অস্টিওপোরোসিস ( Osteoporosis ) বলতে কি বোঝ?
অস্থির গঠন এবং দৃঢ়তার জন্য ক্যালসিয়াম একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। অস্থির বৃদ্ধির জন্য চাই ভিটামিন এবং ক্যালসিয়াম-সমৃদ্ধ খাদ্য। অস্টিওপোরোসিস ক্যালসিয়ামের অভাবজনিত একটি রোগ। বয়স্ক পুরুষ ও নারীদের সাধারণত এ রোগটি হয়। যেসব বয়স্ক পুরুষ বহুদিন যাবৎ স্টেরওয়েডযুক্ত ঔষধ সেবন করেন, তাদের ও নারীদের মেনোপজ ( রজ-নিবৃত্তি, অর্থাৎ মাসিক চিরতরে বন্ধ হয়ে যাওয়া ) হওয়ার পর এ রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাছাড়া অনেক দিন ধরে আর্থ্রাইটিসে ( অস্থিসন্ধির প্রদাহ) ভুগলে এ রোগ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি হয়।
কারণঃ দেহে খনিজ লবণ বিশেষ করে ক্যালসিয়ামের ঘাটতির কারণে এ রোগটি হয়। নারীদের মেনোপজ হওয়ার পর অস্থির ঘনত্ব ও পুরুত্ব কমতে থাকে।
লক্ষণগুলো হলোঃ
(১) অস্থি ভঙ্গুর হয়ে যায়, ঘনত্ব কমতে থাকে।
(২) পেশির শক্তি কমতে থাকে।
(৩) পিঠের পিছন দিকে ব্যথা অনুভব হয়।
(৪) অস্থিতে ব্যথা অনুভব হয়।
রোগ নির্ণয় এর উপায়ঃ
ঘনত্বমাপক যন্ত্রের সাহায্যে অস্থির খনিজ পদার্থের এ রোগ নির্ণয় করা হয়। রোগের প্রাথমিক অবস্থায় তেমন কোনো উপসর্গ দেখা দেয় না। হঠাৎ করেই সামান্য আঘাতে কোমর বা দেহের অন্যান্য কোনো অঙ্গের হাড় ভেঙে যায়।
কিভাবে প্রতিকার করতে হবেঃ
(১) পঞ্চাশোর্ধ পুরুষ ও নারীদের দৈনিক 1200 মিলিগ্ৰাম ( বা চিকিৎসক নির্দেশিত অন্য কোনো পরিমাণ ) ক্যালসিয়াম গ্ৰহণ করা।
(২) ননিতোলা দুধ ও দুগ্ধজাত দ্রব্য গ্ৰহণ করা।
(৩) কমলার রস, সবুজ শাক-সবজি, সয়াদ্রব্য ও ক্যালসিয়াম-সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া।
প্রতিরোধ করার উপায়ঃ
(১) যথেষ্ট পরিমাণে সূর্যালোকের সংস্পর্শে আসা।
(২) ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ( ডি) সমৃদ্ধ খাদ্য গ্ৰহণ করা।
(৩) নিয়মিত ব্যায়াম করা ( যদি কেউ ইতোমধ্যে অস্টিওপোরোসিস আক্রান্ত হয় তাহলে ব্যায়াম করার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে)।
(৪) সুষম ও আঁশযুক্ত খাবার গ্ৰহণ করা।
রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস বা গেঁটেবাত ( Rheumatoid Arthritis ) বলতে কি বোঝ?
শতাধিক প্রকারের বাতরোগের মধ্যে রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস অন্যতম। সাধারণত বয়স্করা এ রোগে আক্রান্ত হয়। কম বয়সী ছেলেমেয়েদের বেলায় গিঁটে ব্যথা বা যন্ত্রনা হওয়া রিউমেটিক ফিভার বা বাতজ্বর ( Rheumatic Fever ) জাতীয় অন্য রোগের লক্ষণ হতে পারে ( ষষ্ঠ অধ্যায় দ্রষ্টব্য)। অস্থিসন্ধির অসুখের প্রকারভেদ অনুসারে চিকিৎসার পার্থক্য হয়। দুইজন ব্যক্তি দুটি ভিন্ন প্রকারের অস্থিসন্ধির অসুখে আক্রান্ত হলেও তাদের লক্ষণ আপাতদৃষ্টিতে একইরকম হতে পারে। সেক্ষেত্রে দুজনের ভিন্ন প্রকারের চিকিৎসা প্রয়োজন। এজন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ ছাড়া বাতের চিকিৎসা করা উচিত নয়। এতে উপকারের চেয়ে অপকার বেশি হতে পারে।
লক্ষণগুলো হলোঃ
(১) অস্থিসন্ধি বা গিঁটে প্রদাহ বা ব্যথা হয়।
(২) অস্থিসন্ধিগুলো শক্ত হয়ে যায়।
(৩) অস্থিসন্ধি নাড়াতে কষ্ট হয়।
(৪) গিঁট ফুলে যায়।
কিভাবে প্রতিকার করতে হয়ঃ
বয়স্কদের বেলায় এ রোগ পুরোপুরি সারানো যায় না। তবে নিচের ব্যবস্থাগুলো নিলে কিছুটা উপশম হয়।
(১) অত্যাধিক পরিশ্রম আর ভারী কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে।
(২) যন্ত্রণাদায়ক গিঁটের উপর প্রায়ই কুসুম গরম স্যাঁকা নিতে হবে।
(৩) অস্থিসন্ধি ঠিক রাখতে নিয়মিত হালকা শরীর চর্চা করতে হবে।
(৪) ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী বেদনা উপশমকারী ঔষধ সেবন করতে হবে।
(৫)সঠিক চিকিৎসা দিয়ে এ রোগের কষ্ট থেকে সামান্য পরিত্রাণ পাওয়া যায়।
প্রতিরোধ করার উপায়ঃ
(১) চিকিৎসক নির্দেশিত পদ্ধতিতে নিয়মিত ব্যায়াম করা।
(২) সুষম ও আঁশযুক্ত খাদ্য গ্ৰহণ করা।