে খরচ হয়েছে ৯৩ বিলিয়ন ডলার যা যাবৎকালের নাসার সবচেয়ে শক্তিশালী রকেট বলে জানিয়েছে সংস্থাটি । নাসার এ অভিযান সফল হলে দীর্ঘ পঞ্চাশ বছরেরও বেশি সময় পর আবারও চাঁদের বুকে পা রাখতে পারতো মানুষ।
১৯৬৯ সালে এ্যাপলো মিশনের মাধ্যমে প্রথম চাঁদে মানুষ পাঠায় নাসা। ১২ মার্কিন নভোচারী চাঁদের বুকে পা রাখার পর ১৯৭২ সালে পর্দা নামে চন্দ্র বিজয়ের ধারাবাহিক অভিযানের। এরপর মহাকাশ গবেষণার অনেক অগ্রগতি হলেও চাঁদে আর কোন মানুষের পা পড়েনি । দীর্ঘ পাঁচ দশকের বিরতির পর চন্দ্রাভিযানের নতুন এই লক্ষ্য নিয়ে উচ্ছ্বসিত ছিল সবাই। কিন্তু শেষপর্যন্ত থামাতে হল এই অভিযাত্রা। যাত্রার নির্ধারিত সময়ের কিছুক্ষণ আগে স্থগিত করা হয় রকেট উৎক্ষেপণ। জানানো হয় যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে স্থগিত করা হয়েছে নাসার নতুন চন্দ্রাভিযান “মিশন আর্টেমিস”। নাসা জানায় যাত্রা স্থগিত করা হলেও তাদের স্পেইস লউন্স সিষ্টেম এসএলএস Space Launch System (SLS) পুরোপুরি স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। রকেটটির ঠিক কোন অংশের ত্রুটি রয়েছে তা জানতে প্রকৌশলীরা তথ্য সংগ্রহ করছেন। ত্রুটি মেরামত করে আগামী শুক্রবার চাঁদের উদ্দেশ্যে উৎক্ষেপণের চেষ্টা করা হবে বলে জানান সংস্থাটির পরিচালক। তিনি বলেন ত্রুটি মেরামত না করা পর্যন্ত আমরা এটি উৎক্ষেপণ করবো না। এস এল এস পুরোপুরি ত্রুটি মুক্ত করেই আমরা এই উৎক্ষেপনের চেষ্টা করব। আপাতত এর ইঞ্জিনের ত্রুটি রয়েছে বলে ধারণা করছি আমরা। এ ধরনের ত্রুটি মেরামত খুবই জটিল কাজ। এগুলো মেরামতের কিছু সুনির্দিষ্ট দিক-নির্দেশনা রয়েছে। আশা করছি সেগুলো অনুসরণ করে এদিকে পুরোপুরি ত্রুটি মুক্ত করেই উৎক্ষেপনে সফল হব আমরা।
২৯ আগস্ট ভোরের আলো ফুটতেই ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী হতে প্রস্তুত হয় কেনেডি স্পেস সেন্টার। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে নয়টা নাগাদ উৎক্ষেপণের উদ্দেশ্যে নাসার ১০০ মিটার লম্বা স্পেস লঞ্চ সিস্টেমে করে টেস্ট ক্যাপসুল অরিয়ন লঞ্চ পেড-৩৯বি এ (the sun rose Launch Pad 39B) বসানো হয়। এরপর শুরু হয় জ্বালানী ভরা সহ অন্যান্য রুটিন কাজ। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের ঠিক দেড় ঘন্টা আগে দেখা দেয় বিপত্তি। রকেটের যে অংশ তরল হাইড্রোজেন ও তরল অক্সিজেন টেঙ্কের সঙ্গে যুক্ত সেখানেই ধরা পড়ে ফাটল। রকেটির চারটি বড় ইঞ্জীনের একর্টিতে সমস্যা ধরা পড়ে । একপর্যায়ে উৎক্ষেপণের নির্ধারিত সময়ের ৪০ মিনিট আগে থেমে যায় কাউন্ট ডাউন। দীর্ঘ সময় ধরে নাসার প্রকৌশলীরা ফাটলটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখলেও শেষ পর্যন্ত এটি মেরামতে ব্যর্থ হন তারা। স্থগিত করা হয় উৎক্ষেপণ।